Saturday, 20 July 2019

জয়িতার অভিশপ্ত জীবন

জয়িতার  অভিশপ্ত জীবন

শ্যামল সোম

শ্যামাপদ পালের গড়া প্রতিমা সৌন্দর্যে প্রশংসিত,
কৃষ্ণ নগরের মৃত্শিল্পী বিখ্যাত স্নামধন্য সমাদৃত।
খুব বিস্ময় স্বপ্নময় তন্ময়তা চোখে মুখে সৃষ্টির এত
আনন্দ ভাগ করে নেয় বার বছরের জয়ী আদরের
কনিষ্ঠ কন্যা রূপের বন্যা যেন জীবন্ত সেই কিংবদন্তি
পরী না অপ্সরী অপরূপা রূপসী শৈশবের এই লাবণ্য
রূপে অনেকেই আদর করার ছলেকৌশলে কস্ট পায়,
শৈশবেই বুজে গেজে এই তো নারীর জীবন সুখের নয়।

পালবাবু দুই জোয়ান ছেলে তাদের বউ দুই মেয়ে জামাই
আর এই বেশী বয়সের আত্মজা কন্যা আদরের জয়ী।
সেদিন ঝড় জলের দুপুরে কাগজের নৌকা বানাচ্ছিল
জমা জলে ভেসে যাচ্ছে নৌকা জয়ী আনন্দে হাসছে
খিলখিল করে হেসে হেসে লুটোপুটি হঠাৎ তাদের বাড়ির
ভেতর থেকে প্রচন্ড শব্দে জয়ীর মায়ের তারস্বরে আর্তনাদ,
দোতলার সিঁড়ি বেয়ে নামচছেন শ্যামাপদ মাথা ঘুরে পড়ে
জ্ঞান হারান সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলেন গিনিমার  হাঁক ডাকে,

মায়ের করুন বিলাপ জয়ীর থরথর করে কাঁপছে, হাঁ শরীর
বাবার বাবু প্রেসার সুগারে ডাক্তার আসা যাওয়া চলছে, ঐ
চিৎকার  শুনে জয়ী ছুটছে বাড়ির লাগিয়া পুকুর পাড় থেকে
বাগান পেড়িয়ে, সমবেত কান্নার রোল উঠলো, জয়ী কান্না
আসছে, কদিন ধরেই বাবু বাবা তার ভীষণ অসুস্থ অবস্থায়
বিছানায় শুয়ে থাকে জয়ী কাছে বসে কপালে চুলে হাত বুলিয়ে
দেয় পরম স্নেহে  ভালোবাসায় মমতাময়ী জননীকে ফিরে পেয়ে
শ্যামাপদ পালের দুচোখ নীরবে বহে যায় শেষ অশ্রু অঝর ধারায়
ছুটছে ছুটছে জয়ী বাড়ির দিকে কি ঘটনয় ছুটছে অন্তহীন যেন এ পথ -------- !

জয়িতার অভিশপ্ত জীবন   (দ্বিতীয় পর্ব )

শ্যামল সোম

গ্রামের লোকজন পাড়া পড়শিরা আত্মীয় স্বজন
দাদারা বৌদি দুজন থমথমে মুখে কাজে রয়েছেন।
শ্যামাপদ পালের অন্তিম শোক যাত্রা প্রাক্কালে মধ্যাহ্ন
চলছে আয়োজন, তিনি প্রশান্ত মুখে চোখে বুজে চিৎ
হয়ে শুয়ে আছেন দড়ি বাঁধা হালকা ঘাটে শুভ্র বসন
ছোট পিসিমণি হাঁটু গেড়ে উঠোনে বসে বাবা কপালে
চন্দনের তিলক আলপোনায় সাজাচ্ছেন ছলছল চোখে।
পাঁচ বছরের জয়ী অপার বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখছে,
হঠাৎ ছুটে গিয়ে দাঁড়ায় শিয়রে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাপের বুকে
মৃত বাপকে মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করে বাবু বাবু উঠো উঠো
না, কেন হয়েছে শুয়ে পড়েছো এ ভাবে, বাবুর কি হয়েছে ?
তোমরা কেউ কিছু বলছো না কেন?
মা ও ভাবে তাকিয়ে রয়েছে কেন ?
পিসিমণি  কি হয়েছে গো বাবুর শরীর খারাপ লাগছে?
এ ভাবে কেন কেন শুয়ে আছে গো বলো না ? "
জয়ী বাবাকে জুড়িয়ে আদর করছে বার বার সবাইকে
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে পাগলের ছোটাছুটি করছে।
হঠাৎ বড় দাদা বিমল ধমকে উঠলো " জয়ী বিরক্ত করো না।
বাবা তোমার বাবু মারা গেছেন ওনাকে নিয়ে শ্মশানে যেতে হবে
যাবো ওদিকে যাও, বড় মাসি জয়ী কোলে করে জয়ের মায়ের কাছে
নিয়ে যান, রানু জয়ের মা পাথর প্রতিমা মতন ছিলেন এতক্ষণ শোকে
হতাশায় নিমজ্জিত মুহ্যমান, অতর্কিতে প্রচন্ড চিৎকার করে কেঁদে উঠে
জয়কে বুকে টেনে নিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলেন,

তখনই সমবেত কন্ঠে শোনা --" বল হরি হরি বোল বলো হরি হরি বোল বলো হরি হরি বোল "

শ্যামাপদ পালের অন্তিম শোক যাত্রা শুরু হলো--

রানু আলুথালু শাড়ি আঁচল লুটিয়ে ছুটে যাচ্ছেন মাসিরা পিসিমা ধরে ফেললে, থরথর করে কাঁপছে
অকুল নয়নে কাঁদছেন

সকলে আড়ালে গাছে গাছে ফাঁকে ফাঁকে বিষন্নতায় বিপন্ন শিশু জয়ী লুকিয়ে চলেছে
বাবুর নদীর তীরে গাছে  ঘেরা শ্মশানের সাজানো চিতায় দেহ তোলা হলো পারলৌকিক
কাজের শেষে বিমল বড় দাদা পাটকাঠি জ্বালিয়ে শুরু করলেন চিতা প্রদক্ষিন পেছন গালভরা
কলসী নিয়ে ছোট  কমল পিছু পিছু চলেছে।

মুখাগ্নি পরে শিখা জ্বলে  উঠে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো চিতায় শোওয়ানো বাবুর দেহ

গাছের আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখছিল ছোট্ট জয়ী, নৈঃশব্দ্যে কেঁদে ফেলে গাছটি পরম
মমতায় গাছ টি জড়িয়ে  ব্যাকুল প্রাণের আকুতি কাঁদছে থরথর করে কাঁপছে জয়ীর শরীর।

চিতার ধোঁয়া ধীরে ধীরে কুণ্ডলি পাকিয়ে উড়ে যাচ্ছে মেঘলা ধূষর আকাশে

জয়ী অবাক চোখে চেয়ে থাকে সেই ধোঁয়া কুণ্ডলি পাকিয়ে উড়ে যাওয়ার দিকে ছলছল চোখে,
বহে যাচ্ছে কংসাবতী অশ্রু নদী।

No comments:

Post a Comment