Sunday, 3 March 2019

মেয়ে মানুষের লাশ ছোট গল্প

মেয়ে  মানুষের  লাশ

                                                শ্যামল সোম

বহুকাল আগে শ্রদ্ধেয়া  কবি  লিখেছিলেন,
" মেয়ে মানুষের লাশ,"
আজও মেয়ে মানুষের লাশ  ভাসে
ঐ দূরে  ইচ্ছামতী নদীর জলে,
মেয়ে  মানুষের  নগ্ন লাশ ভাসে  জলে, '

বড় হিংস্র  মাছেরা খুবলে, খেয়েছে  শরীর।
 ভীড়  করে  এসেছে নানা  বয়সের পুরুষ, নারীরা মাথায় ঘোমটার আড়ালে আড়  চোখে চেয়ে  ফেলে দীর্ঘশ্বাস,  চাপা  শ্বাস, ফেলে চলে যায় নিঃশব্দে, তাদের  বুকের ভেতর এক অসহ্য  চাপা  যন্ত্রনার  ঢেউ  আছড়ে  পড়ে।
ভীড় করে আসা  পুরুষেরের  মাঝে ওঠে  গুঞ্জন নানা লোকে নানা  কথা বলে;
" বিভত্স্য  ধর্ষনের  শিকার, 
ব্যর্থ প্রেমের  আঘাতে  আত্মহত্যা,
" দাঁত বে ড়  করে নিজের  তামাশায় নিজেই হেসে উঠে"।
"  নির্ঘাত  বিবাহের  প্রতিশ্রুতি নির্ধারিত সহযোগিতায় আনন্দে মাতাল সহবাসের ফলাফল।

" যথারীতি  প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে  অন্তস্বত্তায় হওয়ার পর   আত্মহত্যা ছাড়া  গতি কী ?
অনেকেই  অট্ট হাস্যে ফেটে পড়ল,  সব পুরুষের নজর কিন্তু ঐ উলঙ্গ মেয়ে মানুষের শরীরে দিকে, পুরুষের দৃষ্টি   লেহন করছে মেয়ে মানুষের নগ্ন লাশ; জল থেকে   ডা ঙ্গায় তোলা হয়েছে লাশ,  ভীড়  এগিয়ে গিয়ে ছেঁকে  ধরে  লাশ; " চেনা চেনা  লাগে এ তো  কুুসুম,
খাল পারের খানকী পাড়ায় বাস।
"  না না না, দূর এই মেয়েটা  বাবু পাড়ার ঝিনুক,
পরশু রাতেও দেখলাম  বাইকের পেছনে বসে জাপটে  জড়িয়ে  ধরে আছে-"
" ছোঁড়াটা  কে  ছিল ঘুড়ো ?

 ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক  তাকিয়ে  ঢোক গিলে আমতা আমতা স্বরে বলে, রাতের  অন্ধকারে  ঠিক  ঠাওর  হলো না, চার কুড়ি এ বয়সে !"

 অন্য  এক জন লাশের  খুব  কাছে গিয়ে, হ্যা ! আমি  ঠিক  ধরেছি, এই তো শর্বানী,
অমল বাবুর বাপ  মা  মরা ভাগ্নী !

" ভীড় ঠেলে এগিয়ে এলেন এক সৌম্য বদ্ধৃ নিজের পাট করা  সাদা  উত্তরিও  যত্নে  বিছিয়ে দিলেন লাশের উপর, ঢাকা পড়ল; মেয়ে  মানুষের নগ্ন লাশ।

বৃদ্ধের প্রতি  সম্ভ্রমে  শ্রদ্ধায় নত মস্তকে  নীরবে  কুর্ণিশ  জানালো  অনেকে।

পুলিশ  ভ্যানের  সশব্দে, সদর্পে  আগমন  বার্তার আওয়াজ  শুনে সবাই শুয়েরের  শাবকের মতন  দৌড়ে  পালালো।
এক কিশোর গাছের আড়াল  থেকে চোখের জল  ফেলে ঝাপসা দৃষ্টি  মেলে
গভীর  মর্মবেদনায় তাঁর হারিয়ে যাওয়া চিরদিনের মতো দিদিকে লুকিয়ে দেখছে।
গত মাসে টিউশানী করে ফেরার পথে দিদিভাইয়ের সাথে  ছিল সেদিনের ঘটনা কী চরম লাঞ্ছনা, ভাইকে লাথি মারতে মারতে দূরে ঠেলে দিলো।

তারপর মেতে উঠলো এক পৈশাচিক আনন্দে, ময়নার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নির্যাতনের ক্ষত বিক্ষত,  হঠাৎই পুলিশের  টহলদারি ভ্যানের
সিরাতের মতো রেহাই পেয়ে ছিল ময়না, ছোট ভাইয়ের চোখে সে  রাতের ক্রোধে জ্বলছিল দৃষ্টি---
কিন্তু  আজ বাপিনের প্রতিশোধের  আগুনে জ্বলছে,  দ্বিগুন !
আবার বাপ  মায়ের বারন করা সত্ত্বেও বাপিনের  প্রতিশোধের অগ্নি শিখা লক লক হৃদয়ে জ্বলছে।
আবার হাতে অস্ত্র বাসনা মনে  প্রবল হয়ে ওঠে,  শুধু সুযোগের অপেক্ষায়।

No comments:

Post a Comment