ভয়ে ভয়ে আছি
শ্যামল সোম
জানেন সেই শৈশব থেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধ হচ্ছে অনেক দূরে
চাল গম ডাল দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যেরাদি মজুত করে
গুদমে রেখে আমাগোঁ ক্ষুধার্ত রাখছে ক্যান, দ্যাশের্ গাঁয়ের বাড়িতে ঠাম্মা
সাথে আমরা মা কাকিমারা আর এক দঙ্গল আমরা ভাই বোনের সাথে আছি।
কোলকাতা থেকে বাবা এলেন আমাদের ময়মনসিংহে ফুলপুর মুক্তাগাছা গ্রামে
দরজার আড়াল থেকে দাদুভাই সাথে,বাবা ঢাকার থেকে স্কুলে শিক্ষক ছুটে
এসেছেন আসন্ন কোন এক ভারতবর্ষের অখণ্ডতা রক্ষা করা যাবে না যাবে না,
ছোট কাকা আমাদের বুদ্ধিতে অবজ্ঞার করে বললেন সাইমন কমিশনের প্রস্তাব
তিন স্তরে হিন্দুদের প্রদেশ মুসলমানদের কিছু প্রদেশ, আর বাদভাগি মিশ্র কিছু
প্রদেশে ভাগ করে ভারতবর্ষে হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায় সহাবস্থান মানতে রাজি
হলেন না পণ্ডিত নেহেরু, স্বাভাবিক ভাবেই মহম্মদ আলি জিন্না বিদ্রোহ করলেন।
মুসলমানদের জন্য নিজস্ব দেশে চাই মুসলিম লীগের জিন্না সাহেব ঘোষনা করেন
ষোল অগাস্ট 1946 DIRECT ACTION শুরু হলো GREAT CALCATA KI LLING
বহু হিন্দু বাঙালী নিহত হলেন, কিছু মুসলমান মারা গেছে।
আমার ভীষন করছিলো রাতের অন্ধকারে গরামের কিছু মুসলমান বাবার বন্ধু আমাদের
নিরাপদে পারঘাটায় বিশ্বাসী আবদুল মাঝি লোক জন কিছু মূল্যায়ন জিনিষপত্র ঠাকুরমার
গলায় হরিনামে ঝুলিতে জপের মালা আর সোনার গোপাল। মা কাকিমাদের শাড়ির আঁচল
আড়ালে বাঁধা অনেক সোনার গহনা।
দাদুভাই হতে মোষের সিং এর বাহারী ছড়ি।
দূরে দেখি আমার শৈশবের খেলার সাথী তার আব্বা হাত ধরে সজল নয়নে তাকিয়ে রয়েছে
আয়েষা আমার দিকে, ছুটে গেলাম আয়েষার কাছে হাত ধরে চোখের জলে মুছিয়ে বললাম,
দূর পাগলি কাঁদছিস কেন ? দুমাস পরেরই কোলকাতা থেকে ফিরে আসবো তোর জন্য কত
পুতুল নিয়ে,হঠাৎ আকস্মিক আমাকে জড়িয়ে শৈশবের সঙ্গিনী প্রেমিকা অপরূপা নারী নাম
তার স্বপ্ন ভাসে পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎ স্নায় আজও সত্তর বছর পরেও।
আয়েষার মাথা হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে আমার বাঁশি টা ওকে দিয়ে সবার সাথে সদল বলে
বিশাল নৌকায় উঠলাম, আয়েষা ছুটে এলো পাড়, বাঁশি হাতে দু চোখে পানি শৈশবের স্মৃতি।
আকাশ রাঙা আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে নূতনদিনের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দাদুভাই
সূর্য মন্ত্র আবৃত্তি করছেন, ঠামমী জপের মালা হতে সকল পরিত্রাতা শ্রী কৃষ্ণ দীনবন্ধুকে
ডাকছেন মা ও কাকিমারা, শরতের ভোরের হাওয়ায় নৌকার পাল তুলে যাচ্ছে দেশের
আমার প্রিয় জন্মভূমির শিকড়ের টান ছিঁড়ে তাড়িত হয়ে শরণার্থী আমরা কোথায় ঠাঁই পাবো।
ভয় করছে ভীষণ ভয় করছে ফিরতে পারবো কি, খুব কষ্ট হচ্ছে বুক ফেটে যাচ্ছে চোখ জ্বালা
করছে না না চোখের জল রুদ্ধ হয়ে কষ্ট হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে গো মা মুখে কিছো না বলে মায়ের
কোলে মুখ গুছে আমি কেঁদে ছিলাম আজ মনে নেই, কিন্তু ভয়টা তাড়া করে ফিরছে আজও।
No comments:
Post a Comment