Friday, 8 March 2019

গদাধরের গুণকীর্তন ছোটদের নাটিকা।

শ্রী রামকৃষ্ণারামকৃষ্ণ নমঃ

গদাধর গদাইর গুন কীর্তন

সঙ্গীত আলেখ্য এ শিশু নাট্যভিনয়

দৃশ্য গুলি
1) জন্ম গ্রহণ
2)  শৈশবে নৃত্য ও সঙ্গীত
3) লালা  বাবুদের  পাঠশালা
লালা  বাবুদের সাধু নিবাসে এ গদাই

4) মানিক আম বাগানে গদাইর সঙ্গি দের নিয়ে নাট্যভিনয় কিরাট মাঝির সর্ত সে রামচন্দ্রেরামচন্দ্র পদ যুগল পুজো করে।
5) হরিশ চন্দ্র রাজা চণ্ডালের কাছে নিজেকে বিক্রি করেন, বিশ্ব মিত্র মুনির দক্ষিণা সংগ্রহের জন্য।
6) ধান ক্ষেতের আলের উপর দিয়ে গান গাইতে গাইতে হঠাৎ এক অপূর্ব দৃশ্য দেখেন মেঘে গর্জন শুনে মেঘলা আকাশে এক ঝাঁক বক উড়ে যাচ্ছে কৃষ্ণ বর্ণের মেঘ দেখে যেন কৃষ্ণ সঙ্গীতে সুরে গভীর ভাবে ভাবাচ্ছন্ন সমাধিস্থ হয়ে গেলেন।

7)গ্রামের প্রতিবেশীর বাড়িতে গদাই নৃত্য ও সঙ্গীতের মাধ্যমে গ্রামের মহিলাদের আনন্দ দান করছেন। মহিলারা গদাই কে কোলে বসিয়ে আদর করে ননী মাঘন মিষ্টান্ন খাওয়াতে 
ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
8) শিব রাত্রে গদাই শিব সেজে ধ্যানস্থ গদাই কে ঘিরে শিব বন্দনা ও শিব সঙ্গীত

9)

ধারাভাষ্য
  নেপথ্যে অথবা ---
সূত্রধর একজন ঘোষকের ভূমিকায় এক জন প্রবেশ  করে এক পাশে দাঁড়িয়ে বলিষ্ঠ কন্ঠ আকাশ বাণী স্বরূপ  তার কন্ঠে সংলাপ----  শোনা যায় আবৃত্তি --ছন্দে

স্বামী বিবেকানন্দ--
- সকল বেদের জ্ঞান একত্র হইয়া
   মিশিয়াছে রামকৃষ্ণ- হৃদয়ে আসিয়া।
   ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব আদি সব দেবতার
  শকতি মিশেছে এসে শকতিতে তাঁর।  
  সব অবতার যেন এক দেহ ধরি --
  এসেছেন রামকৃষ্ণ-- রূপে অবতারি।
   অমৃতের পূর্ণ পাত্র যেন নিয়া --
    আসিয়াছে রামকৃষ্ণ - মূরতি ধরিয়া
    নমি সবাইরে স্মরি শ্রীগুরু - চরণ, 
    সুধাপাণ তরে সেথা করি আমন্ত্রণ।

বৈরাগীর গান গাহিতে গাহিতে প্রবেশ---

আজি প্রেমানন্দে মনে রে  গাহ রামকৃষ্ণ নাম
গাহ রামকৃষ্ণ নাম  জপ রামকৃষ্ণ নাম
নাম সুধা পানে রহ মত্ত অবিরাম।
কামার পুকুর ( ধন্য ) হলো পুণ্য ব্রজধাম, 
সাগর লয়ে খেলে লীলা অভিরাম; 
--- নমো নমো চন্দ্রা দেবী নমো ক্ষুদিরাম, 
কৃপায় মা জননী হল গো প্রণাম।

সূত্রধর এর ঘোষণা----

যদা যদা হি  ধর্মস্ব--- যখন ধর্মে গ্লানি ও কলুষতা, মানুষের  মধ্যে ধর্ম বোধ লোভ পায়, অধর্ম, কুসংস্কার, অত্যাচার থেকে ভালো তবে উদ্ধার করতে, তখন স্বয়ং বিষ্ণু ভগবান অবতার রূপে এই বিশ্বে আবির্ভূত হয়ে দুষ্টের  দমন  ও সৃষ্টের পালন ও উদ্ধার  করতে তিনি তাঁর রামকৃষ্ণের ফৌজ মানসপুত্র দের নিয়ে আবির্ভূত হয়ে ছিলেন, এক মাত্র তাঁর  অস্ত্র ছিল শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের মানব প্রেম,  বিশ্বের শিক্ষক স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ ছিলেন LOVE --Love personified, প্রেম ভালবাসার জমাট মূর্তি। বৃটিশ আমলে একদিকে পাদ্রীদের ধর্ম প্রচার,  ধর্মান্তকরণ, ইংরেজির কুশিক্ষা, সনাতন হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামি,  ভাতের হাঁড়ি ছোঁয়া ছুঁই, হিন্দু ধর্মের গোষ্ঠী দ্বন্দ, তৎকালীন যুবসমাজ  ব্রাহ্ম সমাজে দলে দলে আকৃষ্ট হয়ে, সনাতন হিন্দু ধর্মে অনীহা,  কিন্তু ঐ সমাজের গোষ্ঠী বিভাজনের স্মৃতির অতলে অস্তগত। যুগ সন্ধিক্ষণে এক যুগ অবতার অবতরণ করলেন তাঁর অদ্ভুত সব ক্ষমতা সম্পন্ন সন্তান স্বরুপ বারজন শিষ্য গন সহ।

নেপথ্যে----সপার্ষদ সূত্রে
--শ্রী রামকৃষ্ণ স্তোত্রম-----সর্বধর্ম স্থাপক-----কতটা-পাঠ ? ( তা  মহারাজা নির্দেশ মত হবে।)

গান গাইতে গাইতে এক বৈরাগীর প্রবেশ--- 
কে ঐ আসিলরে কামার পুকুরে পুলকে নাচিয়া উঠে প্রাণ।
দুঃখ নিশা কাটিল সুখবর হাসিল গগনে উঠিল গান।। ( মহারাজা নির্দেশে কতটা গাওয়া হবে।)

সূত্রধর ঘোষক---
ধর্ম প্রাণ ক্ষুদিরাম নিষ্ঠাবান অতি
সরল উদার - প্রাণ,  ধর্মে সদা মতি।
তুলিত পুজোর ফুল যখন প্রভাতে
দেখিত শীতলাদেবী ফেরে তাঁর সাথে।।

অন্য এক ঘোষক--
দেরে গ্রামে বিশাল বসত বাড়ি,  দেড়শ বিয়ে চাষের জমি বাগান পৈত্রিক বাসভূমি বল পূর্বক উৎখাত হয়েছিলেন, জন্মভূমির মায়া,  শিকড়ের টান ছিঁড়ে ভগ্ন প্রাণে হৃদয়ের ব্যথা     বেদনা ঈশ্বরের দান এই জ্ঞানে, বিষন্ন  না হয়ে  সব সহে ক্ষুদিরাম রঘুবীরের ভরসায় চলেছেন---

বৈরাগীর প্রবেশ গান গাইতে গাইতে---

জুড়াইতে চাই --কোথায় জুড়াই
কোথা হতে আসি কোথা ভেসে যাই।
ফিরে ফিরে আসি কত কাঁদি হাসি, 
কোথা যাই সদা ভাবি গো তাই।

ঘোষক--
চল্লিশ বছর বাস করার পর অত্যাচারী জমিদার রামানন্দ রায় মিথ্যা মামলায় সাক্ষী দিতে বলেন কিন্তু সত্যবাদী ক্ষুদিরাম মমিথ্যা সাক্ষী দিতে রাজি না হওয়ায়,  জমিদার জোর করে দেরে গ্রামের ভিটা মাটি ছেড়ে  এই কামারপুকুরে   সুখলাল গোস্বামীর সাদর আহ্বানে ওনার দেওয়া বসত বাড়ি, সামান্য  লক্ষী জলা চাষে জমি পেয়ে  -রঘুবীরের ও মা শীতলাদেবী পুজো পাঠ, নিত্য সেবা আর যজমান গিরি করে  মহা আনন্দে   ক্ষুদিরাম, সহধর্মিণী চন্দ্রা (বতী ) দেবী পুত্র রামকুমার, কন্যা কাত্যায়নী সহ বাসকরছেন।

অন্য আর এক জন ঘোষক--   

দেরে ( গ্রাম ) হতে জমিদার তাড়াইয়া
বন্ধুগৃহে ক্ষুদিরাম আশ্রয় পাইল।
কামার পুকুর গ্রামে চালা ঘরে আসি
উ শ্রী রামকৃষ্ণারামকৃষ্ণ নমঃ

গদাধর গদাইর গুন কীর্তন

সঙ্গীত আলেখ্য এ শিশু নাট্যভিনয়

দৃশ্য গুলি
1) জন্ম গ্রহণ

2)  শৈশবে নৃত্য ও সঙ্গীত

3) লালা  বাবুদের  পাঠশালা

4)লালা  বাবুদের সাধু নিবাসে এ গদাই

5) মানিক আম বাগানে গদাইর সঙ্গি দের নিয়ে নাট্যভিনয় কিরাট মাঝির সর্ত সে রামচন্দ্রেরামচন্দ্র পদ যুগল পুজো করে।

6) হরিশ চন্দ্র রাজা চণ্ডালের কাছে নিজেকে বিক্রি করেন, বিশ্ব মিত্র মুনির দক্ষিণা সংগ্রহের জন্য।

7)ধান ক্ষেতের আলের উপর দিয়ে গান গাইতে গাইতে হঠাৎ এক অপূর্ব দৃশ্য দেখেন মেঘে গর্জন শুনে মেঘলা আকাশে এক ঝাঁক বক উড়ে যাচ্ছে কৃষ্ণ বর্ণের মেঘ দেখে যেন  সঙ্গীতে সুরে গভীর ভাবে ভাবাচ্ছন্ন সমাধিস্থ হয়ে গেলেন।

8)গ্রামের প্রতিবেশীর বাড়িতে গদাই নৃত্য ও সঙ্গীতের মাধ্যমে গ্রামের মহিলাদের আনন্দ দান করছেন। মহিলারা গদাই কে কোলে বসিয়ে আদর করে ননী মাঘন মিষ্টান্ন খাওয়াতে 
ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

9) শিব রাত্রে গদাই শিব সেজে ধ্যানস্থ গদাই কে ঘিরে শিব বন্দনা ও শিব সঙ্গীত

10) চিনু  সাঁকারি বট গাছের তলায় গদাইকে পুজো করছে।

চরিত্র লিপি

ক্ষুদিরাম, চন্দ্রা দেবী, গদাই,  ছয় জন বন্ধু,  দশ জন গ্রামের লোক, পন্ডিত মশাই,  গ্রামের চার জন মহিলা,  চিনু, বিষ্ণু,  বন্ধুরা।

ধারাভাষ্য
  নেপথ্যে অথবা ---
সূত্রধর একজন ঘোষকের ভূমিকায় এক জন প্রবেশ  করে এক পাশে দাঁড়িয়ে বলিষ্ঠ কন্ঠ আকাশ বাণী স্বরূপ  তার কন্ঠে সংলাপ----  শোনা যায় আবৃত্তি --ছন্দে

স্বামী বিবেকানন্দ--
- সকল বেদের জ্ঞান একত্র হইয়া
   মিশিয়াছে রামকৃষ্ণ- হৃদয়ে আসিয়া।
   ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব আদি সব দেবতার
  শকতি মিশেছে এসে শকতিতে তাঁর।  
  সব অবতার যেন এক দেহ ধরি --
  এসেছেন রামকৃষ্ণ-- রূপে অবতারি।
   অমৃতের পূর্ণ পাত্র যেন নিয়া --
    আসিয়াছে রামকৃষ্ণ - মূরতি ধরিয়া
    নমি সবাইরে স্মরি শ্রীগুরু - চরণ, 
    সুধাপাণ তরে সেথা করি আমন্ত্রণ।

বৈরাগীর গান গাহিতে গাহিতে প্রবেশ---

আজি প্রেমানন্দে মনে রে  গাহ রামকৃষ্ণ নাম
গাহ রামকৃষ্ণ নাম  জপ রামকৃষ্ণ নাম
নাম সুধা পানে রহ মত্ত অবিরাম।
কামার পুকুর ( ধন্য ) হলো পুণ্য ব্রজধাম, 
সাগর লয়ে খেলে লীলা অভিরাম; 
--- নমো নমো চন্দ্রা দেবী নমো ক্ষুদিরাম, 
কৃপায় মা জননী হল গো প্রণাম।

সূত্রধর এর ঘোষণা----

যদা যদা হি  ধর্মস্ব--- যখন ধর্মে গ্লানি ও কলুষতা, মানুষের  মধ্যে ধর্ম বোধ লোভ পায়, অধর্ম, কুসংস্কার, অত্যাচার থেকে ভালো তবে উদ্ধার করতে, তখন স্বয়ং বিষ্ণু ভগবান অবতার রূপে এই বিশ্বে আবির্ভূত হয়ে দুষ্টের  দমন  ও সৃষ্টের পালন ও উদ্ধার  করতে তিনি তাঁর রামকৃষ্ণের ফৌজ মানসপুত্র দের নিয়ে আবির্ভূত হয়ে ছিলেন, এক মাত্র তাঁর  অস্ত্র ছিল শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের মানব প্রেম,  বিশ্বের শিক্ষক স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ ছিলেন LOVE --Love personified, প্রেম ভালবাসার জমাট মূর্তি। বৃটিশ আমলে একদিকে পাদ্রীদের ধর্ম প্রচার,  ধর্মান্তকরণ, ইংরেজির কুশিক্ষা, সনাতন হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামি,  ভাতের হাঁড়ি ছোঁয়া ছুঁই, হিন্দু ধর্মের গোষ্ঠী দ্বন্দ, তৎকালীন যুবসমাজ  ব্রাহ্ম সমাজে দলে দলে আকৃষ্ট হয়ে, সনাতন হিন্দু ধর্মে অনীহা,  কিন্তু ঐ সমাজের গোষ্ঠী বিভাজনের স্মৃতির অতলে অস্তগত। যুগ সন্ধিক্ষণে এক যুগ অবতার অবতরণ করলেন তাঁর অদ্ভুত সব ক্ষমতা সম্পন্ন সন্তান স্বরুপ বারজন শিষ্য গন সহ।

নেপথ্যে----সপার্ষদ সূত্রে
--শ্রী রামকৃষ্ণ স্তোত্রম-----সর্বধর্ম স্থাপক-----কতটা-পাঠ ? ( তা  মহারাজা নির্দেশ মত হবে।)

গান গাইতে গাইতে এক বৈরাগীর প্রবেশ--- 
কে ঐ আসিলরে কামার পুকুরে পুলকে নাচিয়া উঠে প্রাণ।
দুঃখ নিশা কাটিল সুখবর হাসিল গগনে উঠিল গান।। ( মহারাজা নির্দেশে কতটা গাওয়া হবে।)

সূত্রধর ঘোষক---
ধর্ম প্রাণ ক্ষুদিরাম নিষ্ঠাবান অতি
সরল উদার - প্রাণ,  ধর্মে সদা মতি।
তুলিত পুজোর ফুল যখন প্রভাতে
দেখিত শীতলাদেবী ফেরে তাঁর সাথে।।

অন্য এক ঘোষক--
দেরে গ্রামে বিশাল বসত বাড়ি,  দেড়শ বিয়ে চাষের জমি বাগান পৈত্রিক বাসভূমি বল পূর্বক উৎখাত হয়েছিলেন, জন্মভূমির মায়া,  শিকড়ের টান ছিঁড়ে ভগ্ন প্রাণে হৃদয়ের ব্যথা     বেদনা ঈশ্বরের দান এই জ্ঞানে, বিষন্ন  না হয়ে  সব সহে ক্ষুদিরাম রঘুবীরের ভরসায় চলেছেন---

বৈরাগীর প্রবেশ গান গাইতে গাইতে---

জুড়াইতে চাই --কোথায় জুড়াই
কোথা হতে আসি কোথা ভেসে যাই।
ফিরে ফিরে আসি কত কাঁদি হাসি, 
কোথা যাই সদা ভাবি গো তাই।

ঘোষক--
চল্লিশ বছর বাস করার পর অত্যাচারী জমিদার রামানন্দ রায় মিথ্যা মামলায় সাক্ষী দিতে বলেন কিন্তু সত্যবাদী ক্ষুদিরাম মমিথ্যা সাক্ষী দিতে রাজি না হওয়ায়,  জমিদার জোর করে দেরে গ্রামের ভিটা মাটি ছেড়ে  এই কামারপুকুরে   সুখলাল গোস্বামীর সাদর আহ্বানে ওনার দেওয়া বসত বাড়ি, সামান্য  লক্ষী জলা চাষে জমি পেয়ে  -রঘুবীরের ও মা শীতলাদেবী পুজো পাঠ, নিত্য সেবা আর যজমান গিরি করে  মহা আনন্দে   ক্ষুদিরাম, সহধর্মিণী চন্দ্রা (বতী ) দেবী পুত্র রামকুমার, কন্যা কাত্যায়নী সহ বাসকরছেন।

অন্য আর এক জন ঘোষক--   

দেরে ( গ্রাম ) হতে জমিদার তাড়াইয়া
বন্ধুগৃহে ক্ষুদিরাম আশ্রয় পাইল।
কামার পুকুর গ্রামে চালা ঘরে আসি
উঠিলেন ক্ষুদিরাম,  মুখে তবু হাসি।

ক্ষুদিরাম পরণে ধুতি, গলায় তুলসী মালা মোটা পৈতা হাতে থলিতে জপের মালা  তাঁর বসত বাড়ীর দাওয়া য় বসে দু চার জন গ্রামের বৃদ্ধ ও বয়স্ক সাথে কথোপকথন।

জনৈক বৃদ্ধ-- ক্ষুদিরাম একটা প্রশ্ন ছিল ভাই, যদি অভয় দাও তো বলি ?

ক্ষুদিরাম-- কাকা, অসত্য বা অপ্রিয় না হয় তো বলতে পারেন ! এক মাত্র সত্য আর আমার রঘুবীরের সেবায় নিয়োজিত আছি !

বৃদ্ধ--- তুমি কত  বড় সত্যনিষ্ঠ, ন্যায়  পরায়ণ এই কামার পুকুর শুধু নয়, দশ গাঁয়ের লোক জন সবাই জান।কিন্তু ঐ একটা  কথা জানার জন্য ভীষণ কৌতুহল হচ্ছে ভাই।

ক্ষুদিরাম- ( স্মৃত হেসে ) বেশ আপনাকে অভয় দিলাম ! বলুন কি জানতে চান ?

বৃদ্ধ-- তুমি এক বছর ধরে  বহু কঠোর পরিশ্রম করে পদ যাত্রায় জঙ্গল নদী পেরিয়ে সেই বহু ক্রোশ পথ পায়ে হেঁটে সুদূর তীর্থ যাত্রা করেছিলে।

আর এক বৃদ্ধ---সত্যই ভাবা যায় না, কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব-- সেই দক্ষিণ ভারতের শেষ প্রান্তে রামেশ্বর এ শ্রী রামচন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত  দ্বাদশ শিব লিঙ্গের এক লিঙ্গ দর্শন করে বহু জন্মের র্পূণ্য এ  রামেশ্বর দর্শন ও অভিষেক পুজো করেছো নিজের হাতে।

ক্ষুদিরাম-- আমি তো অতি ক্ষুদ্র জীব ! এ সবই রঘুবীরের অশেষ কৃপায়। হাতে জপে মালা

ওপর বৃদ্ধ--- সেই অমর পূণ্য এ ফলে আবার পায়ে হেঁটে হাজার ক্রোশ পথ পেরিয়ে গিয়ে ছিলে গয়াধামে  স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু দেবের পরম ভক্ত তোমার দীর্ঘদিনের তপস্যা বলে এবং প্রবল নিষ্ঠার সাথে পুজো করেছিলে বহুদিন ধরে পুজোয় সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ করেছে ছিলেন, যে  তিনি তোমার পুত্র রূপে জন্ম নেবেন তোমার ঘরে।

ক্ষুদিরাম---স্বপ্নাদেশ পেয়ে ছিলাম ! এবার সবই রঘুবীরের লীলাখেলা।

সমবেত সঙ্গীত   " এসেছে এক নূতন মানুষ দেখবি যদি আয় চলে,
( তাঁর ) বিবেক- বৈরাগ্য ঝুলি দুই কাঁধে সদা ঝুলে।।
শ্রীবদনে মা মা বাণী পড়ি গঙ্গা সলিল, 
বলে  ব্রহ্মব্রহ্ম,  গেল মা দিন দেখা ত নাহি দিলে।

ঘোষক সূত্রধর---ফুলে ভরা তরু শাখা পাখী গায় গান,
রামকৃষ্ণ রূপ ধরে এল ভগবান। জন্মিয়াই দেবশিশু উনুনে ঢুকিয়া
শিব সেজে হাসে গায়ে বিভূতি মাখিয়া।

গান--
  কাজী নজরুল ইসলাম-
পরম গুরু সিদ্ধ যোগী মাতৃ ভক্ত যুগাবতার।
পরমহংস শ্রী রামকৃষ্ণ হল প্রণাম  নমস্কার।
জাগালে ভারত শ্মশান তীরে, অশিব নাশিনী মহাকালীরে;
মাতৃ নামের অমৃত নীচে ভাসালে নিজ ভারত  আবার ।।
সত্য যুগের পুণ্য স্মৃতি, আনিলে কলিতে তুমি তাপস,
পাঠালে ভারত দেশে দেশে ঋষি -- পুণ্য-- তীর্থ-- বারি- কলস।
মন্দিরে মসজিদে গীর্জায়, পূজিলে ব্রহ্মে সম শ্রদ্ধায়,
তব নাম মাখা প্রেম নিকেতন,  ভরিয়ে তাই ত্রিসংসার।।

সূত্রধর---
1836 সালে 17  ফেব্রুয়ারী    এক পূণ্য লগ্নে বুধবার ক্ষুদিরাম চ্যাটার্জি ঠেঁকিশালে- আঁতুর ঘরে ভোর বেলায় ধনী কামারিনী হাতে জন্ম গ্রহণ করলেন হত দরিদ্র এক পরম নিষ্ঠাবান, শ্রীরামচন্দ্র রঘুবীরের সত্যনিষ্ঠ উপাসকের পর্ণ কুঠিরে, বেজে উঠল মঙ্গল শঙ্খ, উলুধ্বনি, কামারপুকুরে গ্রামবাসীরা, কুল বধূরা ছুটে আসলেন  --দেবশিশু দর্শনে-- এদিকে এক আশ্চর্য কান্ড ধনীদাই খুঁজে কোথাও পায়না কোথায় গেল সেই স্বর্ণ বর্ণের দেব শিশু,  প্রদীপের আলোয় শেষে শিশুটিকে খুঁজে পান ধান সেদ্ধ করার নিভানো চুলা বা উনুন ছাই ভস্ম মেঘে আনন্দে হাসছেন শিশুটি।

রামকৃষ্ণ পূঁতি পাঠ

নেপথ্যে গান--দুখিনী  ব্রাহ্মণী কোলে কে শুয়েছ আলো করে,
করে ওরে দিগম্বর এসেছ কুটির ঘর।।

সমবেত সঙ্গীত---
দলে দলে প্রতিদিন গ্রামে মহিলাগণ দেবশিশু দর্শনে  নানাবিধ খাদ্য সামগ্রী, ফল নিয়ে আসেন মাতা  চন্দ্রাবতী বলেন কি করবো বল --তোর  গদাই আমাদের আমাদের প্রাণের ধন, ওকে না দেখে থাকতে পারি না ভাই !

শিশু গদাই পায়ে নুপুর বেঁধে নৃত্য করছেন সমবেত ভজন সঙ্গীতের সাথে গ্রামের মহিলারা নৃত্য করছে।
গান--
ঠুমকি চলত রামচন্দ্র বাজত পৈঁজনিয়াঁ।।কিলকি কলকি উঠত ধায়,  গিরত ভূমি লটপটায়, ধায় মাতুল গোদ লেজ দশরথ কী রনিয়াঁ ।।----

অথবা-  গান--ধিয়া তা ধিয়া ধিয়া নাচের গদাই।
  যে নাচে ভুলায়ে ছিলে যশোমতী মাঈ।
চন্দ্রমনি মাকে ঘিরিয়া ঘিরিয়া, হেলিয়া দুলিয়া নাচে আঁচল ধরিয়া।
চন্দ্র বদনে তোর হাসিটি, হারিয়া নিমিষে সকল দুঃখ পাসরিয়া, যাই।

সূতরধর--ধনী হবে ভিক্ষে মাতা, গদাই ধরল বায়না, 
                 বকলে সবাই কান্ড দেখে, জেদ তবু তার যায় না।
                 শেষে সবাই যুক্তি করে বললে, " হবে  তাই" ;
                 ধনীর তখন আনন্দ আর রাখার ঠাঁই যে নাই।

দিনের বেলা ধনী কামারিনীর দাওয়া তে আসনের উপর বসে গদাই, ধনী বিভিন্ন মিষ্টি,  ফল থাকায় সাজিয়ে দিয়েছে, ভক্তিমতী গদাইর দাইমা ধনী
ধনী-- বাবা গদা ই তোমায় একটি কথা বলবো  ?
গদা ই -- বলো মা !
ধনী --আমার বড় সাধ বাবা
গদা ই-- কি সাধ মা ?
ধনী -- বাবা উপনয়নের সময় আমি যদি তোমার ভিক্ষা মা হই ! এ আমার বহুদিনের বাসনা বাবা,
গদা ই-- নিশ্চয়ই তুমি হবে আমার ভিক্ষা মা, তুমি আমাকে প্রথম পৃথিবীর আলো দেখেছো,  এ তোমার অধিকার,  মাগো তোমাকে কথা দিলাম তুমি হবে নিশ্চিত আমার ভিক্ষা মা। অন্যথা হবে না।
ধনী-- তুমি -তুমি কথা দিলে? ধন্য এ জীবন,  তুমি  কৃপা সিন্দু, মা শেতলা, ধর্ম ঠাকুর তোমার মঙ্গল করুন।

পরের দৃশ্য- মঞ্চের পেছনে  সাদা পর্দা মেঘের মাঝে - আকাশে এক দল সারি সারি বক  উড়ে যাচ্ছে,  ক্ষেতে উপর আল এর পথ ধরে গদা ই কোটরা থেকে মুড়ি খেতে হাঁটছে,  নেপথ্যে রবীন্দ্র সঙ্গীত ভেসে আসে --" আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে -----
মেঘের গর্জনে আকাশে তাকিয়ে দেখে উড়ে যাওয়া বকের দল---
গদা ই হঠাৎ অচৈতন্য হয়ে সমাধিস্থ হয়ে যায়। কিছু পরে গ্রামের  ছুটে  ব্যস্ত  হয়ে তাকে কোলে নিয়ে চলে যায়।

পরের দৃশ্য

লাহান মহাশয় দের বাড়ির আঙিনায় পাঠ শালা, অনেক ছাত্রদের গদা ই ধারাপাত সমস্বরে মুখস্ত করছে। কিন্তু গদা ই অন্যমনস্ক  হয়ে যাচ্ছে।
গুরু মশাই --গদা ই !   এই গদা ই  কি হলো  তোর ?
গদা ই ---- আঙগেঃ  আমাকে  বলছেন ?
গুরু মশাই-- আচ্ছা  মনে কর
গদা ই-- মনে করবো ? মনে ! মনে কি করবো পন্ডিত মশাই কি করবো !

গুরু মশাই---ধর তোমাকে চার গন্ডা আম দিলাম,

গদা ই-- চার গন্ডা ---   চার গন্ডা--
গুরু মশাই--- এখন তোমার  ঐ চার  গন্ডা  থেকে  চারটি আম নিয়ে নিলাম --- তোমার কাছে কত গুলি আম তাহলে থাকবে ?

গদা ই --- চারটি টি আম --- চারটি - ( মাথা চুলকে থাকে, অসহায় অবস্থায় এদিক  ওদিক তাকিয়ে থাকে )
গুরু মশাই--কি  হলো গদা ই ?

গদা ই-- না , না, পন্ডিত মশাই আপনার ঐ দেওয়া নেওয়ার মধ্যে আমি নেই । আমাকে বিদায় দিন।

পরের দৃশ্যে
প্রতিবেশী বাড়ীর উঠোন।

গ্রামের এক বাসিন্দা- --( হুঁকো সেবন করতে  করতে ) বলছেন  সমবেত গ্রাম বাসীদের- ঐ গদা ই  যে ভাবে ছোড়া টা ভদ্রলোকের বাড়ির অন্দর মহলে  ঢুকে  মহিলাদের নাচ গান শোনাচ্ছে ! না  না এ ঠিক নয়,  ---!

অপর এক জন --কিন্তু  কর্তা  গদা ই তো ঈশ্বরের  স্তব -রাধা -কৃষ্ণ প্রেম   লীলা - মান ভঞ্জন

গৃহস্বামী-- না  না না  ও সব  লীলা খেলা --মান   ভঞ্জন এ  আমার  বাড়িতে চলবে না !

গদাই গ্রাম্য বঁধু হাতে শাক সবজি চুবড়ী কাঁধে নিয়ে,    বেশে শাড়ি পরে মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে গলা নকল করে প্রবেশ করে চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

গৃহস্বামী ---হাঁগো  ও  মেয়ে --- কি হয়েছে -- কি  হলো ?

(  গদাই চুপ করে দাঁড়িয়ে শুধু  নাকি সুরে  কাঁদছে----!)

গৃহস্বামী -- ওহে  তোমরা দেখো --আহ  কাঁদছে কেন ?

সবাই  একে   একে জিগায় কি হয়েছে --- কোথা হতে আসছো ---

গদা ই--  (  কেঁদে কেঁদে বলে  ) দূরের গাঁয়ে  থেকে হাটে  শাক সবজি বেজতে এসেছিলুম,  পথ হারিয়ে ফেলেছি ---এখন সন্ধ্যা বেলা  !  এতটা পথ কি করে ফিরবো ! ( আবার কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে।)

গৃহস্বামী --- (  উঠে এসে ) আহা  হা তা বাছা এত উতলা হওয়ার  কি আছে ? এ  গাঁয়ের একটা ঐতিহ্য আছে, এখন  ঘোর   কলি কাল ! নারীদের সন্মান শ্রদ্ধা,  মানুষ ভাবতে হবে  ! কলি  কালেও এক গ্রামে  নারীকে মাতৃ   জ্ঞানে প্রতিটি গ্রাম বাসী দেখে, হেঁ  হেঁ  বাবা !  এই হচ্ছে সেই   কামার পুকুর এখানে মহাপ্রাণ, ক্ষুদিরাম চ্যাটার্জি বাস  করতেন ! নিষ্ঠা বান তিনি ছিলেন ---
রাম ভক্ত রঘুবীর তাঁর সাথে থাকতেন !  মা শেতলা  ছোট্ট মেয়ে হয়ে ক্ষুদিরামের  সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতেন।

ওরে আছিস এ মেয়ে টিকে অন্দর মহলে নিয়ে যা !

মেয়ে --(  গদাই র হাত ধরে -- ঘোমটা সরিয়ে দিয়ে আনন্দে চিৎকার করে ওঠে  )  - ও  বাবা এ তো আমাদের গদাই !

গদাই --- ( নাচতে নাচতে গেছে ওঠে )     " আমি রঙময়ীর,  রঙ দেখে অবাক হয়েছি ----!"

8) 
   সূত্রধর----গদাই যে শিব সেজে জটা জূট পরে !
                মনে হচ্ছে শিবই নিজে এলেন আসরে।
                 ও  কি  হলো ! শিবের ধ্যানে হুঁশহুঁশ নাকো তাঁর।

শিব রাত্রে গদাই শিব সেজে ধ্যানস্থ গদাই কে ঘিরে শিব বন্দনা ও শিব সঙ্গীত
গদাইর পরণে বাঘ ছাল, মাথায় জটা, এক হাতে ডমরু অন্য হাতে ত্রিশূল,  গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, রাবারের সাপ গায়ে জড়িয়ে আছে।শিবের রূপ সজ্জায় গদাইকে  অপূর্ব সুন্দর লাগছে। নন্দী ভিঙ্গি বহু বালক নানা ভুতের প্রেতের বেশে শিব বেদনা করছে সমবেত স্বরে কন্ঠে--

প্রভু মীশ মনীশ শেষে গুণং , গুণহীন মহীশুর গরিণম।--------------###

প্রণাম  নমঃ শিবায় শান্তায়, ------------সমবেত সঙ্গীত সহযোগে নৃত্য দল বেঁধে বালক গাণের সাথে  ---তাথৈয়া তাথৈয়া নাচে ভোলা, বম বব বাজে গাল
               ডিমি ডিমি ডমরু বাজে, দুলিছে কপাল মাল।।--------

অন্য আর এক দল নৃত্য করতে গান গাইতে পরিবেশ করলো,
নৃত্য ও দলবেঁধে নাচতে নাচতে গান গহিছে---
" -প্রলয় নাচন নাচলে যখন আপন ভুলে
হে নটরাজ! জটা বাঁধন পড়ল খুলে।।
জাহ্নবী তাই মুক্ত ধারায়, উন্মাদিনী দিশা হারায়।-----""

অন্য----  দৃশ্য

গদাধরের   গুন  কীর্তন

শ্যামল সোম।

মঞ্চে জল চৌকি উপর ফুলের মালা দিয়ে সাজানো    শ্রী রাম সীতা ও লক্ষণ এর ছবির সামনে বসে একজন পুজো করছেন। এই এখন দৃশ্য টি--

কামার পুকুরে লাহা মহাশয়ের  সাধু নিবাসে সাধুদের মধ্যে একজন সাধু  খুনঞ্জুনী বাজাচ্ছেন ,  একজন সাধু ঢোলক বাজাচ্ছেন, অন্য একজন গাহিছেন-----

" সীতাপতি  রামচন্দ্র,  রঘু পতি  রঘু রাই।
ভজ লে অযোধ্যা নাথ দূসরা  ন কোই।।
রসনা রস নাম লেত,  সন্তন কো দরস দেত।---গান চলছে-"

গদাইয়ের প্রবেশ করে হাতে জল ভর্তি পিতলের বালতি নিয়ে--বালতি রেখে দিয়ে। কাঠ গুলো কাঠারী দিয়ে কাটতে থাকে আর গান শুনতে থাকে।

গান শেষ হলে গদাইয়ের কাছে গিয়ে সাধু হাত ধরে কাছে ডেকে বসায়। অন্য একজন সাধু  প্রসাদের থালা থেকে মিঠাই খাওয়াতে থাকেন 
সাধু -- লে বেটা খা লে তু হামারা বাল গোপাল ( হাসতে হাসতে খাওয়াচ্ছেন )
অন্য সাধু-- জী নঁহী  জী গদাই মেরে রাম লালা  হ্যায় ! 
অন্য সাধু --( পিতলের গ্লাসে জল খাওয়ার এর পর পরম যত্নে মুখ মুছিয়ে দেন। )

অন্য সাধু -- গদাইয়ের পরণের ধুতি  খুলে বা ছিঁড়ে  সেই দু টুকরো কাপড় থেকে এক টুকরো দিয়ে লেঁঙ কটের মতো পরিয়ে দেন, অন্য কাপড়ের টুকরো 
                     দিয়ে পাগড়ী বেঁধে দেন।
অন্য সাধু হাতে পিতলের  হাড়িতে  প্রসাদ রেঁধে এনে প্রবেশ করেন। সবাই ব্যস্ত হয়ে যান কেউ প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন। কেউ ধূপ দানি তে ধূপ জ্বালান।
বিভিন্ন পিতলের থালায় খিচুড়ি পরিবেশন করেন ঐ রাম সীতা লক্ষণ এর ছবির সামনে রেখে এক সাধু পঞ্চ প্রদীপ নিয়ে আরতি করছেন।
সবাই হাত জোড় করে সমবেত ভাবে গাহিছেন---  "  প্রেম মুদিত মন সে কহো রাম রাম রাম /  শ্রী রাম রাম রাম, শ্রী রাম রাম রাম ----"
মঞ্চের  আলো নিভে যায়

অন্য দৃশ্য
গদাধরের   গুন  কীর্তন

শ্যামল সোম।

মঞ্চে জল চৌকি উপর ফুলের মালা দিয়ে সাজানো    শ্রী রাম সীতা ও লক্ষণ এর ছবির সামনে বসে একজন পুজো করছেন। এই এখন দৃশ্য টি--

কামার পুকুরে লাহা মহাশয়ের  সাধু নিবাসে সাধুদের মধ্যে একজন সাধু  খুনঞ্জুনী বাজাচ্ছেন ,  একজন সাধু ঢোলক বাজাচ্ছেন, অন্য একজন গাহিছেন-----

" সীতাপতি  রামচন্দ্র,  রঘু পতি  রঘু রাই।
ভজ লে অযোধ্যা নাথ দূসরা  ন কোই।।
রসনা রস নাম লেত,  সন্তন কো দরস দেত।---গান চলছে-"

এক সাধু  ---তুলসী দাস জীর রাম চরিত  মানস এই সুর করে পড়ছেন --" সত্য  বচন  আউর পর স্ত্রী মাতৃ সমান, ইসে  হরি ন মিলে তো তুলসী ঝুট জবান। "

গদাইয়ের প্রবেশ করে হাতে জল ভর্তি পিতলের বালতি নিয়ে--বালতি রেখে দিয়ে। কাঠ গুলো কাঠারী দিয়ে কাটতে থাকে আর গান শুনতে থাকে।

গান শেষ হলে গদাইয়ের কাছে গিয়ে সাধু হাত ধরে কাছে ডেকে 
অন্য সাধু হাতে পিতলের  হাড়িতে  প্রসাদ রেঁধে এনে প্রবেশ করেন। সবাই ব্যস্ত হয়ে যান কেউ প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন। কেউ ধূপ দানি তে ধূপ জ্বালান।
বিভিন্ন পিতলের থালায় খিচুড়ি পরিবেশন করেন ঐ রাম সীতা লক্ষণ এর ছবির সামনে রেখে এক সাধু পঞ্চ প্রদীপ নিয়ে আরতি করছেন।
সবাই হাত জোড় করে সমবেত ভাবে গাহিছেন---  "  প্রেম মুদিত মন সে কহো রাম রাম রাম /  শ্রী রাম রাম রাম, শ্রী রাম রাম রাম ----"
মঞ্চের  আলো নিভে যায়

অন্য দৃশ্য
ক্ষুদিরামের বাড়ির উঠোনে,  চন্দ্রা দেবী, গাঁয়ের মহিলা দু- চার জন দিনের বেলা।

চন্দ্রা দেবী-- কি ব বলবো বোন, সেই সকাল বেলায় গাই বেড়িয়েছে  এত বেলা হলো এখন ফিরছে না?

মহিলা-- গাইতে তো দেখে এলাম  লাহান মশাই দের সাধু নিবাস এ সাধের জন্যে পাতকুয়া থেকে বালতি করে জল নিয়ে গেল,

মহিলা--কত করে  বললাম, গদাই  তুই বড় বড় দু টো বালতি জল বহিতে পারবি না,  দে দে আমারা  বহে নিয়ে যাচ্ছি।

মহিলা-- কিছুতেই দিলে না।

মহিলা--আহা এই এত অল্প  বয়সে  কি  সাধু সেবা দেখে  চোখ জুড়িয়ে যায়।

মহিলা --লাহা   বাড়ির প্রসন্নময়ী-দিদি ! সব সময়ই বলেন, গদাই রামের অংশ, দাঠাকুর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর রঘুবীরের  পূজা করে ছিলেন তাই ! 

মহিলা --তোমরা দু জনে -- দিদিগো  ! গত জন্মে  অনেক পুণ্য করেছিলে  দিদিগো !

মহিলা-- আহা  দিদিগো,  গদাই তোমার মানুষ নয়,  যেন স্বয়ং কৃষ্ণ  অবতরণ করেছেন !

মহিলা-- কিন্তু   বোন একটা বিষয়ে ভয় হয়,  ঐ সাধুর দল গদাইকে  নিয়ে গঙ্গা সাগরের মেলায় নিয়ে যাবে নাতো  ?

মহিলা-- কিংবা ঐ   শ্রী জগন্নাথের   শ্রীক্ষেত্রে  নিয়ে  চলে যাবে  নাতো?

মহিলা-- সাধুরা শুনেছি   বাচ্ছা  ছেলেদের ধরে  নিয়ে গিয়ে সাধু  করে ?

মহিলা-- মঙ্গলা  তুই  আর  কু  কথা বলে দিদির  চিন্তা  বাতাস নি--- ওনারা  অমন সাধু  নয় ।

হঠাৎ গদাই পরনে ধুতিটা সাধুর মতন  পরা, অন্য ধুতির টুকরো মাথায় পাগড়ী বাঁধা গান গাহিতে গাহিতে  প্রবেশ  করলো।

গদাই --- ( দু হাত তুলে নাচতে নাচতে ) -- " যাদের  হরি  বলতে  নয়ন ঝরে  তারা  দু ভাই এসেছে রে।
                                                                    যারা আপনি কেঁদে   জগৎ  কাঁদায়  যারা  মার খেয়ে  প্রেমে নাচে।
                                                                  যারা ব্রজের  কানাই  বলাই    যারা   ব্রজের মাখন
---------------------                             -জীব   তরাতে   তারা  দু  ভাই  এসেছে  রে ।"

                                                                  " হরি  হরি  বল রে  বীণে  
                                                 শ্রী হরির  চরণ বিনে  পরম  তত্ব আর পাবি নে।"

প্রেম  ধন বিলায়  গোরা রায়----  গদাই নেচে নেচে গেয়ে একাই সবাইকে আনন্দ দিলো।

সাধু গণের দল বেঁধে ঝোলা নিয়ে  প্রবেশ করেন --

সাধু দু  জন গান গান   গাহিতে  গাহিতে  প্রবেশ  করেন  --

" হরি  ষে  লাগি  রহ  রে  ভাই  
তেরা  বনত  বনত  বনি  যাই,  
তেরা  বিগড়ী   বাত  বনি  যাই।
অঙ্কা  তারে   বঙ্কা   তারে      তারে  সুজন  কসাই  
শুগা   পড়ায়কে    গণিকা  তারে     তারে  মীরা বাঈ।।"

গ্রামের   মহিলারা  নান  দান সামগ্রী  দান করে প্রণাম করেন।

সাধু--(  চন্দ্রা দেবী ভিক্ষা দিতে এলে--- )   মাঈ  তেরী  এ  সন্তান গদাই   সচ  গদাধর হ্যায়,  বহুত খেয়াল রাখ না   মাঈ !

সাধু --- হাম লোক সব গঙ্গা সাগর সে লৌট কর ---আভি  পুরী যা কর জগন্নাথ জী কো দর্শন কে  হা - মরা  যাচ্ছি ! রাম রাম ---
---একজন সাধু  গদাইকে  আদর করেন ---গাহিতে  থাকেন   " 
" মোকা  কাঁহা  ঢুঁ ঢ়ো বন্দে ----কাশী  কৈলাস  মো।।" গদাই দুচোখ এ জল সকলের সাথে দাঁড়িয়ে---আলো নিভে যাবে পরের দৃশ্যেদৃশ্যের জন্য।

গদাধর গদাইর গুন কীর্তন 
শেষ দৃশ্য নেপথ্যে সঙ্গীত

খেলিছ এ বিশ্ব লহে  বিরাট শিশু আনমনে
প্রলয়  সৃষ্টি তব পুতুল খেলা, নির্জনে প্রভু নির্জনে
শূন্যে মহা আকাশে মগ্ন লীলা বিলাস, 
ভাঙিছ -গড়ি নিতি ক্ষণে ক্ষণে।
তারকা- রবি -শশী  খেলনা তব, হে উদাসী।
পড়িয়া আছে রাঙা পায়ের কাছে  রাশি রাশি;
নিত্য তুমি হে উদার, সুখে দুঃখে অধিকার
হাসিহাসি খেলিছ নিতি আপন মনে।।

মঞ্চে এক পাশে, ঘোষকের ঘোষনা----
এক গাছের তলায় গাইতে উঁচু পিসির উপর বসিয়ে বৃদ্ধ বা মধ্য বয়স্ক চিনু শাঁখারি গদাধরের শৈশবেই গদাইর মধ্যে দৈবী স্বরূপ  বুঝেছিলেন,   চিনু শাঁখারি দৃঢ় চিত্তে বিশ্বাস  করতেন, স্বয়ং  শ্রী চৈতন দেব রূপে আবির্ভূত হয়েছেন।
গদাই কে  নূতন বস্ত্রে,   কপালে চন্দন, গলায় ফুলের মালা পরিয়ে  গদাধর পদ যুগল ভক্তি ভরে জল পাত্রে ধুইয়ে দিলেন।নূতন গামছা দিয়ে মুছিয়ে দিলেন। ফুল দিয়ে পুজো করছেন---- মন্ত্র পাঠ --

কৃষ্ণায় বাসু দেবায় হরয়ে পরমা তবনে ।
প্রণত -ক্লেশ নাশায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।

বৈরাগীর প্রবেশ গান গাহিতলল " দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে
আমার সুর গুলি পায় চরণ আমি পাইনে  তোমারে।"

"প্রেম গিরি  কন্দরে, যোগী হয়ে রহিব।
আনন্দ নির্ঝর পাশে যোগ ধ্যানে থাকিব।।
তত্ব ফল আহরিয়ে  জ্ঞান ক্ষুধা নিবারিয়ে, 
বৈরাগ্য কুসুম দিয়ে শ্রী পাদ পদ্ম পূজিব।
মিটাতে বিরহ তৃষা কূপ জলে আর যাব না,
হৃদয় করঙ্গ ভরে শান্তি-বারি  তুলিব।
কভু ভাব শৃঙ্গ পরে, পদামৃত পাপান করে,
হাসিব কাঁদব হাসিব নাচিব গাহিব।

---ভোগের মিষ্টি খাওয়ানো পর গলাবে জল পান করান।
ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করেন। করজোড়ে নতজানু হয়ে বসে বলছেন --- হে নাথ,

পূর্ণ বয়স্ক শ্রী রামকৃষ্ণ সমাধিস্থ  হয়ে বসে আছেন। তাঁকে ঘিরে নৃত্য সহযোগে কন্ঠে গাহিতে সবাই , গাহিতেন ---

প্রেম ভরে মন রে গা রামকৃষ্ণ নাম
শ্রী রামকৃষ্ণ নাম শ্রী রামকৃষ্ণ নাম
আনন্দ বর্ষক নাম, মম প্রাণা রাম।
শ্রী রামকৃষ্ণ নাম  শ্রী রামকৃষ্ণ নাম শ্রী রামকৃষ্ণ  নাম।
অন্তরে যতনে রাখ  মন রে অবিরাম।
দীন কামানের ধন  রামকৃষ্ণ  নাম,
শ্রী  রামকৃষ্ণ  নাম  শ্রী রামকৃষ্ণ নাম শ্রী রামকৃষ্ণ নাম।।

ঘোষকের ঘোষনা

সমবেত .সঙ্গীত--- জয় জয় রামকৃষ্ণ রামকৃষ্ণ  বল বদনে, এমন মধুর নাম  আর পাবিনে,
এমন মধুর নাম আর পাবিনে, এমন জগত গুরু  আর পাবিনে।
এমন প্রেমের ঠাকুর  আর পাবিনে, এমন দয়াল ঠাকুর আর পাবিনে
এমন যুগের আর পাবিনে, এমন পতিত পাবন আর পাবিনে।

ঘোষকের ষোষনা---

রামকৃষ্ণ শরণং রামকৃষ্ণ শরণং রামকৃষ্ণ শরণং 
শরণাগত হহং শরণাগশরণাগত শরণাগত হহং শরণ্যে।

সমাপ্ত।

No comments:

Post a Comment