Wednesday, 20 February 2019
কবিতা গান গল্প শ্যামল সোম
Tuesday, 19 February 2019
সত্তরের কালবৈশাখী ঝড়
কালবৈশাখী ঝড়
শ্যামল সোম
উনিশো সত্তর সালে ভয়ঙ্কর সন্ত্রস্ত
এপারে ওপারে গুপ্ত হত্যা, খুন ত্রস্ত
প্রাণ হাতে নিয়ে পলায়ন ইতিহাসের
পূনাবৃত্তি মহাকালের কলস পূর্ণ হয়ে
কর্মের আগ্নেয়গিরি হতে লাফা উদ্বাস্তু
দলে দলে এক কোটি আশ্রয় খোঁজে।
উত্তাল উতপ্ত, শ্রেণী শত্রু খতম বোঝে
ক"জন, বিপ্লবের স্বপ্ন বিলাস চাড়াগাছ
বিদেশ থেকে এলে এই মাটি প্রথিত প্রথা
নেই, অচিরে মরণ, বিপ্লবের স্বপ্ন বিলীন।
ষাটে দশক সে এক মহাকালবৈশাখী ঝড়ে
দানব মেঘ দৈত্যদের মহাতান্ডবে প্রলয় রণ
লন্ড ভন্ড করে ভেঙেছে শতশত ঘর রণাঙ্গন ।
এক কোটি ঐ চাল চুলো হীন শরণার্থীদের
সাথে শিবিরে পরবাসে বাস, নরক যন্ত্রনায়;
এ প্রজন্মের কেউ কখন শোকাচ্ছন্ন নয় মরে
গেছে বোধ অকৃতজ্ঞ, অবক্ষয় দুঃসময় নয়
শোকে মুহ্যমান হয় নাকো আজ, সেই ভয়াবহ
কালবৈশাখী ঝরে লক্ষ লক্ষ পড়ে ছিল লাশ
আপন স্বমহিমায় কাঁঠাল ছায়ায় বসবাস ফাঁস
নদীতে ছিল লাশ, লাঞ্ছিতা নারী জননীর সে
হাহাকার ক্রন্দন ধ্বনি শুনি এ বুকে উদয়াস্ত
শরণার্থী উদ্বাস্তু গৃহহারা জ্বলছে হৃদয় জুড়ে,
রাজশাহী পদ্মা নদীর ঐ চরাচরের হাহাকার।
মহানন্দে রয়েছে সবাই, একা আমিই হুংকার
গর্জনে বকে যাই পাগলের ত্রিতাল প্রলাপ।
এলো কি ঈশান কোনে ঐ কি অশনি সংকেত
আবার কি ফিরবে কালবৈশাখী ঝড় ?দলে
হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে ভান্ত্রিত্বের সাঁকো ?
দোহাই তোমাদের কাছে প্রার্থনা করি স্মরণে
রেখো, বিস্মৃত হয়ে নাকো দেশভাগের ইতিহাস
পড়ে দেখো, সাঁকো মজবুত করে রেখো, ঐ মহা
প্রলয়ের কালবৈশাখীর ঝরে পরস্পরে হাতে
হাত ধরে বাংলা ভাষার অক্ষর মর্যাদা লড়াই
চলবে, অক্ষুণ্ণ তোমারা নিশ্চয়ই ভাই বোন রেখো।
এপারে ওপারে শুধুই দীর্ঘশ্বাস
একুশের স্মৃতি মিনার ভেঙেছিল যারা
" রাজার দোহাই দিয়ে, ঘাতক সৈন্য ডাকি
মারো মারো' ওঠে হাঁকি। " ( রবীন্দ্রনাথ)
লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ের, লক্ষ
নারী জননী ভগ্নী কন্যার অশ্রু জলে
নূতন করে সে ভাষা শহীদের স্মরণে
শহীদ মিনার নবকলবরে শিল্প স্থাপত্য
গড়েছি আমরা পরস্পরের সাথেই
আছি ভালোবাসার গভীর বন্ধনে, তারই
প্রতিফলন দুই বাংলার যত ভাই বোন।
এপারে ওপারে শুধুই দীর্ঘশ্বাস
শ্যামল সোম বাঁশিওয়ালা
এ পারে যে বাংলাদেশ শস্য শ্যামলা
ও পারে সে বাংলা, শাস্তির মামলা
মাঝখানে নাক উচিয়ে হাতে বন্দুক
পাহারা দেয় কাঁটাতারের বেড়া।
বেড়ার ওপারে তুমি কাঁদলে সত্যই
আমার পায় কান্না বিশ্বাস করো,
এতটুক মিথ্যা বলছি না, বুকে হাত
দিয়ে দেখো থড় পড় করছে বুক।
ভালোবাসার যে এত কষ্ট কে কে
আগে জানতো আর ভালোবাসা
হঠাৎই দমকা ঝড়ের মতনই আসে?
অবশ্য বোন তোকে ভালো না বেসে
আমি কিভাবে বুঝতাম এই অপার
আনন্দ, বোন তোকে ভালোবেসে
আমি ধন্য, ভাইবোনের রাখীর বন্ধন
পাখী, এ প্রেম নৈসর্গিক , ঐশ্বরিক
পবিত্র অমলিন শাশ্বত সুন্দর।
ঢাকায় গেলে তুই উৎফুল্লে নয়নে
ঝরে পানি, আমায় এত ভালোবাসিস
সে ভালোবাসার ঋণে ঋণী আমি।
এত পারে কোলকাতায় তোরই জন্য
তোর আসার অপেক্ষায় আছি, তুই যখন
ওপার থেকে ঘুরে বেড়াবো জন্য
আমার কাছে দুদিনের জন্য আসবি
আমি কোলকাতার শহরে বিখ্যাত
দোকানে গিয়ে কিনে তোর পছন্দের
মনের মতো সাজ সাজিয়ে দেব তোকে।
দেখবো, রবীন্দ্রনাথের বাড়ি, উৎসবের
শহর কোলকাতা, গঙ্গায় নৌকো করে
তোকে সাথে নিয়ে কত জায়গায় বেড়াবো।
শান্তি নিকেতনে গিয়ে দেখবি প্রকৃতি অপার
সৌন্দর্যে ঢালি সাজিয়ে তোর জন্য অপেক্ষায়!
দার্জিলিঙে টাইগার হিল থেকে কাঞ্চন জঙগা
পর্বতের সূর্যোদ্বয়ের রাঙা আলোয় তোকে
দু চোখ ভরে তাকিয়ে দেখবো সোনার মুকুট
হিমালয়ে পাকদণ্ডী উঠে যাওয়া সূর্যের সন্তান ।
অবশেষে বিদায় মূহুর্তে তুই যখন আমার
সব কিছু নিয়ে নিজেকে কাঁদিয়ে বোন তুই যখন
ফিরে যাবি ওপারে বাংলাদেশে ময়মনসিংহ এ
আমি সজল নয়নে , বুকের খুব কষ্ট চেপে মুখে
কান্না হাসি ছড়িয়ে,তোর ওপারের ফিরে যাওয়ার
দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তোর আমার চোখ
আমার দৃষ্টি উড়ন্ত গাংচিল, ঝাপসা হয়ে আসছে বোন।
বুড়িগঙ্গা নদীর বহমান স্রোতে
বুড়ি গঙ্গা নদীর বহমান স্রোতে ( হুমায়ুন আহমেদ এর আলোর পরশ মণি
চলচ্চিত্র দেখার পরে অনুপ্রাণিত হয়ে এই লেখা )
শ্যামল সোম
উনিশো আটষষ্টি সালে যমুনা আকতার আর রফিক
পাশাপাশি বাড়ীর থাকে ষোল বছরের কিশোরীর সাথে
রফিক আজাদ গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক যদিও তৎকালীন
লোকাচারে খুব সোচ্চার নয়, মাটির সাথে গাছের নিবিড়
দুজনের মর্ম স্পর্শে প্রেমের সম্পর্ক, যমুনা যেন মাটি ভীষণ
নরম কমল ফুলের মতন পবিত্র, শৈশব থেকেই আ
মুর্শেদ সাথে, ফরয এর নামায কায়েম করা ওর নিজস্ব ছোট্ট
নামায পাঠি যেটি ওর দাদু হজ যাত্রীদের সাথে ফেরার পথে
যমুনা এক মাত্র নাতনীর এনেছেন, হাজি আবদুল্লাহ আল মনসুর
ছি শুচি স্নিগ্ধ ও শুচিস্মিতা, সারা পাড়ার কখন তাকে বোরখা
আড়ালেই দেখেছেন, কখন ভোর বেলায় মন
যে নীচে
প্রথিত এই কৈশোরের প্রেম, যমুনার সলজ্জ চোখেচোখ
পড়তেই ভূমিকম্প স্পন্দনে আলোড়িত দুজনার উষ্ণ মন।
পুরোনো ধানমন্ডির লেকের ধারে পরস্পরের স্নিগ্ধ সন্ধ্যা
সান্নিধ্যে নির্জন পরিবেশে বাক্য হারা প্রেমে আত্মহারা।
হঠাৎই বৃষ্টির পানি ঝরতেই বৃষ্টিস্নাত পরস্পরের কাছাকাছি।
দেশের তখন বিদেশী শাসন শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
উর্দূ ভাষার জাতীয় ভাষার ব্যবহারে সুতীব্র ক্ষোভ প্রকাশ
অধুনা বাংলাদেশের বিভিন্ন নেতা নেত্রীর জন্য সংযোগের
উনিশ বাহান্ন সালের ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের
জমায়েত মিছিলে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন পদ যাত্রায়
পূর্ব পাকিস্তানে পুলিশের লাঠি চার্জ শেষে গুলি বর্ষণে
প্রাণ হারান তিন ভাষা আন্দোলনের শহীদ
বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা মাতৃ দুগ্ধ মত বাংলা ভাষা
অস্বীকৃতি দিকে দিকে বিভিন্ন জেলায় আপামর সব ধর্মের
মানুষ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর শপথ গ্রহণের ইতিহাসে।
ভাষা সৈনিক মাতিন সাহেবের ও মৌলনা ভাসানী বহু ব্যক্তিত্ব
সেদিন জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশেই
ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতা
গণ ভোটে সাফল্যে গণ পরিষদে সংখ্যা গরিষ্ঠ হওয়া সত্বেও
শাসকদের চোখে দেশদ্রোহী ভোট বাতিল করে চললো ফের
ধর পাক, বঙ্গবন্ধুর ছয়দফা দাবীর বিরুদ্ধেই প্রতিরোধে গর্জে
উঠল বিদেশী শাসকের কামান একদিনে ভয় তাড়িত পশুর মত
টেনে হিঁচড়ে এনে গণ হত্যা করেছিল সৈনিক ও পুলিশের সন্দেহে
যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার এখানে সেখানে, বঙ্গবন্ধুর রেস কোর্স
ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষনে অনুপ্রাণিত বহু যুবকের সাথে রফিক
রফিক আজাদ আব্বু আম্মুর কাছ থেকে গোপনে পলায়নের
রাতে যমুনার কাছেই ধরা পড়েছিল সে, অনুনয় অনুরাগে তৃষ্ণার্ত
চোখে জল টল টল করে, দেশের জননী শৃঙ্খল মোচন এর দায়িত্ব
পালনের অঙ্গীকার যমুনা কে বোঝাতে, আমার মায়ের সোনার নোলক
না নিয়ে ঘরে ফিরবো না।
পথেই এবার নামো সাথী পথেই হবে পথ চেনা, যমুনার হাত ধরেই
বাংলা মায়ের ঢলঢল মুখে হাসি ফোটাতে, " জনতার সংগ্রাম চলছে
আমাদের সংগ্রাম চলছে - প্রয়োজন হলে দেবো এক নদী রক্ত ! "
তিরিশ লক্ষ মানুষের আত্মবলিদান আর এক লক্ষ জননীর ভগ্নী
কন্যার গণ ধর্ষনের শিকার সৈনিকদের ব্যারাকে অস্থায়ী ঝাউনিতে।
সেই গগন ভেদি আর্তনাদ জবাই করেছিল বিদেশী পশুরা পাশবিক
নির্যাতনে সহস্র নারীর অভিশাপে অভিশপ্ত আজ তাদের জীবন পশুর
মতন মৃত্যুর খবর পরবর্তী কালে পেয়েছিলাম।
কিছু রাষ্ট্র এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই
মুক্তি যোদ্ধা রফিক আজাদ ও নার্স যমুনার খোঁজে আজও প্রতীক্ষিত
আমার তোমার মনের অলিন্দে বৃষ্টি ঝরে অশ্রু বিসর্জন জানাই সালাম।
Monday, 18 February 2019
লালসায় লীলায়িত পুরুষ
লালসায় লালায়িত পুরুষ
শ্যামল সোম
রাতের বেলায় বাহিরে অঝোরে বৃষ্টি দ্রুত বেগে ঝড়
বসার ঘরে ঢুকে জানালা বন্ধ করছে সার্সি বিদ্যাৎ
ঝলসে উঠলো, দামাল ঝড়ে নাস্তানাবুদ তন্বী তরুনী
অনুজা মাতৃ হারা রমেন বাসার একমাত্র বন্ধু কন্যা,
রমেন তাঁর বাপির ফেরার অপেক্ষায় বারবার ফোন
করছে, রমেন মিত্রের ফোন বেজে যাচ্ছে।
বসার ঘরে অনুজা রঙিন মাছের একুরিয়াম মাছেদের
দেখছে ঘড়িতে রাত্রি বারোটা বাজলো ঢং ঢং শব্দ হলো।
অনুজা মোবাইলে ছবি দেখছে।
কলিং বেলের শব্দ হলো, অনুজা দ্রুত বেগে চলে গেল।
সারা ঘরের সাজানো শৈল্পিক নান্দনিক সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায়।
মদ্যপ অবস্থায় রমেন মিত্র টলতে টলতে ঘরে ঢোকে সোফায়
গা এলিয়ে দিয়ে বসেন, ঈষত্ জড়ানো গলায় ডাকেন--" অনু অনুজা
My Sweet Darling
অনুজা কার্পেট উপর বসে বাপির জুতো মোছা খুলে দেয়।
রমেন তাঁর মেয়েকে হাত ধরে কোলে বসিয়ে আদর করে বলেন--
অনুজা মা তুমি রোজ আমার জুতো মোছা খুলে দাও কেন মামণি ?
আমাদের প্রিয় প্রাণের বন্ধু বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে
আমাদের প্রিয় প্রাণের বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ
শ্যামল সোম
বাংলা মায়ের বীর সন্তান জন্ম নেন,
ফরিদপুরের ভূমিপুত্র মুজিবুর রহমান।
যৌবনে থেকেই দুচোখে স্বাধীনতা স্বপ্ন,
বাংলা ভাষার আজীবন সংগ্রামী চৈতন্য
চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুগান্তকারী ঘটনি যা
ভাষার জন্য তিরিশ লক্ষ শহীদ হয়েছেন,
তিন লক্ষ মা বোন ধর্ষণে প্রতিদিন নিহত।
শোকার্ত অগাস্ট মাসে আমরা সবাই
মিলে পরম প্রভু বিশ্ব স্রষ্টা সৃষ্টি এই সেই
স্বপ্নে বাংলাদেশে কল্যাণ কামনা করি,
মঙল হোক তোমাদের বন্ধু বৃদ্ধ পাশে
আছি শরণার্থী লোকটির জনমভূমি,
শস্য শ্যামলা আমন ধানে গন্ধে মেখে
নীল নীলিমায় নীলভ আকাঙ্খাকাশে
বাতাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবশেষে।
ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণ অক্ষরে লেখা
লক্ষ্য লক্ষ্য সহস্র প্রাণের আত্ম ত্যাগ।
শতসহস্র জননীর আত্মবলিদানে,
বলছো বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে,
শত বাধা বিঘ্ন প্রয়োজনে এক নদী
রক্ত দান জনতার মিছিলে পুলিশের
গুলি বর্ষন নারকীয় নারী ধর্ষণ লাশ
লাশের ময়নাতদন্ত হয় নাই দাফন,
সম্পন্ন হয়েছে হয়ে ছিলো কিনা জানা
যায় নাই, উনিশশো ঊনসত্তর সত্তর
সালে এক কোটি মানুষ পরিবার এর
সাথে আতংক প্রাণ ভয়ে পালিয়ে শত
শত বেড়াচ্ছেন দেশ থেকে দেশান্তরে।
শতসহস্র ভাষা সৈনিকের আত্ম বিসর্জন
বৃথা যাবে না স্বমহিমায় উজ্জ্বল জ্যাতিস্ক
তোমার আমার প্রাণের বাংলাদেশ মনস্ক,
প্রিয় মানুষের স্বাধিকার সপক্ষে সংগ্রাম
সফলতার পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
কবি তুমিই আমার কবিতা
কবি তুমিই আমার কবিতা
শ্যামল সোম
আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিপ্রায়
তোমাকে ভাবি সারাক্ষণই কাব্য ময়
মায়াবী অবিলতায় স্বরে স্বরচিত মগ্ন
মন তোমার অনন্য কাব্য কুঞ্জর নিয়ে
যাবে আমাকে ভিসা হাতে বসে আছি
সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার
এপারে আমি অধীত আগ্রহে অপেক্ষা
এবারো ফেরাবে শূণ্য হাতে ভুলে যাই,
মাফ করে দাও পঞ্চাশ বছর আগের
বাহাত্তর সালে ঢাকায় মালিবাগেএকুশের
অনুষ্ঠানে কোলকাতা থেকে মৈত্রী বন্ধনে
কবিতা পড়তে এসে হয়েছিল দেখা তখন
তুমি তন্বী তরুণী লাবণ্যময়ী বনলতা কবিতা
তোমাকে প্রথম দেখেই রূপে আবৃতি শুনে
স্বরচিত কবিতা পাঠ মধুময় কন্ঠ স্বরে
শিহরণ বহে গেল সেই জ্বলন্ত যৌবনে
টিমের আগুনে পুড়ে গেলাম অপার
ভালোবাসে ছোঁয়ায় শিহরিত এই ঢেউ।
আজ আমরা দুজনে স্বপ্ন দেখি কেউ
না আজ আর কেউ কার নয় হারানো সুর।
তুমি এখন পরস্ত্রী পেক্ষা পট পরিবর্তনের
আঁচ পাই বুড়ো বয়সে আঁকড়ে ধরতে কেন
প্রতীক্ষায় পলাতক প্রেমিক জরাজীর্ণ
পঁচাত্তর বছর বয়সে শরনারথী ঠাঁই যদি
পাই অন্তিম মুহূর্তে শ্বাস প্রশ্বাসের শেষে
থেকো পাশে নায় না ভালোবেসে মুমূর্ষু
অবস্থায় পানি দিও তুমিই আমার কবিতা।
বাংলা ভাষায় মনের কথা জানে মন
বাংলা ভাষায় মনের কথা জানে মন
শ্যামল সোম
তোমার ভাষা
আমার ভাষা,
মাতৃভাষা এই
মুখের ভাষা।
বাংলা ভাষা
ভাষ্য মতে
একটি শব্দে
আমার একই
বাঙালি সেটাই।
আসল কথায়
ফিরে আসি
মানসিক মিল
অন্ত মিল নীল
আকাশে তলে
আমরা আছি।
ভাষা দিবসে
শহীদ স্মরণে
শ্রদ্ধা মমনে
সহমর্মিতায়
সুখে দুখে
পাশে থাকা
ভালোবেসে
ভাষার বন্ধনে
আবদ্ধ হৃদয়।
এপারে শুনি
প্রতিধ্বনি গান
প্রাণ আনচান,
শতসহস্র প্রাণ
আত্মবলিদান,
ব্যথা বেদনা
অনুভবে মন
অনুরোরন হয়।
শঙ্খ চিল মন
ধায় মমনে প্রায়
গাঁথা হয়ে রয়ে
যায় হৃদয়ে এ
আয়নায় চোখ
পড়তেই তুমি
একি স্বপ্ন দেখি?
আত্মমগ্ন কবি আমার জীবনানন্দ
আত্মমগ্ন কবি আমার জীবনানন্দ
শ্যামল সোম এর সংকলন
( সংকলিত করেছি আমার ভীষণ প্রিয় প্রাণ স্বরূপ ফেলে আসা বাংলাদেশের
বিশিষ্ট জীবনানন্দ প্রেমী ও বাংলা ভাষার ভালবাসায় নিবেদিত প্রাণের মানুষ কবির অনবদ্য অলংকরণে মুগ্ধ হয়ে
আমার একান্ত প্রিয় প্রাণের সেই মানুষদের আন্তরিক হৃদয়ে কৃতজ্ঞতা, কুর্নিশ জানাই সসম্মানে তাঁদের সবাইকে )
উনিশশো বাহাত্তর সালে যৌবনে প্রায় ছুটে যাই
উনিশশো বাহান্ন সালের ভাষা আন্দোলনে রক্তাক্ত
ইতিহাস বহু শহীদদের আত্ম বলিদানে লক্ষ লক্ষ
নারী পুরুষের রক্তক্ষরণ জীবনের বিনিময়ে প্রাপ্তি
আজকে উন্নয়নে পথে বাংলাদেশ শিখরে পৌচছে
মানুষের কল্যাণে অনেক দূর এগিয়ে যাক এই মোর
শুভকামনা রইলো সকল বাংলাদেশেরমানুষের জন্য।
আগত ভাষা শহীদ মিনারে ভাষা দিবসে বাংলাদেশের
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি, আনন্দে র স্মৃতি
রোমন্থন আজও জরাগ্রস্ত জরাজীর্ণ বৃদ্ধ বয়সে এসে
জাগে শিহরণ মমনে অনুরোরন ধ্বনিত গুঞ্জন শুনি
আপন মনের গহীন গহ্বরে কীতৃন খোলা নদী বহে
যায় আমার হৃদয়ে সুখের ব্যথায় অনুভবে স্মৃতি
মনে পড়ে যায় আনন্দ স্রোতে ভেসে যাই ভালবাসায়।
তখন সদ্য মুক্তি যুদ্ধের অবসানে শিকড়ের সন্ধানে
মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে স্বপ্নের দেশ স্বাধীন বাংলাদেশের
সোঁদা মাটির গন্ধ, পেয়েছিলাম প্রতীম কবি কাব্যময়তায়---!
“তবু তোমাকে ভালোবেসে
মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে
বুঝেছি অকূলে জেগে রয়
ঘড়ির সময়ে আর মহাকালে যেখানেই রাখি এ হৃদয় ।”
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
“শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে
বলিলাম: ‘একদিন এমন সময়
আবার আসিয়ো তুমি, আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!–
পঁচিশ বছর পরে!”
“হেঁয়ালি রেখো না কিছু মনে;
হৃদয় রয়েছে ব'লে চাতকের মতন আবেগ
হৃদয়ের সত্য উজ্জ্বল কথা নয়,-
যদিও জেগেছে তাতে জলভারানত কোনো মেঘ;
হে প্রেমিক, আত্মরতিমদির কি তুমি?
মেঘ;মেঘ, হৃদয়ঃ হৃদয়, আর মরুভূমি শুধু মরুভূমি..”
“যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের - মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা”
―
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
“কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ ।”
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
“সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই হয় কথা,
আমাদের মুখ সারাটি রাত্রি মাটির বুকের 'পরে!”
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
“ঘনিষ্ঠ আকাশ যেন - যেন কোন বির্কীন জীবন
অধিকার ক’রে আছে ইহাদের মন;
চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বথের কাছে
একগাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা - একা,
যে জীবন ফড়িঙের,দোয়েলের-মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা
এই জেনে।”
“বোধ
আলো — অন্ধকারে যাই — মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
আমি তারে পারি না এড়াতে
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাছ তুচ্ছ হয়, পন্ড মনে হয়,
সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়!
সহজ লোকের মতো কে চলিতে পারে!
কে থামিতে পারে এই আলোয় আঁধারে
সহজ লোকের মতো! তাদের মতন ভাষা কথা
কে বলিতে পারে আর! — কোন নিশ্চয়তা
কে জানিতে পারে আর? — শরীরের স্বাদ
কে বুঝিতে চায় আর? — প্রাণের আহ্লাদ
সকল লোকের মতো কে পাবে আবার!
সকল লোকের মতো বীজ বুনে আর
স্বাদ কই! — ফসলের আকাঙক্ষায় থেকে,
শরীরে মাটির গন্ধ মেখে,
শরীরে জলের গন্ধ মেখে,
উৎসাহে আলোর দিকে চেয়ে
চাষার মতণ প্রাণ পেয়ে
কে আর রহিবে জেগে পৃথিবীর পরে?
স্বপ্ন নয়, শান্তি নয়,কোন এক বোধ কাজ করে
মাথার ভিতরে!”
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
“ভগবান, ভগবান, তুমি যুগ যুগ থেকে ধ'রেছ শুঁড়ির পেশা”
ঝরা পালক
“কতো দেহ এলো,- গেল,- হাত ছুঁয়ে-ছুঁয়ে
দিয়াছি ফিরায়ে সব,- সমুদ্রের জলে দেহ ধুয়ে
নক্ষত্রের তলে
বসে আছি,- সমুদ্রের জলে
দেহ ধুয়ে নিয়া
তুমি কি আসিবে কাছে”
ধূসর পান্ডুলিপি
“কি কথা তাহার সাথে? তার সাথে!”
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
“আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে -
সে কেন জলের মত ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়?”
“তোমার শরীর ,-
তাই নিয়ে এসেছিলে একবার;- তারপর,- মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন দিকে জানিনি তা,- হয়েছে মলিন
চক্ষু এই;- ছিঁড়ে গেছি- ফেড়ে গেছি ,- পৃথিবীর পথ হেঁটে হেঁটে
কত দিন রাত্রি গেছে কেটে !”
ধূসর পান্ডুলিপি
“নক্ষত্রেরা চুরি করে নিয়ে গেছে, ফিরিয়ে দেবে না তাকে আর।
- জর্নাল : ১৩৪৬”
“চোখে তার
যেন শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার !
স্তন তার
করুণ শঙ্খের মতো- দুধে আর্দ্র- কবেকার শঙ্খিনীমালার!
এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।
---শঙ্খমালা”
বনলতা সেন
“আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে;
বলেছিলো: ‘এ নদীর জল
তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল:
সব ক্লান্তি রক্তের থেকে
স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি;
এই নদী তুমি।
‘এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?’
মাছরাঙাদের বললাম;
গভীর মেয়েটি এসে দিয়েছিলো নাম।
আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি;
জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে
কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে।”
“আমরা যাই নি মরে আজও--তবু কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়:
মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জোছনার প্রান্তরে,
প্রস্তরযুগের সব ঘোড়া যেন--এখনও ঘাসের লোভে চরে
পৃথিবীর কিমাবার ডাইনামোর 'পরে।”
সাতটি তারার তিমির
“অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই—প্রীতি নেই—করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব'লে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।
A strange darkness has come upon the world today.
They who are most blind now see,
Those whose hearts lack love, lack warmth, lack pity's stirrings,
Without their fine advice, the world today dare not make a move.
They who yet possess an abiding faith in man,
To whom still now high truths or age-old customs,
Or industry or austere effort all seem natural,
Their hearts are victuals for the vulture and the jackal.
Translated by: Clinton B. Seely”
― Jibanananda Das, বনলতা সেন
“আমার হৃদয় পৃথিবী ছিঁড়ে উড়ে গেলো,
নীল হাওয়ার সমুদ্রে স্ফীত মাতাল বেলুনের মতো গেল উড়ে,
একটা দূর নক্ষত্রের মাস্তুলকে তারায়-তারায় উড়িয়ে দিয়ে চলল
একটা দুরন্ত শকুনের মতো।”
বনলতা সেন
“তোমার পাখনায় আমার পালক, আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন”
“যে-পৃথিবী জেগে আছে, তার ঘাস—আকাশ তোমার।
জীবনের স্বাদ ল’য়ে জেগে আছো, তবুও মৃত্যুর ব্যথা দিতে পারো তুমি;”
ধূসর পান্ডুলিপি
“চারিদিকে এখন সকাল—
রোদের নরম রং শিশুর গালের মতো লাল;
মাঠের ঘাসের প'রে শৈশবের ঘ্রাণ—
পাড়াগাঁর পথে ক্ষান্ত উৎসবের এসেছে আহ্বান ।
চারিদিকে নুয়ে প’ড়ে ফলেছে ফসল,
তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা-ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল;
প্রচুর শস্যের গন্ধ থেকে-থেকে আসিতেছে ভেসে
পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রাণে ভরা আমাদের ভাঁড়ারের দেশে!
:অবসরের গান”
ধূসর পান্ডুলিপি
“আমরা এ-পৃথিবীর বহুদিনকার
কথা কাজ ব্যথা ভুল সংকল্প চিন্তার
মর্যাদায় গড় কাহিনীর মূল্য নিংড়ে এখন
সঞ্চয় করেছি বাক্য শব্দ ভাষা অনুপম বাচনের রীতি ।
মানুষের ভাষা তবু অনুভূতিদেশ থেকে আলো
না পেলে নিছক ক্রিয়া; বিশেষণ; এলোমেলো নিরাশ্রয় শব্দের কঙ্কাল;
জ্ঞানের নিকট থেকে ঢের দূরে থাকে ।
অনেক বিদ্যার দান উত্তরাধিকারে পেয়ে তবু
আমাদের এই শতকের
বিজ্ঞান তো সংকলিত জিনিসের ভিড় শুধু— বেড়ে যায় শুধু;
তবুও কোথাও তার প্রাণ নেই ব’লে অর্থময়
জ্ঞান নেই আজ এই পৃথিবীতে; জ্ঞানের বিহনে প্রেম নেই ।
এ-যুগে কোথাও কোনো আলো— কোনো কান্তিময় আলো
চোখের সুমুখে নেই যাত্রিকের; নেই তো নিঃসৃত অন্ধকার
রাত্রির মায়ের মতো: মানুষের বিহ্বল দেহের
সব দোষ প্রক্ষালিত ক’রে দেয়— মানুষের বিহ্বল আত্মাকে
লোকসমাগমহীন একান্তের অন্ধকারে অন্তঃশীল ক’রে
তাকে আর সুধায় না— অতীতের সুধানো প্রশ্নের
উত্তর চায় না আর— শুধু শব্দহীন মৃত্যুহীন
অন্ধকারে ঘিরে রাখে, সব অপরাধ ক্লান্তি ভয় ভুল পাপ
বীতকাম হয় যাতে— এ-জীবন ধীরে-ধীরে বীতশোক হয়”
সাতটি তারার তিমির
“একবার যখন দেহ থেকে বা'র হয়ে যাব
আবার কি ফিরে আসবো না আমি পৃথিবীতে?
আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে
একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে
কোন এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে।”
বনলতা সেন
“হেমন্তের ঝড়ে আমি ঝরিব যখন
পথের পাতার মতো তুমিও তখন
আমার বুকের ’পরে শুয়ে রবে? অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
সেদিন তোমার।
তোমার আকাশ—আলো—জীবনের ধার
ক্ষ’য়ে যাবে সেদিন সকল?
আমার বুকের ’পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল
তুমিও কি চেয়েছিলে শুধু তাই, শুধু তার স্বাদ
তোমারে কি শান্তি দেবে।
আমি চ’লে যাবো—তবু জীবন অগাধ”
ধূসর পান্ডুলিপি
“জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার-
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার!
- কুড়ি বছর পরে”
বনলতা সেন
“তুমি একা! তোমারে কে ভালোবাসে! — তোমারে কি কেউ
বুকে করে রাখে!
জলের আবেগে তুমি চলে যাও —
জলের উচ্ছ্বাসে পিছে ধু ধু জল তোমারে যে ডাকে!
সহজ
“আগুন বাতাস জল: আদিম দেবতারা তাদের সর্পিল পারিহাসে
তোমাকে দিল রূপ-
কী ভয়াবহ নির্জণ রূপ তোমাকে দিল তারা ;
তোমার সংস্পর্শের মানুষের রক্তে দিল মাছির মতো কামনা।
আগুন বাতাস জল: আদিম দেবাতারা তাদের বঙ্কিম পরিহাসে
আমাকে দিল লিপি রচনা করবার আবেগ:
যেন আমিও আগুন বাতাস জল,
যেন তোমাকেও সৃষ্টি করছি।”
মহাপৃথিবী
“তুমি কি গ্রীস পোল্যাণ্ড চেক প্যারিস মিউনিক
টোকিও রোম ন্যুইয়র্ক ক্রেমলিন আটলান্টিক
লণ্ডন চীন দিল্লী মিশর করাচী প্যালেস্টাইন?
একটি মৃত্যু, এক ভূমিকা, একটি শুধু আইন।’
বলছে মেশিন। মেশিনপ্রতিম অধিনায়ক বলে:
‘সকল ভূগোল নিতে হবে নতুন ক’রে গ’ড়ে
আমার হাতে গড়া ইতিহাসের ভেতরে,
নতুন সময় সীমাবলয় সবই তো আজ আমি;
ওদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে আমার সত্ত্বাধিকারকামী;
আমি সংঘ জাতি রীতি রক্ত হলুদ নীল;
সবুজ শাদা মেরুন অশ্লীল
নিয়মগুলো বাতিল করি; কালো কোর্তা দিয়ে
ওদের ধূসর পাটকিলে বফ্ কোর্তা তাড়িয়ে
আমার অনুচরের বৃন্দ অন্ধকারের বার
আলোক ক’রে কী অবিনাশ দ্বৈপ-পরিবার।
:অনন্দা”
“আবার আকাশের অন্ধকার ঘন হয়ে উঠেছে :
আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার।
যে আমাকে চিরদিন ভালোবেসেছে
অথচ যার মুখ আমি কোনদিন দেখিনি,
সেই নারীর মতো
ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়েছে উঠছে।
মনে হয় কোনো বিলুপ্ত নগরীর কথা
সেই নগরীর এক ধূসর প্রাসাদের রূপ জাগে হৃদয়ে।
ভারতসমুদ্রের তীরে
কিংবা ভূমধ্যসাগরের কিনারে
অথবা টায়ার সিন্ধুর পারে
আজ নেই, কোন এক নগরী ছিল একদিন,
কোন এক প্রাসাদ ছিল;
মূল্যবান আসবাবে ভরা এক প্রাসাদ;
পারস্য গালিচা, কাশ্মিরি শাল, বেরিন তরঙ্গের নিটোল মুক্তা প্রবাল,
আমার বিলুপ্ত হৃদয়, আমার মৃত চোখ, আমার বিলীন স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা;
আর তুমি নারী -
এই সব ছিল সেই জগতে একদিন।
অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল,
অনেক কাকাতুয়া পায়রা ছিল,
মেহগনির ছায়াঘন পল্লব ছিল অনেক;
অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল;
অনেক কমলা রঙের রোদ;
আর তুমি ছিলে;
তোমার মুখের রূপ কত শত শতাব্দী আমি দেখি না,
খুঁজি না”
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
বনলতা সেন
ধূসর পান্ডুলিপি
ঝরা পালক
জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ (১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯, বরিশাল - ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪, বঙ্গাব্দ: ৬ ফাল্গুন, ১৩০৫ - ৫ কার্তিক, ১৩৬১) বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাংলা কবি। তাঁকে বাংলাভাষার "শুদ্ধতম কবি" বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ১৪টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা গ্রন্থ করেছেন যার একটিও তিনি জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকাল অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে। রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসাবে তিনি সর্বসাধারণ্যে স্বীকৃত।
জীবনানন্দ দাশের কাব্যে মণি মুক্ত খোঁজে
আমরা বুঝেছি যারা বহু দিন মাস ঋতু শেষ হলে পর পৃথিবীর সেই কন্যা কাছে এসে অন্ধকারে নদীদের কথা কয়...
প্রেরণা ভালোবাসি ভালোবাসা প্রেম প্রকৃতি প্রেমিক দেশবাসী প্রেমিকা ভালোবাসা দিবস প্রেমপত্র অনুরাগ দেশ ভাষাপ্রত্যাশা প্রকৃতিপ্রেম সন্ধ্যা দেশপ্রেম
আমরা দেখেছি যারা বুনো হাঁস শিকারীর গুলির আঘাত এড়ায়ে উড়িয়া যায় দিগন্তের নম্্র নীল জোছনার ভিতরে,...
প্রেরণা ভালোবাসি ভালোবাসা প্রেম প্রকৃতি প্রেমিক প্রেমিকা ভালোবাসা দিবস প্রেমপত্র দেশ ভাষা প্রত্যাশা প্রকৃতিপ্রেমদেশপ্রেম
সুরঞ্জনা, তোমার হৃদয় আজ ঘাস : বাতাসের ওপারে বাতাস - আকাশের ওপারে আকাশ।
মেয়ে তুমি প্রেম অনুভুতি বাতাস প্রেতাত্মা ভালোবাসা প্রেমপত্র ভালোবাসা দিবস প্রেমিকা অনুভূতি প্রেমিক অনুভবআকাঙ্ক্ষা ভালোবাসি আকাশ প্রেরণা
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর
মোহ দেশপ্রেম দেশ
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হয়েছে হলুদ হিজলের জানালায় আলো আর বুলবুলি করিয়াছে খেলা, ইঁদ...
প্রেরণা ভালোবাসি ভালোবাসা প্রেম প্রকৃতি প্রেমিক প্রেমিকা ভালোবাসা দিবস প্রেমপত্র অনুরাগ দেশ প্রকৃতিপ্রেমপ্রত্যাশা সন্ধ্যা দেশপ্রেম
জানো কি অনেক যুগ চলে গেছে? মরে গেছে অনেক নৃপতি? অনেক সোনার ধান ঝরে গেছে জানো না কি?
অতীত
আমরা বেসেছি যারা অন্ধকারে দীর্ঘ শীতরাত্রিটিরে ভালো, খড়ের চালের পরে শুনিয়াছি মুগ্ধ রাতে ডানার সঞ...
প্রেরণা ভালোবাসি ভালোবাসা প্রেম প্রকৃতি প্রেমিক প্রাপ্তি প্রেমিকা ভালোবাসা দিবস প্রেমপত্র অনুরাগ দেশ ভাষাপ্রত্যাশা প্রকৃতিপ্রেম দেশপ্রেম
চোখে তার যেন শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার! স্তন তার করুণ শঙ্খের মতো–দুধে আর্দ্র-কবেকার শঙ্খিনীমালার!
যৌনতা প্রেম
পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে; পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে; পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু'জ...
রূপসী বাংলা প্রকৃতিপ্রেম দেশ প্রকৃতি
অধ্যাপক, দাঁত নেই—চোখে তার অক্ষম পিঁচুটি; বেতন হাজার টাকা মাসে—আর হাজার দেড়েক পাওয়া যায় মৃত ...
দর্শন জাতি অনুভুতি অনুভব উপদেশ জীবন অনুভূতি জন্ম
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর হাল ভেঙে ...
ভালোবাসা প্রেম
তুমি তা জানো না কিছু, না জানিলে- আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে! যখন ঝরিয়া যাব হেমন্তের ঝ...
ভালোবাসা প্রেম
যদি থাকে বন্ধুর মন গাং পাড় হইতে কতক্ষন
বন্ধু বন্ধুত্ব
মিনারের মতো মেঘ সোনালি চিলেরে তার জানালায় ডাকে, বেতের লতার নিচে চড়য়ের ডিম যেন শক্ত হয়ে আছে, ন...
প্রেরণা ভালোবাসি ভালোবাসা প্রেম প্রকৃতি প্রেমিক প্রত্যাশা দেশবাসী প্রেমিকা ভালোবাসা দিবস প্রেমপত্র দেশ ভাষাপ্রকৃতিপ্রেম প্রভেদ সন্ধ্যা দেশপ্রেম
আমরা দেখেছি যারা নিবিড় বটের নিচে লাল লাল ফল পড়ে আছে; নির্জন মাঠের ভিড় মুখ দেখে নদীর ভিতরে; যত...
প্রেরণা ভালোবাসি ভালোবাসা প্রেম প্রকৃতি প্রেমিক প্রত্যাশা দেশবাসী প্রেমিকা ভালোবাসা দিবস প্রেমপত্র দেশ ভাষাপ্রকৃতিপ্রেম প্রভেদ সন্ধ্যা দেশপ্রেম
কী কথা তাহার সাথে? - তার সাথে! আকাশের আড়ালে আকাশে মৃত্তিকার মতো তুমি আজ : তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।
মেয়ে তুমি প্রেম অনুভুতি ভালোবাসা প্রেমপত্র ভালোবাসা দিবস প্রেমিকা অনুভূতি প্রেমিক অনুভব আকাঙ্ক্ষাভালোবাসি আকাশ প্রেরণা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর, তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এ...
ভালোবাসা প্রেম
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি, বোলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে; ফিরে এসো সুরঞ্জনা : নক্ষত্রের র...
মেয়ে তুমি প্রেম যুবক নক্ষত্র অনুভুতি প্রেমপত্র ভালোবাসা দিবস প্রেমিকা ভালোবাসি প্রেমিক অনুভূতি অনুভবভালোবাসা রূপবতী রাত প্রেরণা
পেঁচার ধূসর পাখা উড়ে যায় নক্ষত্রের পানে — জলা মাঠ ছেড়ে দিয়ে চাঁদের আহ্বানে বুনো হাঁস পাখা মেলে ...
রূপসী বাংলা প্রকৃতিপ্রেম
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না; আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে, পৌঁছে...
জীবন দর্শন আশা অপেক্ষা উপদেশ
আমরা মৃত্যুর আগে কী বুঝিতে চাই আর? জানি না কি আহা, সব রাঙা কামনার শিয়রে যে দেয়ালের মতো এসে জাগে...
প্রেরণা ভালোবাসি ভালোবাসা প্রেম প্রকৃতি প্রেমিক দেশবাসী প্রেমিকা ভালোবাসা দিবস প্রেমপত্র অনুরাগ দেশ ভাষাপ্রত্যাশা প্রকৃতিপ্রেম সন্ধ্যা দেশপ্রেম
মনে পড়ে কবেকার পাড়াগাঁর অরুণিমা স্যানালের মুখ; উড়ুক উড়ুক তারা পউষের জ্যোৎস্নায় নীরবে উড়ুক কল্পন...
রূপসী বাংলা প্রকৃতিপ্রেম প্রেম দেশ
আরম্ভ হয় না কিছু — সমস্তের তবু শেষ হয় — কীট যে ব্যর্থতা জানে পৃথিবীর ধুলো মাটি ঘাসে তারও বড় ব্য...
ব্যর্থতা
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়; হয়তো বা হাঁস হব কিশোরীর ঘুঙুর রহিবে লাল পায়, ...
তুমি অনুভব অনুভুতি প্রেমপত্র ভালোবাসা দিবস প্রেমিকা অনুভূতি প্রেমিক প্রেম ভালোবাসা ভালোবাসি প্রেরণা
পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে; পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে; পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু-জ...
ভালোবাসা প্রেম
ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল,- ডালিম ফুলের মতো ঠোঁট যার রাঙা, আপেলের মতো লাল যার গাল, চুল যার...
ভালোবাসা প্রেম
আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন-কতদিন আমিও তোমাকে খুঁজি নাকো;- এক নক্ষত্রের নিচে তবু – একই আলো পৃথিবী...
জীবন যাপন
আমার ভীষণ
প্রিয় আপন
স্বজন আত্মমগ্ন
মন অদ্ভূত আঁধারে
বিপন্ন সময় বিস্মৃত
ঐতিহাসিক পটভূমি
দেশ জননীকে খণ্ড
খণ্ড করে গদিতে বসে।
সেই ভয়াবহ অন্ধকারে
গোপনে দেশভাগ ষড়যন্ত্র
এই পাপে মরছে মানুষ
তিন দেশেই, বাংলাদেশে
পশ্চিম বঙ্গে ব্রাতয স্মরণে
শুধুই পাঠাগার বাংলাদেশের বরিশালে, আর পশ্চিম বঙ্গের কোলকাতায় জীবনানন্দ সভাগৃহ।