সমুদ্র কন্যা
শ্যামল সোম
সমুদ্র সৈকতে নাতনি জয়ীতার সাথে অন্ধকার থাকতেই হোটেল থেকে পৌঁছেছি,
বালুকা বেলায় নাতনি পাশে বসে দেখছি রূপালি ঢেউ হামাগুড়ি দিয়ে দুরন্ত শিশু।
পূর্বের আঁধারাচ্ছন্ন আকাশে সূর্য প্রসবের প্রাক মূহুর্তে রূপ সোনা রঙে ছড়িয়ে
জননী প্রসব করছেন টিমের লাল কুসুমিত সূর্যোদ্বয়ের নূতন প্রভাত,
ভোরের আলোয় উজ্জ্বল উদ্ভাসিত নাতনির চোখে মুখে আনন্দের বিচ্ছুরণে
আবেগে, হঠাৎই আমাকে আঁকড়ে ধরে, হুহু করে ডুগড়ে কেঁদে উঠে, " দাদাভাই
আমি বাঁচতে চাই ! " পিঠে হাত বুলিয়ে দুচোখে জল, ছলছল চোখে আমরা পরস্পরের
অপলক চোখে তাকিয়েই আছি।
" কি হলো দাদুভাই কথা বলছো না কেন ?"
" আমি মন মন ঈশ্বরের কাছে এই মূহুর্তে তোর জন্য প্রার্থনা করছিলাম মা।"
" এক মাত্র তুমি তুমি আমাকে আজ বাঁচিয়ে রেখেছে দাদাভাই "
" ঈশ্বর এই পৃথিবীর সৃষ্টি কর্তা তিনিই তোমাকে আশীর্বাদ করছেন, আমি শুধুমাত্র
আমার নাতনির কল্যানের জন্য প্রার্থনা করছি ! "
"তোমার ঈশ্বর ভীষণ নিষ্ঠুর দাদুভাই আমার আদরের ভালোবাসার মানুষ রনজয়কে
কেঁদে নিয়েছেন !"
আমি নিশ্চুপ নাতনির মাথায় হাত রেখে স্মরণ করি মহান পিতা পরম ব্রক্ষ্ম কে ।
রণজয় আর জয়ীতার বাল্যপ্রেম ভাই বোনের মতন খুনসুটি ঝগড়া যৌবনে মান অভিমান।
হঠাৎই রণজয় দিল্লীর আই আই টি পড়তে যাওয়া দীর্ঘদিনের বিরহের গান শুনতাম জয়ীতার গলায়।
নিজেকে কঠিন শাসনে বেঁধে দুর্দান্ত রেজাল্ট করলো ইকনমিক্স মার্কেটিং উপর ডক্টর জয়তী ঘোষ
বিকাশ কোম্পানির এক বিশিষ্ট পদে আসিন।
দু’বছর জাপানে কাজ করে কোলকাতাতে ফিরলো রণজয়, বিবাহের আয়োজন
চলছে হচ্ছে খুব শীঘ্রই বিবাহের দিন।
নাতনি আমার রঙিন প্রজাপতি, স্বপ্নে বিভোর মোহাচ্ছন্ন বিমোহিত, মাঝে মাঝেই আমার আদরের
নাতনি জড়িয়ে ধরে, " সত্যিই দাদুভাই জীবনটা খুব সুন্দর ! "
হতভাগীর এই এত আনন্দের ফোয়ারা ফুরিয়ে গেল- এক দমকা হাওয়ায় নীচে
গেল, সব দীপাবলির আলো।
রণজয় হেলমেট না পড়ে বাইক এক্সিডেন্ট মাথাতে চোট পেয়ে, হসপিটালে মরণ বাঁচন লড়াইয়ের
জন্য জয়তী দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে অসহ্য মানসিক যন্ত্রনা।
শেষে রণজয় মৃত্যু জেনে জ্ঞান হারালো জয়ীতা
টানা পনের দিন নার্সিংহোম চিকিৎসার পরে আমার ছেলে বৌমা নাতনিকে বাঁচাতে পারলো।
কিন্তু যখন শুনলো জয়ীতা তাঁদের একমাত্র কন্যা সন্তানের গর্ভে ধারণ করেছে ভ্রূণ পরীক্ষার পর গর্ভস্থ
ভ্রুণ নষ্ট করতে ছেলে বৌমা নিকট আত্মীয় স্বজন।
জয়ীতা রুখে দাঁড়ানোর পেছনে আমার প্রোথিত প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য অসংখ্য বার
তীব্র ভৎসনা করলো সবাই।
না না আমি কখন জয়ীতার উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম, শুধু বলে ছিলাম, " মা এ বড় কঠিন লড়াই!
সরকারী আইন অবিহিতা কুমারী মায়ের জন্য স্বীকৃতি স্বরূপ সমাজ সংস্কার
ভবিষ্যতের ভাবনার ভেবে সিদ্ধান্ত নাও মা "
ইদানিং খুব মন খারাপ ছিল জয়ীতার তাই আমাদের বেড়াতে আসা।
এই নির্জন সমুদ্রে প্রচন্ড ঢেউয়ের আলোড়ন মাঝে জয়ীতা কাব্যে নায়িকার
মতন ঢেউ ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছে তার দুচোখে সুখ স্বপন ?
আমি মুগ্ধ হয়ে সমুদ্র কন্যাকে দেখছি।
No comments:
Post a Comment