উদাসী বাউলের বিলাসী বিলাপ
শ্যামল সোম
ভরা ভাদ্র মাসে ঝরঝর পড়ছে বৃষ্টি, কালুর দোকানে চাটাই পরে উপু বসে এ পাইট কালি মার্কা বোতল আর ঐ ছোলা সেদ্ধ চুক চুক চুক চুক করে সাবাড়।
নেশা শালা, ঐ শালা লেশা হলো নিজের গো, মনের আনন্দ, জেনে শুনে করছি পান, জ্বলে বুকের ভিতর আগুন, এ আগুন নেভানোর জন্য মদ্য চোলাই পান আকন্ঠ পান, নীলক্ন্ঠ --- হা হা হা হা !
বুকের মধ্যেই বেদন বেদনা ব্যথা এ ব্যথা
নিজেকে মেলে ধরতে পারলাম কৈ, বেনো ঢুকে নেপোও মারলো দৈ।
বাবুরা এখন লম্বা চুল দাড়ি রেখে রঙ বেরঙের পাঞ্জাবী বাহারী পোষাক সৌখিন বাউল সেজে বাউল
সহজিয়া নাচছে বাহারী শাড়ির আঁচল বাতাসে ওড়ে -- ঝম ঝম করে বৃষ্টির পানির মতন টাকা ঝরে।
তিরিশ বছরের সাধন কুম্ভক শ্বাস প্রশ্বাস কারসাজি সাত সুরের দমের বাজি ঐ মৌরাক্ষী নদীর জলে ভেসে
গেলো গো।
উতাল মাতাল নদী ভাঙছে পার ধস ধস করে ধসে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছে মাটি গ্রাস করে নিচ্ছে পায়ের
তলার মাটি জমীন- ------ মানব জমীন আবাদ করলে বলতো সোনা
দূর দূর আমার ভেতর কোন প্রতিভা ই ছেল না ঐ এক চাকাতে চলছে জীবন গাড়ি গাড়োয়ান ভাইরে
নেশা ছুটে গেল এত আবোলতাবোল বক বক করলে --- নেশা আর থাকে ?
মানইসে লেশা করে ক্যান, ক্যান লেশা করে মজা ভারি মজা, ঐ মণিপুরি গাঁজা বালুজের গাঁজা এক এক দ্যাশে
গাঁজার স্বাদ আলাদা করা গাঁজা কলকে তে ভরে ছিলিম দম মাইরা দেও এক লম্বা এক টান ফটাস কইরা ফাইটা গেল
মনের পর্দা আসমানে ফানুসের মতন ভাসে শরীর
শরীর ভাসে না শরীর থেকেই বেরিয়ে যায় আত্মা অচিন পাখি আকাশে মেঘের আড়ালে ভাসে।
" খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
ক্যামনে আসে যায়---
দুঃখ ভুলতে নেশা করে, হা হা হা
আমার আবার দুঃখ কি
আমার দুখের বাস, জন্ম থেকেই বাপ মরলেই মা পালালো অনাথ পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে কখন মেলার চায়ের দোকানে
বাসুন মাজি, বয়স পাঁচ পাঁচজনে যা কাজ বলে করতাম, অজয় নদী থেকে জল তুলে আনি।
অজয় নদী তখন যোয়ান মরদ, দুকুল ছাপিয়ে বহিছে --- আবদুল মিঁয়াও নৌকা পাল তুলে হাল ধরে গান ধরেছে
" আমায় ভাসাইলি রে আমায় ডুবাইলি রে অকুলীন দোরিয়ায়- - কুল নাই কিনারা নাই ---
না না লেশা জমে গেলি আহা কে আমি আর কে বাদশা
ট্যাকে গোঁজা ছিল সোনার মেডেল পুরস্কার পেয়ে ছিলাম বীরভূম জেলার হাকিম সাহেব লাল ফিতে গলায়
পড়িয়েছিলেন, গান শুনে বাহবা পাওয়ায় গর্বে বুক পাঁজরে বান ডাকছে -- নিজে গান নিজেই শুনে আহ্লাদে আটকান।
আমাকে সাত জেলার বাউল প্রেমিকেরা মান্যি করে আমি তখন গণ্যমান্য ব্যক্তি বাউল রাজা আমি দ্বৈপায়ন দাস।
চল্লিশ বছর আগে সৌখিন বাউল পড়াশোনা জানা ভদ্রলোকের শেকড়ের গান বাউল সখের ছিলো না।
বাউল সেজে লম্বা চুল রেখে চোখ বুজে বাউল গান গাইলেই বাউল হওয়া অত সহজ নয় গো বাপধন।
ফকিরি বাউল হতে গেলে দীর্ঘ বহু বছর ধরেই সাধন করতে হয়।
" সময় গেলে সাধন হবে না
সময় থাকতে সময়ের সাধন কেন করলে না "
ঐ দেখ বাতাসী এসে হাজির এখন আমাকে তুলে বুকে করে জড়িয়ে ধরে পরম মমতায় মাতৃস্নেহে ঘরে নিয়ে যাবে।
বাতাসী ছেল করিম ভায়ের কন্যা চৌদ্দ বছরের কন্যা রূপের বন্যা বিশ বছরের ছোট ও বেটি যে প্রেমের ফাঁদ পেতেছিলো -- মেয়ে মানুষ ষোল কলা ছলা কলা জন্ম থেকেই জ্ঞানি।
পীরিতি কাঁঠালের আঠা ও আঠা লাগলে পরে ছাদে না।
কখন পীরিতি হলো মাইরি বলছি জানতে পারি নাই।
বাতাসী গলা ছিল খাসা -- আসরে গাইতো -- " চাঁদের গায় চাঁদ লেগেছে -----"
রতন আমার কাছে তিন বছর আছে, বাউল গান শিখবে এ কি অ আ ই ঈ শেখানো যাবো ?
সাধন করতে হয় গো --
রতন জনমজুর কাজ কাম করে আবার বাতাসীও মাঠে খেতে ধান রুইতে ফসল কাটতে যায় -- টাকা রোজগার করে সংসার চালায় দুজনে।
আমি ঐ মাছ ধরার জাল বুনে -- চাটাই মাদুর বুনে কটা টাকা পাই নেশা ভাঙ্গ করতে হাত চিত্র না করতে বাতাসী টাকা দেয়। ভালোবাসা আমাকে, তাকেও তো শরীরের তাপ নেভাতে বাসনা পূর্ণ করতে একটা
যোয়ান মরদ লাগে -- রাতের বেলায় আকাশে তাকিয়ে দেখি চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে --!
ঘরের ভেতর থেকে কানে আসে বাতাসী আমার আদরের ভাসছে শিৎকার ধ্বনি- - রতন এর ফোঁসফোঁস
বিষধর সাপের ছোবল মারছে বাতাসী খিলখিল করে হাসছে -- নূপুরের আওয়াজ শুনে আমোদ হয় আমার।
আশ্চর্য নারীর মন একজনের এই আমার সাথে প্রেম আত্মিক সম্পর্ক
আবার শরীরের জন্য ডাকে রতন কে রতন এ রতন চেনে গো।
তবে কিন্তু ওদের প্রাণে দয়া মায়া আছে -- আমার মতন বুড়ো হাবড়াকে যে গলা ধাক্কা ঘর থেকে বেড়
করে দেয় নি এ আমার পরম সৌভাগ্য ।
বাতাসী সত্যিই সত্যই ভালোবাসে -- লতার মতন আমাকে জড়িয়ে ঐ হাসনুহানা ফুলের বাতাসী শরীরের গন্ধ
পুরুষ আসবেই -- বাতাসীর ভরা যৌবন যৌবনে দৈন্য জরাজীর্ণ অসুস্থ জরাগ্রস্ত বৃদ্ধকে দিয়ে চলে না।
এ হচ্ছে দেহতত্ত্ব ---!
সাঁইজীর ঐ বাউল গান ঐ বছর বিশেক আগে অজয় নদীর
পারে কেঁনদুলি মেলায়, আমাদের আঘরায় দুম লেগেছে সাঁইজীর গান আহা ওস্তাদের কি গলা যেন সাত সুরে ডাকে সাত সাতটা পাখি।
No comments:
Post a Comment