Friday, 3 March 2017

একা একাই হেঁটে ফিরে যাই

একা একাই হেঁটে ফিরে যাই

শ্যামল   সোম 

বৃষ্টি গত চার বছর শান্তি নিকেতনে সঙ্গীত ভবনে
মোহরদির কণিকা ব্যানার্জি কাছে রবীন্দ্র সঙ্গীত
চর্চা, আমার পিসাত বোনে নন্দিনী বান্ধবী আলাপ
পরিচয় প্রেম, প্রেমে কি কখন কোন কিছু বাধা মানে?
প্রেমের সম্পর্ক গভীরে তোমাকেই সাথে করে নিয়ে যেতে
এসেছি বাহাত্তরে সনে এই ঢাকা শহরের ধানমন্ডির তখন
কি ঐ লেকের ধারে নিরবিচ্ছিন্ন আঁধারে প্রতীক্ষায়।
বৃষ্টি আমার বৃষ্টি-  সে রকমই  ছিল গভীর রাতে তুমি
সংসারের তুমি তোমার সকল বন্ধন ছিন্ন করে আমার
সাথেই কোলকাতায় যাবে তোমার পাসপোর্ট
আমাদের প্লেনের টিকেট সব ব্যবস্থা নেওয়ায়
জানো বৃষ্টি কদিন ধকল গেছে খুব, ক্লান্ত শরীর।
আমি তাকিয়ে আছি লেকের জলে টলটল করছে
পূর্ণিমার চাঁদ জ্যোৎস্নায় আলোকিত  আশপাশ।
মাথা ঝিম ঝিম - মাঝে মাঝেই ভ্রম হয়, ঐ বুঝি
আমার আদরের বৃষ্টি এলো, তোমার ভালোবাসার
চার বছর টানা, বছরে দু চার বার খবরের কাগজে
অফিসের নানান  কাজের অজুহাতে ঢাকাতে এসে
পাগলের মত তোমাকে নিয়ে বুড়ি গঙ্গায়, আড়িয়াল খাঁ
পাল তোলা নৌকায় দুজনে ভেসে যেতে যেতেই শুনি--
তোমার কন্ঠে, " সাঁঝের বেলায় পাখি সব ফেরে আপন কুলায়
সাথি হারা মন পাখি উড়ে উড়ে আকাশের গায়ে।"
পড়ন্ত বিকেলের  আলোয় তোমার সজল চোখে পানে
চাওয়া, আমি নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রয়েছি--
" কি দেখছো সোম ?
" ফাল্গুনে মধুমাসে বৃষ্টি তোমার ও দু চোখে আমার সর্বনাশ "
" বেশ আমি যদি সর্বনাশী- বিদায় - নৌকো থেকে ঝাঁপ দিলো বৃষ্টি
চমকে উঠেই ঝাঁপ দিলাম নদীর বহমান স্রোতে বৃষ্টিকে
টানতে টানতে - ছুড়ে দেওয়া লাইভ বোর্ড  আঁকড়ে ধরে অচৈতন্য
বৃষ্টির দেহটি উপুর শুইয়ে নানা ভাবে মুখে মুখ দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস
সচল হতে আমাকে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো বৃষ্টি।
হঠাৎই খেয়াল হলো -  বৃষ্টির ছোট ভাই ফারুক সামনে দাঁড়ানো !
সিগারেট  জ্বালিয়ে লাইটারের আলোয় পড়লাম,বৃষ্টির শেষ চিঠি
" আমাকে ক্ষমা করো সোম"
" শ্যামল দা আপনি এক সপ্তাহ  দেরী করে এসেছেন, "
স্তিমিত মন দেখে চিঠির তারিখ পয়লা ফাল্গুন উনশো বাহাত্তর
" আজ ?" ফারুক উত্তর দেয়, " দশই ফাল্গুন," "পয়লা ফাল্গুনে
আপনার আসার কথা ছিলো, " দিদির আত্মহত্যার জন্য দায়ী,
আপনি চলে  যান! অঘটন ঘটে যাবে পুলিশ খুঁজছে, পালিয়ে যান ! দ্রুত
আপনি কাপুরুষ!  খুন করতে ইচ্ছে হচ্ছে ! আপনাকে চলে যান --
আপনাকে দিদি ভীষণ ভীষণ ভালোবাসতো শ্যামল দা----!"
ফারুক অঝরে কাঁদছে --- আমি মূক ও বধির বিমূঢ় হতবাক জ্বালা করছে চোখ।

No comments:

Post a Comment