Saturday, 21 October 2017

অনিন্দিতা

অনিন্দিতা

শ্যামল  সোম

ভোর বেলায় হিমেল হাওয়ায় বহুবছর পর নিউজার্সি থেকে চারদিন আগে কোলকাতার ফিরেছি,
কোলকাতার এই চলমান যান উবের ট্যাক্সি ফোন করলেই হাজির সত্যি সত্যিই অনেক বদলে গেছে কোলকাতা।
রমেন আমার শৈশবের বন্ধু  দেখা করতে ভোর বেলায় আসা।

গাড়ি থেকে ভাড়া মিটিয়ে ওদের বিশাল বাগানের মধ্যে দিয়ে মোরামের পাথর কুটির উপর হেঁটে যাচ্ছি বারান্দায়
দাঁড়িয়ে ইতস্তত করছি যে বাড়িতে এক সময় হুটহাট ঢুকে যেতাম সাত বছর পরে শুনশান লাগছে।

হঠাৎই পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো মেয়ে, " কোথায় ঘাপটি মেরে ছিলে দীপ? "

জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে ঘুরে দাড়িয়ে দেখি খুব চেনা মুখ অচেনা চোখের ভাষা
আমি বিস্মিত বিস্ময়  হতবাক এ কে ?
খিল খিল করে হাসছে, " দীপ কি দেখছো আমাকে, আমাকে দেখার এখন বাকি ?

বুজতে পারলাম অনু অনিন্দিতা আমাকে চিনতে পারছে না, শুধু তাই নয় মস্তিষ্কে গোলমাল ঘটেছে।

দৌড়ে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো, " দীপ এতদিন পরে এলে একটু আদর করো, তোমার আদরে আদরে অস্থির হতাম
জ্বলে উঠতাম রঙমশালের মতন দেখ দেখ তাকিয়ে দেখো এখন কেমন নিঃস্ব রিক্ত পোড়া কাঠ।"

আমি অসহায়ত্ব শঙ্কিত উদ্বিগ্ন প্রাণ কম্পিত মনে শুনছি অর্গল পাগলিনী প্রলাপ

একা একাই বকে যাচ্ছে অনু,  " আমি কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তোমার ফ্লাটে চলে যেতাম, আমার চোখে দিকে তাকিয়ে বলতে অনু তোমার মধ্যেই  আমার পৃথিবী ! "
আমি আহ্লাদে টলমল টালমাটাল প্রেম ভালোবাসায় দীপ তোমাকে  ভালোবেসেই ধন্য হতাম, তোমার আদরে নিষ্পেষণে প্রেমে ধর্ষনের সুখ নানা আমার ভীষন আমার ভীষণ অসুখ হয়েছিল  এই দেখো আমার একঢাল চুলে দীপ
তুমি আমার লম্বা খোলা চুল দিয়ে আমার গলা পেঁচিয়ে বলতে, " পাগলি তোকে ভালোবেসে খুন করছি।"

ঝরঝর করে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারায়। রমেন নিঃশব্দে অনুসরণ সব কথা রেকর্ড করছিল
ইশারা করে চুপ থাকতে বলে অনুর পেছন থেকে, রমেন এগিয়ে এসে  অনু পাঁজাকোলা করে ভেতরের ঘরে নিয়ে যায়।

রমেনের বৌদি এক গ্লাস জল  এগিয়ে দেয়। আমি তৃষ্ণার্ত চাকত পাখীর মতন এক নিঃশ্বাসে পান করি, গ্লাসটা  এগিয়ে বলি, প্লীজ বৌদি
আবার জল খেয়ে ধাতস্থ করি নিজেকে।

বৌদি ম্লান হেসে বললেন, " সোমেন দুপুরে খেতে যাবে, বসো কফি পাঠাচ্ছি! "

একা একা রুমালে ঘাম মুছে, বসে ভাবছি আমার কোন বোন ছিলো না, অনু তিন বছর বয়স থেকেই ভাইফোঁটা
দিয়ে আসছিল, " আমি চাকরী সূত্রে বিদেশে চলে আগে পর্যন্ত পরাই বার বছর ধরে ভাই ফোঁটার দিয়ে আসছিল,
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস মনুষ্যত্ব হীন মানুষকে ভালোবেসে আজ অনু ধ্বংসের স্তুপ,

সুদীপ্ত চিনতে পারলাম সাক্ষাৎ শয়তান  স্কুলে থাকতেই স্বভাব চরিত্র কলংক ইতিহাস।
রমেনের বন্ধুত্বের সুযোগে শয়তানটা অনু এত ব্যস্ত সর্বনাশ করলো ঘৃণ্য ক্রোধ রাগে ফূসছি।

রমেন এসে আমার হাত ধরেই বাথরুমে তোয়ালে দেখায়, " সোমেন রিফ্রেশ হবে নে !
" না আমি সমান করবো " ঘড়ি  পার্স সব রমেনের হাতে দিলাম।
বাথরুমের দরজা বন্ধ করে শার্ট পেন্ট সব খুলে শাওয়ার  খুলে দিলাম  ঠান্ডা শীতল জলে স্নান করছি
ভাবছি নারী এইমাত্র পারে ভালোবেসে নিজেকে এ ভাবে নিঃস্ব সর্বস্ব শ্রান্ত নিঃশেষ করে বিলিয়ে দিতে।
কে যেন গাহিছে রবীন্দ্রনাথের গান, " আমি আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়!"

No comments:

Post a Comment