একাকীত্ব মাঝেই একা
শ্যামল সোম
আমার সুদীর্ঘ বছরের বন্ধুবী শ্রাবণী
বিবাহিত স্ত্রী অর্ধাঙ্গিনী আত্ম সঙ্গিনী।
প্রচন্ড ঝড় জলের রাতে অবিশ্রান্ত ঐ
বর্ষণ মুখরিত রিমঝিম বর্ষায় সদ্য সে
বিবাহিত জীবনে প্রারম্ভে সঘন বর্ষায়
" আজি ঝর ঝর মুখর বাদর দিনে "
" আমার যে দিন ভেসে গেছে চোখের জলে"
" বাদলধারা হল সারা বাজে বিলাই সুর"
" আমার দিন ফুরালো ব্যাকুল বাদল সাঁঝে"
পালঙ্কে শুভ্র শয্যায় শুয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছে
দীর্ঘ শ্বাস প্রশ্বাস ঘণ ঘণ মৃত্যুর করাঘাতে দূরে
সশব্দে প্রচন্ড আওয়াজে ভয়ার্ত ভীত সন্ত্রস্ত
উদ্বিগ্ন হওয়ায় শ্রাবণী আঁকড়ে ধরে শীর্ণ হাতে,
পরম যত্নে গত তিন দিনই ভোর থেকেই রাতে
পরম মমতায় মোহাচ্ছন্ন বিমোহিত মন প্রথম প্রেম
সলজ্জ চোখে চোখ শুভ দৃষ্টি আকর্ষণের রূপে মুগ্ধ
হই, ঐ দীঘল কালো চোখের আলো পড়তেই ভূমিকম্প
স্পন্দন আলোড়িত মন আজও এই জরাজীর্ণ শ্রাবণীর
দেহটি আলিঙ্গনে থর থর করে কাঁপে প্রাণ, তির তির করে
কাঁপছে চোখের পাতা, শুষ্ক ঠোঁটে অপুষ্ট শব্দ " এত ভালোবাসা
সহ্য হলো না সোম, ধন্য আমি গত তিরিশটা তোমার প্রেমে- ---"
থেমে থেমে কথাও শেষে যায় থেমে আমাদের দুজনার চোখে
প্লাবন, ভরা মেঘনার জলে ভেসে যায় মন, শ্রাবণী মৃতদেহ
জানি না জড়িয়ে ছিলাম, মায়ের পায়ের কাছে উপুড় ফুরিয়ে
কাঁদছে কিশোরী উর্মি কনিষ্ঠ কন্যা, আমার ব্যক্তিগত শোক
সড়িয়ে রেখে, " ঊর্মি তুই মা কাছে আয় মা !"
বোনের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রচন্ড ঢেউয়ের মতন- ---
বৃক্ষের মত দুহাতে জড়িয়ে শক্ত করে ধরি, ঝড় তান্ডব
ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর এক রাতেই তাঁর ( শ্রাবণী আত্মা) যাত্রা
শুভ মুহূর্তে ( শ্রাবণী পরম ভক্তিমতন - আধ্যাত্মিক উন্নতির
জন্য যথাসাধ্য সাধন ভজন পুজো পাঠ রাতে দিনে গৃহিণী
দায়িত্ব পালনে এর পর ছিল পথশিশুদের কল্যাণ সমিতির
সম্পাদিকা, দশ হাতে কাজের ক্ষমতা ঈশ্বরের বিশ্বাসী
ছিলেন তাই বুঝি মানুষের সেবা আর ঘরের ভিতর ও বাহিরে
অন্তরে অন্তরে মানুষের প্রতি প্রেম তাঁর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক
জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলো মানবতা, কত ক্ষুদ্র আমি
স্ত্রীর মৃত্যু আর আমার একান্ত আপন দুই পুত্র ও এক ঐ ঊর্মি
শোকাচ্ছন্ন আমার চেয়ে শতসহস্র গুন বেশী আজ ওরা মাতৃহারা।
মনে দূর হতে ভেসে রবীন্দ্রনাথের গান "আমার প্রাণের মাঝে সুধা
আছে চাও কি " " আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ দহন লাগে
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ---!"
No comments:
Post a Comment