আত্মজার জন্য বিলাপ
লিখনে, সৃজনে, শ্যামল সোম
ও বাবু মশাই ! ও বাবু মশাই ! দেইখছেন নাহি
আমার কইন্যা, আমার জান, মহেরবানের
দান রেশমীরে, পাতলা গড়ণ, চোকা নাক মুখ
হৈ দিন শুক্রবার জুম্মা বার, ফজরের নামায
পইড়া, হ কালে দুমুঠো পান্তা খাইয়া, সূর্যোদ্বয়ে
আগেই রসুলের নাম লইয়া বাপ বেটি দুজনে
গেছিলাম হৈ -- মাদারীপুরী হাটে, গোটা বিশেক
হাঁস মুরগী পঞ্চাশ খান ডিম রেশমীর দুই হাতে
ষোল বছরের কইন্যা যেন আসমানের চাঁদের জ্যোৎস্না।
হাটে বিক্রি বাটা খতম হইলে পরে
" বাপজান " বেটি চপ মুড়ি খাইতে কয়-----
এডা কথা জিগাইনি বাপ,
হৈ ঐ যে তাঁবুর ভিতর খেল হচ্ছি
মাদারি খেল দেখতে ভারি মজা, আব্বুজান চলেন গা।"
বেটি মুখ পানে চাইনা দেহি চাঁদের পানা স্বপ্ন ভাসে
চোখের তারায়,
মা মরা বেটি, বড়ই অভিমানী কইলাম ----
" মাদারি কা খেল আর দেখে কাজ নাহি রাত হই যাবে
এত ঢা পথ আঁধার হলি শেয়াল হাইয়না শকুনের দল
ওৎ পাইতা থাহে, লুকায়ে থাহে,"
মাইয়াটার মলিন মুখ
খান দেখাইয়া পরোটা আনচান করে,
তিন বছরের
রেশমী অখন ওর আম্মু রে,
গরীবের দুখের কথা কে শুনে হুনে, বাদ দেন বাবু মশাই !
রেশমীর অবুঝ মন ষোল বছরের মাইয়ার ছলছল
করে চোখ, আপনে কন, ওরে আমি ক্যামনে বুঝাই?
দেহি রাজকন্যা মত রূপ, মলিন হইছে বেহেস্তের হুরী ক্যান জন্ম নিল ?
ক্যান হইলো কন দেহি, আমার বেগমরে দেখতি শুনতি
ভালোই ছিল।
রূপ যৌবন, ঐ হইলো সর্বনাশ মেয়ে মাইনষের রূপ
দোজগের তো শয়তানরা অভাব নাই,
সে শবেবরাত রাইত, পুঙগিরপুত আইসা বেগমরে মুখে গামছা
বাঁইধা লুঠ কইরে লয়ে যায়,
হতবাক আমি বেবাক
বেকুবের মতন ধানের গোলার আড়ালে লুইকা দেহি
রেশমীর আমমুরে জবাই করনের লাগি টাইনা হিঁচইড়ে
গরুর ছাগলের মতন।
দু-চার জন হাত ধইরা টানতে টানতে নিয়ে যায়।
পথ চলছি রেশমীর হাত জড়ায়ে আছে আমার কোমড়।
অখন ঘনাইতেছে রাত, শেইয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে নিশুতি রাইতে
ঘরে ফেরার পথে ঘণ ঘণ জোনাক পোকা জ্বলে ঝিঁঝিঁ ডাকে
বন বাদারে রাত যত বাড়ে আমার বুকের ভিতর ঢিব ডিপ ঢিপ
ঢিব করে।
হঠাৎই উঠল আশ্বিনে ঝড় ঝড়ে উড়ছে ঘরের চাল বেতালে
পড়ছে পা গাছ পালা ভাঙছে হুড়মুড় কইড়া - বাজ
পড়লো কাছেই ঝলসে উঠল আগুন দাউ দাউ কইরে
জ্বলছে গাছ, মাইয়া আমার লতার মতন জড়িয়ে---
আমার মাইয়া বুকের আমার তিতির পাখির মতন উসুম বুকে
ভিতর থর থর করে কাঁপিতিছে
ঝাঁপিয়ে পড়ল বৃষ্টির পানি
বাপ বেটিতে ভিজছি অল্প দূরে ভাঙা চোরা দালান বাড়ি
বাপ বেটি দৌড়ে গিয়ে ঠাঁই পাই,
পুটলি থেইকে পলিথিনের
মোড়া গামছা খান বার কিরে মাইয়া আমার মাথা মুছায়া দেয়
দর দর কইরা দরদে চক্ষু দিয়া পানি ঝরে,
" আব্বু ক্ষুধা
লাগছে? "
মাতৃ স্নেহে মুড়ি আর তাদের পাটালি গুড় দেয়।
হোথায় হঠাৎই বাজ পড়ার আওয়াজে রেশমী ভয়ে জড়ায়ে এ ধরে।
মশাল হাতে ওরা কারা, কেন এলো
মুখে কোলো কাপড় বাঁধা, হারে রে রে রে রে রে ঐ তিনটা যমদুত
সজোরে আমার মাথায় শক্ত লাঠি মাইরা মাথা ফাটাই দেলে।
দৌড়ে ছুটি আসে রেশমীরের চোলের মুঠি ধইরা হেঁচকা টান দেয়।
রশি দিয়া বাঁইধা রেশমীরে টানতে থাকে -- রেশমী আওয়াজ দিয়েন - অ অ অ -- আ আ আ আ
হায় হায় আল্লাহ চোখের সামনেই আমার আদরের মাইয়া নির্যাতনে, গণ ধর্ষণ চলছে।
আর্তনাদ জবাই পশুর মতন মৃত্যুর যন্ত্রনা চিৎকার শুইনা
হায় মেহেরবান, আহ আহ আহ এমন দৃশ্য দেখার আমার আগে মরণ হইলো না ক্যান?
রেশমী পৈশাচিক অত্যাচার অসহ্য হিংস্রতা জ্ঞান হাইরে মুখ থেকেই
গাঁচলা বেড় হইতেছে, গো গো শব্দ -- বধির হতবাক হই,
রেহাই নাই রেহাই নাই রেহাই করলো না শয়তান গুলান
ওরা রেশমীরে চ্যানদোলা
কইরা কোথা নিয়ে গেলো কন দেহি---!
বাবুমশাই ও বাবুমশাই আমার রেশমী রে দেখছেন না হি
কৈ গেল কন দেহি ?
রেশমী রে -- রেশমী ---- মা আমার কৈ গেলি মা
ওরে মা তুই ফিরে আয়---- ওরে ফিরে আয়--!
No comments:
Post a Comment