Friday, 10 March 2017

সত্যের সন্ধানে তাঁরা


সত্যের সন্ধানে তাঁরা

শ্যামল  সোম

রামকৃষ্ণ পরমহংস সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তাঁর "পরমহংস রামকৃষ্ণদেবের প্রতি" কবিতাটি লিখেছিলেন:[১০২]
শ্রী রামকৃষ্ণদেবের  1935-6 সালে শত বার্ষিক অনুষ্ঠানে
ইউনিভার্সসিটির  ইনস্টিটিউট হলে রবীন্দ্রনাথ  পৌরোহিত্য করেছিলেন।

বহু সাধকের বহু সাধনার ধারা,
ধেয়ানে তোমার মিলিত হয়েছে তারা;
তোমার জীবনে অসীমের লীলাপথে
নূতন তীর্থ রূপ নিল এ জগতে;
দেশ বিদেশের প্রণাম আনিল টানি
সেথায় আমার প্রণতি দিলাম আনি।।

নিত্যশুদ্ধবুদ্ধমুক্তস্বভাব, দেশকালাদি দ্বারা সর্বদা
অপরিচ্ছিন্ন একমাত্র ব্রহ্মবস্তুই নিত্য সত্য।
অঘটন-ঘটন-পটীয়সী মায়া নিজপ্রভাবে
তাঁহাকে নামরূপের দ্বারা খণ্ডিতবৎ প্রতীত করাইলেও
তিনি কখনও বাস্তবিক ঐরূপ নহেন। ...

নামরূপের দৃঢ় পিঞ্জর সিংহবিক্রমে ভেদ করিয়া নির্গত হও।
আপনাতে অবস্থিত আত্মতত্ত্বের অন্বেষণে ডুবিয়া যাও।[৬৫][৬৬]

সত্যের সন্ধানে যাঁরা।


শ্যামল সোম

সম্পাদিত

আরজ আলী মূলত বস্ত্তবাদী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন।

তিনি অনেক অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন।[১]

আরজ আলীর রচনায় মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদী দার্শনিক প্রজ্ঞার ছাপ রয়েছে।
মানবকল্যাণ ও বিশ্বধর্ম আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের
জন্য বৃত্তি প্রদান, পাঠাগার স্থাপন ও রচনা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেন।

এ ছাড়াও তিনি নিজ দেহ ও চক্ষু মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেন।
মাতুব্বর বরিশালের অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদির,
অধ্যাপক মুহাম্মদ সামসুল হক সহ অন্য অনেক সংখ্যক সাম্যবাদী
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান ছিলো।
তাঁর বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতার কথা তিনি একাধিক গ্রন্থে প্রকাশ করেন।
তার লিখিত বইয়ের মধ্যে ‘সত্যের সন্ধান’, ‘সৃষ্টি রহস্য’, ‘সীজের ফুল’,
‘শয়তানের জবানবন্দী’ অন্যতম। আরজ আলীর রচিত পাণ্ডুলিপির সংখ্যা মোট ১৫টি।

এর মধ্যে তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল ৪টি। এই বইগুলো হলো- ‘সত্যের সন্ধান’ (১৯৭৩),

‘সৃষ্টি রহস্য’ (১৯৭৭), ‘অনুমান’ (১৯৮৩), ও ‘স্মরণিকা’ (১৯৮৮)। [৪]
আরজ আলী মাতুব্বর তাঁর প্রথম বইয়ের প্রচ্ছদও আঁকেন।
বইটি লিখেছিলেন ১৯৫২ সালে।

প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে ‘সত্যের সন্ধানে’ শিরোনামে।
বইটি তাঁকে এলাকায় ‘শিক্ষিত ব্যক্তি’ হিসেবে সুনাম এনে দিয়েছিল।

মুখবন্ধে তিনি লিখেছিলেনঃ “আমি অনেক কিছুই ভাবছি,
আমার মন প্রশ্নে ভরপুর কিন্তু এলোমেলোভাবে। আমি তখন
প্রশ্নের সংক্ষেপণ লিখতে থাকি, বই লেখার জন্য নয় শুধুমাত্র
পরবর্তীকালে মনে করার জন্য। অসীম সমুদ্রের মতন সেই
প্রশ্নগুলো আমার মনে গেঁথে আছে এবং আমি ধীরে ধীরে
ধর্মীয় গণ্ডি হতে বের হতে থাকি।”

তিনি এই বইটিতে দার্শনিক প্রশ্নগুলোর ৬টি শ্রেণীতে তার
প্রশ্ন ও তাদের যৌক্তিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। সেগুলো হলোঃ

প্রথম প্রস্তাবঃ আত্মা বিষয়ক। এই অংশে ৮টি প্রশ্ন।
দ্বিতীয় প্রস্তাবঃ ঈশ্বর বিষয়ক। এই অংশে ১১টি প্রশ্ন।
তৃতীয় প্রস্তাবঃ পরকাল বিষয়ক। এই অংশে ৭টি প্রশ্ন।
চতুর্থ প্রস্তাবঃ ধর্ম বিষয়ক। এই অংশে ২২টি প্রশ্ন।
পঞ্চম প্রস্তাবঃ প্রকৃতি বিষয়ক। এই অংশে ১১ টি প্রশ্ন।
ষষ্ঠ প্রস্তাবঃ বিবিধ। এই অংশে ৯টি প্রশ্ন।
প্রথম আটটি প্রশ্নে তিনি নিজের ভাবভঙ্গি ব্যক্ত করেন।
যেমন - ১। আমি কে? (নিজ) ২। জীবন কি শরীরী বা অপার্থিব? ৩।
মন এবং আত্মা কি একই জিনিস? ৪।
জীবনের সাথে শরীর বা মনের সম্পর্ক কি? ৫।
আমরা কি জীবনকে চিহ্নিত করতে পারি? ৬।
আমি কি মুক্ত? ৭। মরণোত্তর আত্মা শরীর
বিহীন জ্ঞান ধারণ করে? এবং সর্বশেষ, ৮।
কিভাবে শরীররে আত্মা প্রবেশ করে ও বের হয়?

No comments:

Post a Comment