Friday, 4 September 2015

কবিতা গান গল্প


আগামীকাল শুভ জন্মাষ্টমী দিনে
সবাইকে শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জানাই

রাগ, আহীর ভৈরবী, রাগ সঙ্গীত --শামলা সোম

বলরে মন,- বলরে মন- রাধে রাধে,
কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে- মোর প্রাণ যে কাঁদে।
আজ কুঞ্জ বনে, ঐ বিরহিণী রাধা
সেথা কাঁদে সে একা, হৃদয়ের ব্যথা।
জ্যোৎস্না রাতে, এই যমুনার এ জলে
কদমতলায় রাধার দুনয়নে ভাসে।
কৃষ্ণের সাথে যে ভেসে গেছে সে কুল
অভিসারে এসে, রাধা প্রেমে পড়ে আকুল।
রাধা আজও আছে এই  আমাদেরই মাঝে,
কালা সে প্রেমিকের অপেক্ষায় বড় লাজে।


সই এই তো মেয়ে মানুষের জীবন
শ্যা ম ল সো ম
সই সেই শৈশবের মেয়ে বেলা থেকেই শুরু হয়ে যায় লড়াই,
কী ভাবে কী উপায়ে এই সদ্য কুঁ ড়ি ফোঁটা নধর নরম পেলব এই
মেয়ে মানুষের শরীরকে স্বাপদের থাবা থেকে আড়ালে রাখা যায়?
আত্মীয় স্বজন পাড়া প ড়শী গাঁয়ের মাতব্বর, শহরের মাস্তান,
এমন কী জন্মদাতা ও শিকারী শেয়ালের মত লোলুভ দৃ ষ্ঠি নিয়ে,
অসহায়তার দূর্বলতার সুযোগের অপেক্ষায় ওত পেতে থাকে !
স্তুতি, প্রশংসা, কত কাব্য, আকাশ কুসুম স্বপ্নের জাল বোনা বিবাহের
প্রতিশ্রুতি বিনিময়ে বিনা পারিশ্রমিকে অন্ন্ত সহবাস, বিচারের
আদেশে ধর্ষকের সাথে বিবাহের প্রবিত্র বন্ধন, শ্বশুরের পাশবিকতায়
স্বামী হয়ে যায় পুত্র !
মুখ ফসকে যদি তিনবার উচ্চারিত হয় ভয়ংকর
একটি শপথ বাক্য ! চিরকালের মত শেষ হয়ে যায় স্বর্গিয় প্রেম
বিবাহের মহা প্রবিত্র বন্ধন ।
সই এ কেমন মেয়ে মানুষের জীবন ?
তার নিজের জীবন কী ভাবে
ব্যয়িত হবে তা নিঃধারন করবেন পুরুষ ত্রান্তিক সমাজ এই বিধান
সেই প্রাক ঐতিহাসিক যুগ যুগান্তর ধরে আবহমান কাল ধরে চলে
আসছে।
পুরাণে দ্রোপতীর কোন প্রতিবাদ করার কোন অধিকার ছিলো না
আজ ও নেই তাই পারিবারিক স্ন্মানার্থে নিঃশংস খুন ভ্রূণ হত্যা !
কী অনুশাসন সময় বিশেষে শোষণ, সামাজিক পারিবারিক ফোতয়া।
বিধান সেই সুপ্রাচীনকালেও কুলীন ব্রাক্ষ্মণের একশত বিবাহের ছিল অধিকার।
দুই তিনটে বউ পোষা ক্ষ্যামতা থাকলে সে ঐ কুকুর পোষার সামিল ক্ষমতাবান
পৌরুষের লক্ষণ তিনি সমাজে রাস্ট্রের খুব বাহ্ববা পেয়ে থাকেন।
সই আজ থাক ভাই ! আড়ালে কে জানে শুনছে ক'জন, মাতাল
লম্পট জুয়ারী অন্নদাতা পরম পূজোনিয় স্বামী শুনলে মেরে পিঠের
ছাল ছাড়িয়ে নেবে তাই চুপ করে সন্তান ধারণ রন্ধন সৌন্দর্যময়ীই
নারী সুখী গৃহকোণ শোভা বর্ধন করে,
আয় ভাই চোখের জল ও চোখেই
যাবে শুকিয়ে; নানা ভাবে ঘসে মেজে শরীরটা সাজিয়ে তুলতে হবে
সাজুগুজু না করলে কপালে দুর্ভোগ আছে তোর !
ও বাবা এইতো---
সোজা সরল গরল পান করে আয় এ ভাবেই- কাটিয়ে যাই এ দেশে,
বিদেশে সন্ত্রস্ত হেনস্থার সীমাহীন, মেয়ে মানুষের জীবন।


এক দিন সব যুদ্ধের হোক অবসান

শ্যামল সোম


ড্রোনের হামলায় পাহাড়ের উপত্যকায় বিস্ফোরণ,
দূর পাল্লা ক্ষেপণ অস্ত্রের নিয়মিত আক্রমণে আক্রান্ত।
আকাশ চুম্বি বিশাল অট্টালিকা অহংকারের মিনার,
বজ্র আঁটুনি ফসকা গেঁড়ো, নিশ্ছিদ্র সতর্ক সৈনিকের
পাহারা পেরিয়ে আকাশ পথে আত্মঘাতী আক্রমণ শহীদের।
মানবতা সপক্ষে বর্বরচিত শিশুদের খেলার মাঠে, গ্রামে
শহরে, বন্দরে, নিরীহ মানুষের উপর সাঁড়াশি আক্রমণ
অর্থের প্রাচুর্যে এ তাদের উল্লাসে উন্মাদের যুদ্ধ বিলাস।
শিশু কিশোর কিশোরী ছাত্র ছাত্রী বিদ্যালয়ে অধ্যায়নে
যখন ছিল ব্যস্ত , খেলছিল স্কুলের প্রাঙ্গনে, ঠিক সেই মুহূর্তে
আত্মঘাতী আক্রমণ, মৃত শবের স্তূপ, ছিন্ন ভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ।
নিরবিচ্ছিন্ন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রান্তরে ঘটে যায় বিস্ফোরণ।
বিস্ফোরণের প্রচন্ড ঐ শব্দে ঘুম ভেঙে কেঁদে ওঠে মেয়ে।
আশ্চর্যজনক ভাবে সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষ রয়েছেন নিরবে,
নির্বিকার ভয়ে, সন্ত্রস্ত, ভীষণভাবে আতংকিত ঐ সন্ত্রাসী হামলায়--!
এত রক্তপাত এত হত্যা, তবু কেন মানুষ আজও বোধহীন
চরম হতাশা, বিষন্নতা, বিষাদ, মানসিক অবসাদ।
স্বপ্ন দেখি একদিন রণাঙ্গন থেকে ফিরে সাহসী সৈনিক শূন্যে
গুলি ছুড়ে বলবে মৃত্যু মৃত্যু খেলার ঐ উপলব্ধি, জীবনের অভিজ্ঞতার
বার্তা দিতে গিয়ে এসো আজ সবাই হাতে হাত করি অঙ্গীকার !
যুদ্ধ থামাই; হিংসা থেকেই জন্ম দেয় প্রতিহিংসা,প্রতিনিয়ত
প্রত্যাঘাত, ও ঘাত -প্রতিঘাতে জন্ম নেয় রক্তবীজের বংশ,
প্রতিহিংসা, লক্ষ লক্ষ জন্ম নেয় সন্ত্রাসের আগামী প্রজন্ম।
শপথবাক্য করো উচ্চারণ, " এখন সব যুদ্ধের হোক অবসান
শান্তি বর্ষিত ফুলে ফলে, শিশুদের কল্লোলে ভরে যাক পৃথিবী।


মেয়ে  মানুষের  লাশ

                                                শ্যামল সোম

বহুকাল আগে শ্রদ্ধেয়া  কবি  লিখেছিলেন,
" মেয়ে মানুষের লাশ,"
আজও মেয়ে মানুষের লাশ  ভাসে
ঐ দূরে  ইচ্ছামতী নদীর জলে,
মেয়ে  মানুষের  নগ্ন লাশ ভাসে  জলে, '

বড় হিংস্র  মাছেরা খুবলে, খেয়েছে  শরীর।
 ভীড়  করে  এসেছে নানা  বয়সের পুরুষ, নারীরা মাথায় ঘোমটার আড়ালে আড়  চোখে চেয়ে  ফেলে দীর্ঘশ্বাস,  চাপা  শ্বাস, ফেলে চলে যায় নিঃশব্দে, তাদের  বুকের ভেতর এক অসহ্য  চাপা  যন্ত্রনার  ঢেউ  আছড়ে  পড়ে।
ভীড় করে আসা  পুরুষেরের  মাঝে ওঠে  গুঞ্জন নানা লোকে নানা  কথা বলে;
" বিভত্স্য  ধর্ষনের  শিকার,
ব্যর্থ প্রেমের  আঘাতে  আত্মহত্যা,
" দাঁত বে ড়  করে নিজের  তামাশায় নিজেই হেসে উঠে"।
"  নির্ঘাত  বিবাহের  প্রতিশ্রুতি নির্ধারিত সহযোগিতায় আনন্দে মাতাল সহবাসের ফলাফল।

" যথারীতি  প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে  অন্তস্বত্তায় হওয়ার পর   আত্মহত্যা ছাড়া  গতি কী ?
অনেকেই  অট্ট হাস্যে ফেটে পড়ল,  সব পুরুষের নজর কিন্তু ঐ উলঙ্গ মেয়ে মানুষের শরীরে দিকে, পুরুষের দৃষ্টি   লেহন করছে মেয়ে মানুষের নগ্ন লাশ; জল থেকে   ডা ঙ্গায় তোলা হয়েছে লাশ,  ভীড়  এগিয়ে গিয়ে ছেঁকে  ধরে  লাশ; " চেনা চেনা  লাগে এ তো  কুুসুম,
খাল পারের খানকী পাড়ায় বাস।
"  না না না, দূর এই মেয়েটা  বাবু পাড়ার ঝিনুক,
পরশু রাতেও দেখলাম  বাইকের পেছনে বসে জাপটে  জড়িয়ে  ধরে আছে-"
" ছোঁড়াটা  কে  ছিল ঘুড়ো ?

 ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক  তাকিয়ে  ঢোক গিলে আমতা আমতা স্বরে বলে, রাতের  অন্ধকারে  ঠিক  ঠাওর  হলো না, চার কুড়ি এ বয়সে !"

 অন্য  এক জন লাশের  খুব  কাছে গিয়ে, হ্যা ! আমি  ঠিক  ধরেছি, এই তো শর্বানী,
অমল বাবুর বাপ  মা  মরা ভাগ্নী !

" ভীড় ঠেলে এগিয়ে এলেন এক সৌম্য বদ্ধৃ নিজের পাট করা  সাদা  উত্তরিও  যত্নে  বিছিয়ে দিলেন লাশের উপর, ঢাকা পড়ল; মেয়ে  মানুষের নগ্ন লাশ।

বৃদ্ধের প্রতি  সম্ভ্রমে  শ্রদ্ধায় নত মস্তকে  নীরবে  কুর্ণিশ  জানালো  অনেকে।

পুলিশ  ভ্যানের  সশব্দে, সদর্পে  আগমন  বার্তার আওয়াজ  শুনে সবাই শুয়েরের  শাবকের মতন  দৌড়ে  পালালো।
এক কিশোর গাছের আড়াল  থেকে চোখের জল  ফেলে ঝাপসা দৃষ্টি  মেলে
গভীর  মর্মবেদনায় তাঁর হারিয়ে যাওয়া চিরদিনের মতো দিদিকে লুকিয়ে দেখছে।
গত মাসে টিউশানী করে ফেরার পথে দিদিভাইয়ের সাথে  ছিল সেদিনের ঘটনা কী চরম লাঞ্ছনা, ভাইকে লাথি মারতে মারতে দূরে ঠেলে দিলো।

তারপর মেতে উঠলো এক পৈশাচিক আনন্দে, ময়নার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নির্যাতনের ক্ষত বিক্ষত,  হঠাৎই পুলিশের  টহলদারি ভ্যানের
সিরাতের মতো রেহাই পেয়ে ছিল ময়না, ছোট ভাইয়ের চোখে সে  রাতের ক্রোধে জ্বলছিল দৃষ্টি---
কিন্তু  আজ বাপিনের প্রতিশোধের  আগুনে জ্বলছে,  দ্বিগুন !
আবার বাপ  মায়ের বারন করা সত্ত্বেও বাপিনের  প্রতিশোধের অগ্নি শিখা লক লক হৃদয়ে জ্বলছে।
আবার হাতে অস্ত্র বাসনা মনে  প্রবল হয়ে ওঠে,  শুধু সুযোগের অপেক্ষায়।