#শিশির সেন।
1950 সাল থেকে প্রায় সাত দশক গণনাট্য কর্মী ও নেতা হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। পার্টির সদস্য পদের বয়স পাঁচ দশক পেরিয়েছে। প্রথম যৌবনে প্রান্তিক শাখার সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেছেন, সঙ্গে পেয়েছেন জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়, বিরু মুখোপাধ্যায় প্রমুখ নাট্য ব্যক্তিত্বের সহযোগিতা। রাহুমুক্ত নাটকে তিনি অভিনয় জীবন শুরু করেন। গণনাট্য আন্দোলনের পূর্বসূরী হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী, দিগিন্দ্রচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সজল রায় চৌধুরী, রেবা রায়চৌধুরী, নিবেদিতা দাস, উৎপল দত্ত, শোভা সেন, নিবারণ পণ্ডিত, রমেশ শীল প্রমুখ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক ছিল।
বিশেষ করে অন্যান্য বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহ এবং গ্রুপ থিয়েটার গুলিকে সন্ত্রাস ও জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় যুক্ত করতে শিশির সেনের ভূমিকা ছিল সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। গণনাট্য সংঘের বিপ্লবী ধারার পোষণ ও অগ্রগতিতে সংগঠনের বিস্তার ও অবদান বজায় রাখতে নেতৃত্তের ভূমিকার প্রশংসা করতেই হবে আর এই কাজে 60 বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করেছেন শিশির সেন পাশে পেয়েছেন হীরেন ভট্টাচার্য, আসু সেন, নরেন মুখোপাধ্যায়, দিলীপ সেনগুপ্ত, শ্রীজীব গোস্বামী, প্রভৃতি সংগঠকদের।সংগঠনের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে গিয়ে শিশিরবাবুর নাট্য রচনা পরিচালনা ও অভিনয়ের ক্ষেত্রে যে সহজাত ক্ষমতা ছিল তা নিশ্চিতভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়। বিশেষ করে প্রথম দিকে সৃষ্টিশীলতা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অনিবার্য অতি সক্রিয় হয়ে পড়ে তা সত্বেও নীলদর্পণ রাহুমুক্ত সংক্রান্তি মুক্তির উপায় বিসর্জন নাটকে তার অভিনয় আজও স্মরণ আসে। আজও ভোলা যায়না রোজেনবার্গ দম্পতির ভূমিকায় শিশিরবাবু ও চিত্রের অসামান্য অভিনয়। হারানের নাতজামাই নাটক অভিনয়ে সূত্রে কৃষক আন্দোলনের প্রচারে সার্থক ভূমিকা পালন করেছিল বেশ কিছু পোস্টার নাটকের পরিচালনা ও অভিনয় এবং কয়েকটি যাত্রাপালা তার প্রতিভার স্বাক্ষর ধরা আছে।
1977 সালে রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ 34 বছরে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বহু দৃষ্টান্তমূলক কর্মসূচি রূপায়িত হয়েছে যা প্রায় কোন রাজ্যে হয়নি।নাট্য উৎসব গান মেলা, চলচ্চিত্র উৎসব, চারুকলা উৎসব, লোকসংস্কৃতি উৎসব ইত্যাদি কর্মসূচি সূচনা হয় এই বিরাট কর্মকাণ্ড শুধু সরকারি স্তরে রুপায়ন সম্ভব নয় তাই সংস্কৃতি জগতের প্রীতি মানুষদের যুক্ত করা হয় এই সব ক্রিয়াকর্মের। সম্পূর্ণ নতুন এই সব কাজে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন শিশির সেন নাটকের মানুষ হওয়ার সূত্রে নাট্য একাডেমিতে নাট্যজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমাবেশ করতে পেরেছিলেন।তার সাংগঠনিক দক্ষতা মিষ্টি ব্যবহার দলমত নির্বিশেষে সকলকে কাছে টেনে আনার যোগ্যতা বামফ্রন্ট সরকারের সাংস্কৃতিক নীতি রূপায়ণে অপরিসীম সহায়ক হয়েছিল তার অভাব পূরণে আর সমস্ত সংস্কৃতিকর্মী কে এগিয়ে আসতে হবে।
সূত্র: গণনাট্য পত্রিকা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি প্রথম সংখ্যা 2018
লেখক:অনুনয় চট্টোপাধ্যায়।
No comments:
Post a Comment