নববর্ষের আলোয় আজকের বাঙালিয়ানা
সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত মতামত প্রকাশ করলাম কেহ আঘাত পলে অগ্রীম ক্ষমা করবেন।
শ্যামল সোম বাঁশিওয়ালা
দিনটা ছিলো চৈত্র সংক্রান্তি আমাদের ময়মনসিংহ এ ফুলপুর থেকে থেকে কিছু দূরে সোমেশ্বরী নদীর পাড়ে
বসেছিলো গাজনের মেলা বছর পাঁচেক বয়স দাদাভাই ও ওঁনার বন্ধু আমীর আলি ও ওঁনার নাতনি যূঁই ডাকনাম
মেহরুনেসা তখন উচ্চারণ করতে পারতাম না, মেহের বা যূঁই বলে ডাকতাম।
যূঁই ছিলো আমার আদরের ছোট্ট বন্ধু, শৈশবের ভালোবাসা তখন খুব পবিত্র ছিলো।
গাজনে মেলাতে তাঁবুতে চলছে সার্কাস দলের একজনের জোকার মুখে রঙচঙ চোঙ্গা দিয়ে চিৎকার করছিলেন
মেম বালিকার সাইকেলের কেরামতি, বাঘের সাথে লড়াই, সাপের সাপ বাজি। সার্কাস দেখতে দেখতে ভয়ে যূঁই
আমার হাত চেপে ধরছিল। ফিসফিস কানের মুখ এনে বলছিল শ্যাম তুই বড় হয়ে আমাকে কোলকাতা থেকে একটা সাইকেল নিয়ে আসবি লাল রঙের সাইকেল।
হ্যাঁ 1950 আমরা আমাদের বাড়িতেই চলে যাবো ঠিকঠাক আছে।
দাদু বাবা কাহারা আগেই চলে গেছিলেন কসবা অঞ্চলে বিশাল জমি কেনা হয়েছিল এই আমীর আলি দাদাভাইয়ের
সহায়তায় বহু এখান জমি পুকুর বাগান খেত বিক্রি করা গেছিল পরে দাদু মুখে শুনেছি।
কাঠের নাগর দোলা যূঁইয়ের সাথে পাশাপাশি বসে ঘুরছি যূঁই আমাকে জড়িয়ে কানে কানে ফিসফিস করে বললো
" শ্যাম তুই তোরা একবারে চলে এ দেশ ছেড়ে চলে যাবি একেবারে চিরদিনের জন্য চলে যাবি -- আমার খুব কষ্ট
হচ্ছে রে।" হঠাৎই হাঁউমাউ করে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে দাদুভাই নাগরদোলা থামিয়ে দুই কোলে আমরা
দুজনে কাঁদছি।
আমি পরে আছি আমি দাদুর বরাত দিয়ে দোরছির হাতে তৈরী নকশিকাঁথা পাঞ্জাবী ঢোলা পায়জামা পায়ে নাকড়া
মাথাই ফেজ টুপি গতবছর উনি জাহাজে চোড়ে হজ করে এসেছেন।
ফেরার পথে কোন বিদেশ থেকে নরম চামড়ার নাগরা ও বেজ টুপি এনে ছিলেন।
আমার মোক্তার দাদু ও কোলকাতা থেকে ছোট্ট মেয়েদের পরণে দু জোড়া শাড়ি, চারটি ছোট শাড়ি চারটি রঙ।
ফেরার দুদিন আগে করবী গাছের তলায় বসে খুব মন দিয়ে মাষ্টার রহমান সাহেবের শেখানো বেহাগ রাগ বাজাচ্ছি।
এই বাঁশি টাও গত বছর ইদের মেলাতে যূঁই আমার জন্য বাঁশি কিনে এনে ছিলো এক জোড়া ঢাকা থেকে বেড়াতে গিয়েছিলো।
পাঁচ বছরের ময়ুর কন্ঠি শাড়ি পরে আমার পাশে করবী ফুলের গাছে তাই বসে ছলছল চোখে তাকাতে আছে আমার দিকে।
একই দুছনার বয়স -- যূঁই বালিকা হলেও নারী ও অনেক তীক্ষ্ণ বোধ মেধা সম্পন্ন নারী, ওরা অনেক কিছুই বিস্তারিত,
জানেন।
আমাকে বাঁশি বাজানো থামিয়ে ওকে কাঁদতে দেখে, হাতে তালি দিয়ে, " এঁমা এত বড় কাঁদে ! "
ঠাস করে গালে চড় মেরে কাঁদতে কাঁদতে পালালো, তিন দিন যূঁই নিজেকে কোথায় লুকিয়ে রাখলো কোলকাতাতে ফিরে যাওয়ার আগে অনেক চেষ্টা করেও যূঁইয়ের দেখা কথা বলা হলো না, চারখান গরুরগাড়ি করে যখন চলে যাচ্ছি,
হঠাৎই দেখি সবুজ শাড়ি পরে বকুল গাছের আড়াল থেকে দূর থেকে দেখছে -- বোকা মত হাসতে হাসতে হাত নাড়লাম।
হাজি সাহেব বিশাল পাটের ব্যবসা ধনী
প্রাণ খোলা দখলদার মানুষ, নিজে হাকিম ছিলেন উচ্চবর্ণের মোমিন মুসলিম ছিলেন ধর্ম প্রাণ কিন্তু হিন্দু ধর্মের
প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা ছিলো, ওনার এক দাদা অসাধারন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ ছিলেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক
জন গুনী দর্শনের অধ্যাপনা করতেন, আমাদের বৈঠকখানাতে ধুতি পাঞ্জাবী পরিহিত জনাব মেহের আলি সাহেবকে
পর্দা আড়াল থেকে দেখছি কি শান্ত সৌম্য দাড়িতে মেহেদী, গীতা উপনিষদ শ্লোক ভারি কন্ঠস্বর আবৃত্তি করছেন
কিছুই বুজছি না।
কন্ঠ উপনিষদে ছন্দের সুরে আমরা মায়াচ্ছন্ন দুচোখ বিস্ময়, যূঁই ওর ঐ ফিসফিস স্বরে বলেছিল,
" শ্যাম তোকেও আমার মেহের দাদুর মতো জ্ঞানী বিদ্যান হতে হবে !"
লেখা চলবে ক্রমশ প্রকাশ্য- -----
No comments:
Post a Comment