কবির মৃত্যু ( কবি সুনীল গাঙ্গুলী স্মরণে )
শ্যামল সোম
রবীন্দ্র সদনের প্রাঙ্গণে আলপোনার
অলংকরণে, মেহগনি ঘাটে শুভ্র শয্যা,
ফুলে ফুলে সজ্জিত মঞ্চে শায়িত কবি।
অনুরাগী, কবির বৃদ্ধা, যুবতী, কিশোরী
নবীন যুবক তরুন আমার বাউণ্ডুলে মন
বাউলের ভীড়ে হারিয়ে শতসহস্র বন্ধুদের
শুভাঙ্কাক্ষী, অগুন্তি ভক্ত তাঁরা শোকাচ্ছন্ন।
নত শির, নয়নে নীর, কবির একান্ত আপন-
প্রেমিক ও প্রেমিকাদের হাতে হাতে রয়েছে-
রক্ত গোলাপ, শ্বেত-শুভ্র গন্ধরাজ, বেল, যূঁই
চন্দন সুভিত কনক চাঁপা, জনৈকা ঐ রূপসী
যুবতী নিজের হাতে গেঁথে এনেছেন যূঁই ফুলের
মালা, প্রেমে - মমতায়, ভালোবাসার স্রোতে এসে
আদরে ছলে আতর এনেছেন খুব গোপনে।
অন্য আর একজনা ক্ষুন্ন মনে তরুনকে- বার
বার ইশারায় তরুনীর অনুযোগ শুকিয়ে আসছে
তার শোকাতুর মনে, সজল চোখে অশ্রু গাঁথা
বেলফুলের মালা বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়
প্রানের টানে, রাতে সিক্ত নয়নে ভিজেছে বালিশ।
ভোর রাত থেকেই সব কাজ ফেলে অমোক
কবির প্রতি গহীন গোপন প্রেমে ছুটে এসেছে।
এ-এক মহাণ মানব প্রাচীর -মিছিলে মিছিলে
এসে মেলে, খোলা প্রাঙ্গণে।
জর্জ বিশ্বাসের গান ভাসে- -" আছে দুঃখ,
আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে।
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।।"
" এখন আমার সময় হল, যাবার দুয়ার খোলো খোলো।
হল দেখা, হল মেলা, আলোছায়ায় হল খেলা-
স্বপন যে সে ভোলো ভোলো।।"
একটি তন্নী কিশোরী ডুঁকরে কেঁদে উঠে
চেতনা হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল,
কিন্তু আশ্চর্য তার-হাতে শক্ত করে
ধরা রক্ত-করবীর একটি গুচ্ছ।
আছি খুব তোর কাছাকাছি আছি
শ্যামল সোম
ঝরে
ভাঙা ঘরে
একা রয়েছি পড়ে,
অবহেলায়
এক পাশে,
চেয়ে দেখো
উলঙ্গ শব হয়ে,
শুন্যতায়
শুয়ে আছি,
ভুল করে
এখন এখানে
গোরস্থানে,
না, শেষ
বিচারের পর
এ শ্মশানে।
নির্জনে গহন
পদ্ম বনে
হাত ধরে
নিপুন
কামকলার
শরীরী
ভালোবাসার
ভানে সাকী তুমি,
পেয়ালায় নীল বিষ
এনেছিলে,
মুখে তুলে দিয়ে,
দুহাতে জড়িয়ে
শীতল এ ওষ্ঠে
তোমার তপ্ত চুম্বন।
উষ্ণতা খুঁজে পাই,
মিতা তোমার ঐ
বসন হীন নগ্ন শরীরে,
অনন্ত সুদীর্ঘ সন্তরনে,
আসে ক্লান্তি।
এই সুরঙ্গ পথে,
অবিশ্রাম পথ চলা
অভিরাম ঝর্নার
অবিশ্রান্ত ধারায়,
সিক্ত শরীরে
শুধুই ভরা থাকে,
হৃদয় হীন
ভালোবাসার ভ্রান্তি।
হায় ! হৃদয় খুঁড়ে,
প্রতিনিয়ত বেদনারে
কে খোঁজে আজ ও?
প্রতি রাতে ভালোবাসার
ছল গানে-গানে,
ভেসে ভেসে কাছে আসা।
আমার সঙ্গে চল আকাশে
যখন ফুটবে আলো মেঘের
আড়ালে শুকতারা বন্ধু
আমার চল পা চালিয়ে
চল যে দেখ ফুটছে
সবুজের মাঝে
লাল লাল শালুক।
ঐ শালুক ফুলের
গহনা পরে যাব--
অচিনপুরের,
আরশি নগরে,
সেথায় বাস করে
আমার প্রিয়
পড়শী একজনা
সে তুই নীলাঞ্জনা?
No comments:
Post a Comment