Wednesday, 31 May 2017

চল পাগলি পালাই,

চল পাগলি পালাই ( কাব্য গ্রন্থের নাম )

বাঁশিওয়ালা

চলরে পাগলি পালাই
এ শহর ছেড়ে দূরে
দুর্নীতিতে ছেলে যাওয়া
অনেক দূরে দূরান্তে
ঐ নীল আকাশ ছুঁয়েছে
তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে
রুবি চল দুজনে পালাই।
পরিবেশ দূষণের মাত্র  কী
ভয়ংকর দূষনে শ্বাস বন্ধ
হয়ে আসে, পালিয়ে যাই
যে দিকে দুচোখ যায় এই
রাঙামাটি গেলে কেমন হয় ?
চল পাগলি অলকানন্দার নদীর
ধারে পাশাপাশি বসে নিঃস্তব্ধতা
পরস্পরের সান্নিধ্যে স্নিগ্ধ বাতাসে
উড়ছে তোর চুল, হাঁটুর উপরে
চিবুক, দৃষ্টি কোথায় হারিয়েছে ?
এই উদাসিন অন্য মনস্কতা তোকে
পাগলি তোকে অপরূপা সৌন্দর্যময়ী
দেখে পাগলি দুহাতে জড়িয়ে ভীষন
আদরের করতে ইচ্ছে করছে আমার
আদরের পাগলি চল দূরে কোথাও পালাই।

তারিখ -: 5---1---2017 গদ্য কবিতা পোষ্ট নম্বর  4

মমনে মিতালি তুই আজও আছিস মনে

শ্যামল সোম বাঁশিওয়ালা

গ্রুপের সকল সদস্য সদস্যাদের 
নমস্কার সুপ্রভাতে প্রসন্ন মনে জানাই,
তবু উচাটন মাঝে মাঝেই
প্রতীক্ষিত এক প্রেমিকের
হৃদয়ে রক্তাক্ত ক্ষরণে শিশিরের
ব্যথা অনুভব করে  কতজন?
বিচার্য আমার সর্বনাশের প্রেমে।
এ আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত
অন্যের নয়, স্পন্দনে স্পর্শে
জাগে  স্মৃতির শিহরণ বহমান এই
ঝর্ণা,  তোর কাব্য স্রোতে ভাসি।
সে প্রিয় আমার এক প্রেমিকার
নাম  মিতালি তুই মন পাখি,
তুই আয় উড়ে আয় আমার কাছে,
শেষ কটা দিন প্রেমে রই।
আগামী শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা
অফুরন্ত ভালোবাসা রইল
তোমার জন্য, কে  জানে বাপু
ছবি হয়ে শোলার মালা পড়ে
ঝুলবো, শুভ্র দেওয়ালে পিঠে,
খুব মনে পড়বে তোকে মিতালি?
আশ্চর্য  ! মরার পর কি 
সত্যই  মানুষের প্রেম ভালোবাসা মনে থাকে?

এরই নাম কি ভালোবাসা

শ্যামল সোম  বাঁশিওয়ালা

1) কল্পনা আশ্রিত

মেহরুনেসা তোমাকে ভালোবাসার অপরাধে
মৃত্যু দন্ড ঘোষিত হল ফজরের নিয়ামক শেষে
ফাঁসি হবে আমার বিধর্মী প্রেমের অধিকার নেই
যে কোন ধর্মের অনুশাসনে আত্মীয় স্বজন বহু
প্রতিবেশীর বারণ শাসন হত্যা হুমকি সত্বেও কি
সেই আকর্ষণে পরস্পরের পরিপূরক পরিপূর্ণ
স্বাধীন প্রাপ্ত বয়স্ক তুমি সনামধন্যা বন্যা আমার করবী!

" করবী তোমার মত ভালো
মেয়েকে ভালোবেসে
প্রেমের জ্বলে পুড়ে ছাই
চিতার  ঐ আগুনে ভস্মীভূত
দেহের ছাই আকাশে বাতাসে
ভালোবাসায়  উড়িয়ে  যাই।
সবেবরাতের রাতে মোমবাতি
কি জ্বালাবে আমার  আত্মার শান্তি
কামনায়  তোমার বাড়ির ছাদে মোম
বাতি যূঁই ফুল টবের পাশে যূঁই ফুলের
মালা ঝুলিয়ে দিও আমার ছবিতে।"

2) বাস্তব  জীবনের সত্য

করবী, আমি
মুক্তি যুদ্ধের পূর্বে বাংলাদেশের
ভাষা আন্দোলনের
পঠভূমিকায় বিভিন্ন জেলায়
মানুষের প্রতিক্রিয়া
সমস্যা সামাজিক পরিস্থিতি
উপরে কোলকাতার
যুগান্তর পত্রিকায় ছবি সহ
অত্যাচারের প্রতিবেদন
প্রকাশিত হতো প্রতিদিন
টেলি প্রিন্ট  টেলেস্ক সাহায্যে।
বাংলাদেশের তখন উত্তাল
জনগণের প্রতিবাদি ঢেউ
আছড়ে পড়ছে যশোর, খুলনা
কুমিল্লা, পাবনা রংপুর
দিনাজপুর সিলেট চিটাগাং
ময়মনসিংহ  এসে শৈশবের
স্মৃতি বিজড়িত বিমোহিত
আমার সাধের ময়মনসিংহ
ভাবো প্রবণ সত্যি সত্যিই হয়ে
প্রেমে পড়েছিলাম শেকড়ের টান।
হঠাৎই খবর এলো ঢাকার
টিকাতলি অঞ্চলে বহু বছরের
দৈনিক পত্রিকা  ইত্তেফাক
খবরের কাগজ  অফিস দাউ দাউ
জ্বলছে আগুন, সাংবাদিক বন্ধু
বান্ধব  ভীষণ ব্যাস্ত হল নিরাপত্তা নিয়ে
সর্বস্তরের মানুষের  আমার প্রতি
ভালোবাসাই উদগ্রীব।
কোলকাতা থেকে আগত
সাংবাদিক শ্যামল সোম  এর নাম
রাজাকার বাহিনী জনৈক পত্রবাহি
পাকিস্তান পন্থী সাংবাদিক
কাশেম আহমেদ খান সেনাদের 
কাছে অর্থের বিনিময়।
বললাম এই আর আশ্চর্য কী
পলাশীর যুদ্ধে প্রমাণ  আছে।
ফারুক হাসান ভাই জোর করে
নিয়ে গেল ওদের দেশের
ময়মনসিংহ  এর কাছেই
ত্রিশাল সবুজের সমারোহ গ্রাম।

বাংলাদেশের বহু উচ্চ শ্রেনীর 
নেতা নেত্রী লেখক কবি
বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক 
অধ্যাপিকা বহু মানুষ কোটি
মানুষের অস্থায়ী আশ্রয়ের 
ব্যাবস্থা কিছু দায়িত্ব শেষে
ফারুকের সাথেই আবার ফিরে
এলাম ময়মনসিংহ এ
ওর খালুর বিশাল  বাগান
বাড়িতে আশ্রয় পেলাম।
ফারুকের এই খালু মেশোমশাই
বিখ্যাত সাংবাদিক চল্লিশ সালে
পাকিস্তানে ডন ইংরেজি পত্রিকা
সম্পাদক মন্ডলের সদস্য
ছিলেন, 1952 সালের আগেই
পাকিস্তান থেকে পরিবার নিয়ে
ঢাকার বাড়িতে ফিরে আসেন
এই মোতিহুর রহমান সাহেব
বাহান্ন সালের ভাষা আন্দোলন
প্রথম সারির নেতা ছিলেন।
পরে ইত্তেফাক খবরের কাগজের
সম্পাদক ছিলেন, সেই
ইত্তেফাক খবরের কাগজের
অফিস আগুনে ভস্মীভূত
স্বাভাবিক ভাবেই শোকাচ্ছন্ন
মুহ্যমান শোকার্ত প্রথম দর্শন
সৌম্যকান্তি দীর্ঘকায় আজত
লম্বু বাহু, প্রণাম করতেই
আলিঙ্গন করলেন, কোলকাতার
যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক
বিবেকানন্দ  মুখার্জির, সমর সেন
কথা জিজ্ঞেস করলেন।
আমিও সাংবাদিক মুক্তি যুদ্ধের
প্রাক্কালে  সংবাদ সংগ্রহ করছি
উৎসাহিত হলেন,
প্রবীন বৃদ্ধের কাছে শুনতাম ভারতবর্ষের
দেশ ভাগের পটভূমির ইতিহাসের
ঘটনার পরম্পরা রক্তাক্ত
দাঙ্গার সময়ে উনি ছেচল্লিশ সালে
কোলকাতার Predency
Collage passout করে
কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন
কি ভাবে দাঙ্গা পীড়িত মানুষের
পাশে ছিলেন বঙ্কিম মুখার্জির
পাশে থেকে কত আন্দোলন
সামিল হয়েছিলেন ধর্ম সম্পর্কে
বিশ্বাস করতেন মানবতার ধর্ম,
কাকাবাবুর মুজাপফার আহমেদ
জীবন দর্শন ছিল তাঁর মননে
চিন্তনে অসম্ভব অসামপরদায়িক
ভালমানুষ কাছ থেকে নিয়মিত
ক্লাস নিতাম তাঁর জ্ঞানের ভান্ডার
জার্মান করে দিতেন আমাকেও 
লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন
" রক্তের  অক্ষরে বাংলার ইতিহাস"
বৃহৎ গ্রন্থ প্রকাশ করে ছিলাম
পরবর্তী কালে ওঁনাকে
উৎসর্গিত করেছিলাম।
আমার দেখাশোনার ভার দিয়েছিলেন
কনিষ্ঠ  কন্যা করবী নামে
ফুলের মত সৌন্দর্যে আন্তরিকতা 
সহজ সরল স্বাভাবিক ভাবেই
বিমুগ্ধ ছিলাম, আমাদের পরস্পরকে
পরস্পরের কাছে এনে ছিলেন
রবীন্দ্র সঙ্গীত,  অসামান্য কন্ঠে
রবীন্দ্র সঙ্গীত ছিল পড়াশোনা মাঝে
পরিশ্রান্ত  মনের চাপ কমাতে দুঃখ
ভোলাতে মৃত্যুর  আতঙ্ক  এ ভীত
পরাণের করবীর গানে বারেবারে
ফিরে পেতাম জীবনী শক্তি!


পারাপার চলচ্চিত্র চিত্র নাট্য


পারাপার --  ( অমল ভ ট্টা চা র্যের ছেঁ ড়া ডেয়েরী )( ১/অ ভাগ )

শ্যামল সোম

সোমনাথ বাবু যখন তাঁর মাতৃভূমি থেকে চিরদিনের মতো চলে যাচছেন।
সেই দিন রাতে 8-30 P.M at New Delhi Sarabar Hall the
celebration of Freedom of India was commenced,  After hoisting National Tricolour Flag,  Pundit Nehru had deliver his historical lecture.

ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭ ব্রিটিশ সংসদের একটি অধিনিয়ম ছিল
যে ব্রিটিশ ভারত কে দুটি নতুন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে বিভাজিত করেঃ
ভারত এবং পাকিস্তান। ১৮ জুলাই, ১৯৪৭ এ এই অধিনয়ম রাজকীয়
সম্মতি প্রাপ্ত করে, এবং দুটি নতুন দেশ ১৫ আগস্টে,১৯৪৭ এ অস্তিত্ব
আসেন. নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজের পরাধীন
ভারতের শেষ সংবিধান ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ কার্যকার থাকবে।

১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ব্রিটেনের রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় ব্রিটেনের পক্ষে আভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনোরকম
সাহায্য লাভ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের লেবার সরকার বুঝতে পারেই
সেই পরিস্থিতে ভারতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল
দেওয়ার ক্ষমতা বা অর্থবল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী হারিয়ে ফেলেছে।
তাঁরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ সালের
গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে দেন যে, ১৯৪৮ সালের জুন
মাসের মধ্যে ভারতের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের
হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়।
দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদনীন্তন
ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন।
১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহেরু, আবুল কালাম আজাদ,
মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেডকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী
নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ
সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি
নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়।

লক্ষাধিক মুসলমান, শিখ ও হিন্দু শরণার্থী র‌্যাডক্লিফ লাইন পেরিয়ে নিরাপদ
দেশে আশ্রয় নেন। পাঞ্জাবে শিখ অঞ্চলগুলি দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়।
বাংলা ও বিহারে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতি দাঙ্গার প্রকোপ কিছুটা প্রশমিত করতে
সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ২৫০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ লোক সীমান্তের
দুই পারের দাঙ্গায় হতাহত হয়।[৪] ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন পাকিস্তান
অধিরাজ্য জন্ম নেয়। করাচিতে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এই রাষ্ট্রের প্রথম গভর্নর-
জেনারেল হিসেবে শপথ নেন। মধ্যরাতে অর্থাৎ, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট
সূচিত হলে জওহরলাল নেহেরু তাঁর বিখ্যাত নিয়তির সঙ্গে অভিসার অভিভাষণটি
প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়।
নতুন দিল্লিতে নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন।
মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।

Once elected, Nehru headed an interim government, which
was impai গর্জে উঠল, শিক্ষিত,  বুদ্ধিজীবী বাঙালি, কারণ তাঁরা, উকিল, ডাক্তার, ব্যবসায় কাজে, ও নানান রুজি রোজগারে, বিভিন্ন চট কলে, চিনি মিলে, কাপড়ে কলে পরবর্তী সময়ে বহুকাল পরে, --এই দুই বাংলার শ্রমজীবী কৃষক, শ্রমিক, কলমজীবী, বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত বুদ্ধিজীবীরা মাঝে মাঝে আন্দোলনে অংশ নিতে এগিয়ে আসছে। বিগত আন্দোলনে সাধারণ জনতা ঐ আন্দোলনে ঐ 1905 সালে মানসিক ভাবে বাংলা ভাগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল তা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
স্বয়ং ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় নিরবে মেনে নিয়ে ছিলেন, 1857 সালে সিপাই বিদ্রোহ ! প্রথম ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বা বৃহৎ জন আন্দোলনের ( আমার সন্দেহ আছে) সময় ঐ মেট্রোপলিটন স্কুলে ইংরেজ সিপাই ছাউনি বসে, সরকার বাহাদুর হুকুমে, তিনি পঠন পাঠন বন্ধ করে দেন।
বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ, প্রাচীন কালে, ধর্মান্ধ,  উন্মাদ, উগ্র মৌলবাদী হিন্দু যদিও অনেক হিন্দু জানে না হিন্দু সনাতন ধর্ম,  হিন্দু ঘরে জন্ম করেই সে হিন্দু ধর্মী, কোন পুজো পাঠ,  আচার অনুষ্ঠান, কিছু মানতে হয় না, এমন কি ডাকাতি  করতে যাওয়ার আগে মা কালকে পুজো করে, পশু সময় বিশেষে নর বলি দিয়ে মা কালকে তুষ্ট করে দল বেঁধে ডাকাতি করতে বেড়তো।
সম্পর্কে সম্প্রতি কোন কালেই ছিলো না, মুসলমানদের শাসন করলেও নিম্ন শ্রেণীর, দরিদ্র হিন্দুদের উপর উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের অকথ্য নির্যাতন, অস্পৃশ্যতা,  অত্যাচার, ছুৎমার্গ,  দরিদ্রদের মনে হীনমন্যতা, দারিদ্রতা,  শিক্ষার অভাব, আত্মরক্ষার জন্য ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় লক্ষ্য লক্ষ্য অসহায় মানুষ। কিন্তু বাঙালি সুলভ কমল মন, জাত্যভিমান,  বাঙালিকে আজও হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের উর্ধে উঠে দুই সম্প্রদায় মানুষ সংখ্যা নগন্য হয়তো, কিন্তু তারা এক  আত্মা বোধ করেন। সনাতন ধর্মের একেশ্বর ব্রহ্মম নিরাকার,  ইসলাম ধর্মে একই নিরাকার আল্লাহ র উদ্দেশ্যে নামায, মোলাকাত করেন।
প্রকৃত সত্য যে পৃথিবীর কোন ধর্মের সাথে কোন ধর্মের বিরোধ নেই,  মুষ্টিমেয় কিছু উগ্রপন্থী, কট্টর মৌলবাদী, মানবতার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করছেন, একান্ত এই তাদের বিশ্বাস, তাদের ধর্মীয় গ্রন্থাদি শ্রেষ্ট, একমাত্র  তাদের ধর্ম  শ্রেষ্ট, অদ্বিতীয় এবং প্রত্যেকের উচিত তাদের ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া।এই মনোভাব সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে বিরাজমান।
অনেকে ধিক্কার জানায় পৃথিবীর  বিভিন্ন  ধর্ম পরস্পরের বিরুদ্ধতা কতটা সঠিক মূল্যায়ন করেছেন।
বিভিন্ন প্রান্তে প্রান্তরে দরিদ্র মানুষের কাছে প্রথম প্রয়োজনীয় কী ?
কতটা রোজগারের ধানদা বাঙালি জাতিকে প্রেরণা  জুগিয়েছে ?

১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ব্রিটেনের রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ব্রিটেনের পক্ষে আভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনোরকম সাহায্য লাভ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের লেবার সরকার বুঝতে পারেই সেই পরিস্থিতে ভারতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বা অর্থবল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী হারিয়ে ফেলেছে।[২][৩] তাঁরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে দেন যে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদনীন্তন ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহেরু, আবুল কালাম আজাদ, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেডকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়।

লক্ষাধিক মুসলমান, শিখ ও হিন্দু শরণার্থী র‌্যাডক্লিফ লাইন পেরিয়ে নিরাপদ দেশে আশ্রয় নেন। পাঞ্জাবে শিখ অঞ্চলগুলি দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। বাংলা ও বিহারে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতি দাঙ্গার প্রকোপ কিছুটা প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ২৫০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ লোক সীমান্তের দুই পারের দাঙ্গায় হতাহত হয়।[৪] ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন পাকিস্তান অধিরাজ্য জন্ম নেয়। করাচিতে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এই রাষ্ট্রের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হিসেবে শপথ নেন। মধ্যরাতে অর্থাৎ, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সূচিত হলে জওহরলাল নেহেরু তাঁর বিখ্যাত নিয়তির সঙ্গে অভিসার অভিভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়। নতুন দিল্লিতে নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।

১৯৩৪ সালে চৌধুরী রহমত আলী তাঁর "নাও অর নেভার" (Now or Never) পুস্তিকায় এই নামটির প্রস্তাব রাখেন, । [২] ফার্সি, সিন্ধি, ও উর্দু ভাষায়, "পাকিস্তান" নামটির অর্থ "পবিত্রদের দেশ"। নামটি আসে পাকিস্তানের তৎকালীন পশ্চিম অংশের পাঁচটি রাজ্যের নাম থেকে:

পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর একটি ভাষণ দিয়েছিলেন দেশভাগের দু'মাস আগে ৩রা জুন ১৯৪৭ সালে এবং অন্যটি ১১ই আগস্ট ১৯৪৭-এ পাকিস্তান গণপরিষদে৷ ঐতিহাসিক এই দুটি ভাষণই অল ইন্ডিয়া রেডিও (এআইআর)-র মহাফেজখানায় সংরক্ষিত ছিল এতগুলি বছর৷ যা পাকিস্তান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের প্রধান মুর্তাজা সোলাঙ্গি ২০১১ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও পরিদর্শনে এসে জানতে পারেন৷
তারপর ২০১২ সালের মার্চ মাসে অল ইন্ডিয়া রেডিও-র মহানির্দেশক লীলাধর মাণ্ডলোইকে চিঠি দিয়ে জিন্নাহর ঐ দুটি ভাষণের রেকর্ডিংস পাকিস্তানকে দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়৷ তাতে সাড়া দিয়ে এআইআর সম্প্রতি তা ইন্টারনেটে ‘আপলোড' করলে পাকিস্তান তা ‘ডাউনলোড' করে নেয়৷ পরো তার সিডিও করা হয়৷ রেকর্ডিংস পাবার পর পাকিস্তান বেতারের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের প্রধান এডিটর জাভেদ খান জাদুন ভারতের এই সহযোগিতাকে বিপুলভাবে স্বাগত জানান৷ জিন্নাহর ঐ ভাষণ কবে প্রচার করা হবে সে সম্পর্কে উনি বলেন, ‘‘এডিটোরিয়াল স্তরে এখনও এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি৷ তবে ভাষণ দুটি প্রচার করা হবে কোনো একটি বিশেষ দিনে৷ হয়ত বা সেটা হতে পারে এ বছরের ১১ই সেপ্টেম্বর, জিন্নাহর মৃত্যু বার্ষিকীতে৷

আকাশবাণীর মহাফেজখানায় সংরক্ষিত পাকিস্তানের জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর দুটি ঐতিহাসিক ভাষণের রেকর্ডিংস দেশটির হাতে তুলে দিলেন ভারতীয় বেতার সংস্থার মহানির্দেশক (ফাইল ফটো)
১৯৪৭ সালের জুন মাসে দিল্লি থেকে দেয়া জিন্নাহর ভাষণে ছিল উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ কোনদিকে, অর্থাৎ ভারতে যাবে নাকি পাকিস্তানে যাবে, সে বিষয়ে গণভোটের কথা৷ গণভোট না হওয়া পর্যন্ত শান্তি বজায় রেখে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য মুসলিম লীগের প্রতি তাঁর আবেদনও ছিল তাতে৷
দ্বিতীয় ভাষণটি ছিল ১১ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদে দেয়া৷ ঐ ভাষণ প্রকৃত অর্থেই ছিল ঐতিহাসিক৷ সেখানে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ওপরই সবথেকে বেশি জোর দিয়েছিলেন৷ জিন্নাহর রাজনৈতিক দর্শনে ধর্মনিরপেক্ষতার এক দলিল হিসেবে চিহ্নিত সেই ভাষণ৷ ভারতের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজিনী নাইডু জিন্নাহকে অভিহিত করেছিলেন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির দূত হিসেবে৷
প্রসঙ্গত, হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির সভাপতি এল. কে আডবানি ২০০৫ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়ে জিন্নাহর মাজারে লিখে আসেন, ‘‘এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যাঁদের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে, আবার এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাঁরা ইতিহাস গড়েন৷ জিন্নাহ সেই
পাকিস্তানের গণপরিষদে দেয়া ঐ ভাষণে জিন্নাহ বলেছিলেন, পাকিস্তানে জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকার৷ ধর্মীয় অর্থে একজন হিন্দু বা মুসলিম হতে পারেন, তবে রাজনৈতিক অর্থে সকলেই পাকিস্তানের নাগরিক৷

শ্রী রামকৃষ্ণদেব বহু বছর আগে বলে গিয়েছিলেন জাতি ভেদ কি ভাবে দূরীভূত করা যায়। সবাই যদি ভক্ত হয়ে যায়, যে  যার  স্বধর্মে সত্যনিষ্ঠ নিয়ে,  স্বধর্মে অনুশাসন পালন করেন, মনে যদি  ভক্তি ভাব উদয় হয়, পরম ভক্ত হয় জাতি উঠে যাবে,  ভক্তের একটাই জাত, সে ভক্ত।
লালন গানে বলছেন " সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে "
উনি ছিলেন মহান ভক্ত তাই তিনি গান গেয়েছিলেন, রাধা  কৃষ্ণ, গৌরাঙ্গ,   নিমাই আবার মহান মেহেরবান সম্পর্কেও গান বেঁধে ছিলেন।

হিন্দু মুসলমানের সম্পর্কে বলছেন উভয়ে যে যার ধর্ম নিষ্ঠা সহকারে পালন করুক।
উভয়ের মধ্যে পর্বত  সমান বিভেদ প্রাচীর রয়েছে, এই প্রাচীর ভাঙা সম্ভব যদি   পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস,  সম্প্রীতি, পরস্পরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, সৌভ্রাতৃত্ব, উন্নত করা যায়। প্রায় এই ভাবের উপর শ্রী শ্রী ঠাকুর বলেছিলেন,  শব্দ আমি নিজে সাজিয়েছি এর জন্য ক্ষমা করবেন।
সুবল চন্দ্র সাহা : ডিসেম্বর মাস। মহান বিজয় দিবসের মাস। এ মাসের ১৬ তারিখে প্রিয় মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত হয়। অর্জিত হয় দীর্ঘকালের আকাংখিত স্বপ্ন নিয়ে ঘেরা জাতীয় মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে হাজার বছর পরে প্রথম বাঙালী রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটে। তবে এ বিজয় অনায়াসে এবং আপোষের ভিত্তিতে আসেনি, আসেনি পরাশক্তির আলোচনায় নিষ্কন্টকে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের সীমাহীন আত্মত্যাগ ও চারলক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা বাঙালীর শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ বিজয় একাধারে যেমন চরমতম আনন্দ ও উল্লাসের, তেমনি বেদনাবিধূরও বটে।

ইতিহাসের নিরিখে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এ বিজয় কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। নয় মাসের যুদ্ধের মধ্যেই এর ব্যাপ্তি সীমাবদ্ধ নয়। এ বিজয়ের দীর্ঘ পটভূমি রয়েছে, রয়েছে হাজার বছরের মুক্তি সংগ্রামের এক অনন্য ইতিহাস। বিট্রিশের পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ দিন স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে হয়েছিল। অবশেষে ১৯৪৭ সনে এ উপমহাদেশে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। পাকিস্তান ও ভারত। মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি-জাতিতত্বের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তান। ২০০০ মাইল ব্যবধানের দু’টি ভিন্ন সংস্কৃতির ভূ-খণ্ড নিয়ে গড়ে তোলা পাকিস্তানের ভিত্তি ছিল ধর্ম। ফলে উভয় অঞ্চলের জনগনের ভেতর ক্রমাগত ধর্মীয় উন্মদনা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। হিংসা, বিদ্বেষ ও জাতিগত দ্বন্ধে ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্র গঠিত হয় জাতি ভিত্তিক, ধর্ম ভিত্তিক নয়। কারন ধর্ম জাতীয়তার একটি উপাদান মাত্র। আর জাতীয়তার অন্যতম প্রধান উপাদান হল মানুষের সংস্কৃতি। সঙ্গঁত কারনেই পাকিস্তান সৃষ্টির গোড়াতেই রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি বাঙালীর কৃষ্টি, সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাংঘর্ষিক ছিল। তবে শত চেষ্টা করেও পাকিস্তান বাঙালীর সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি, পারেনি বাঙালীর অগ্রযাত্রার পথকে ব্যাহত করতে।

১৯৪৮ সনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এ অনুষ্ঠানে উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষনা দেন। বাঙালীর সদ্যপ্রাপ্ত স্বাধীনতালাভের মোহভঙ্গ ঘটে। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ছাত্র-জনতা বিক্ষোপে ফেটে পড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র জনতার নেতৃত্ব দেন। ১১ই মার্চ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। কারাবরণ যেন তাঁর জীবনে অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ১৯৫২ সনের ভাষা আন্দোলনের সময় মাতৃভাষার দাবীতে জেল খানায় অনশন শুরু করেন। ২ বছর কারাবরনের পর বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করেন। ষাটের দশকে বাঙালী জাতির শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখর এক নেতা হিসেবে আর্বিভূত হন। ১৯৬৬ সনে তিনি বাঙালীর মুক্তিসনদ ৬ দফা ঘোষণা করেন। বাঙালী জাতির আত্ম নিয়ন্ত্রনের অধিকারের দাবিতে দেশব্যাপী এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী আখ্যায়িত করে তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজু করেন। প্রচণ্ড গণআন্দোলনের মুখে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খাঁন পদত্যাগ করেন। ১৯৬৯ সনে ইয়াহিয়া খাঁন পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। পূর্ব বাঙালার আপামর জনগন পাকিস্তানী শাসক ও শোষকদের বিরুদ্ধে ক্রোধে ফেটে পড়ে। ১৯৭০ সনে গণরোষ প্রশমিত করতে ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। কিন্তু তাল বাহানা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে  ইয়াহিয়া খাঁন ক্ষমতা হস্তান্তর করে না। বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ সভায় উপস্থিত হয়। জনসমুদ্রের উপস্থিতিতে তিনি উদাত্ত আহবান জানিয়ে ঘোষণা করেন এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।  তিনি আরও বলেন যার যা কিছু আছে তা নিয়া শত্রুর মোকাবেলা কর।

১৯৬৩ সনের ১৯ নভেম্বর আব্রাহিম লিংকনের গ্যের্টিসবার্গ এ্যাড্রেসটি যেমন ছিল আমেরিকার স্বাধীনতার মূলভিত্তি। তেমনি ১৯৭১ সনের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল বাঙালী জাতীর ঐক্যের দার্শনিক ভিত্তি। অত:পর ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চ পাকিস্তানের জান্তা অতর্কিতে বাঙালী ওপর সশস্ত্র আক্রমন চালায়। নিরীহ জনগণকে নির্মম ভাবে হত্যা করতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ গ্রেফতার হবার পূর্বক্ষণে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ের ১৩ দিন চূড়ান্তরূপ পরিগ্রহ করে। ১৯৭১ সনের ডিসেম্বর ৩ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কোলকাতার প্যারেড ব্রিগেডে অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।

নতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের
হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়।
দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদনীন্তন
ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন।
১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহেরু, আবুল কালাম আজাদ,
মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেডকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী
নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ
সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি
নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়।

লক্ষাধিক মুসলমান, শিখ ও হিন্দু শরণার্থী র‌্যাডক্লিফ লাইন পেরিয়ে নিরাপদ
দেশে আশ্রয় নেন। পাঞ্জাবে শিখ অঞ্চলগুলি দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়।
বাংলা ও বিহারে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতি দাঙ্গার প্রকোপ কিছুটা প্রশমিত করতে
সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ২৫০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ লোক সীমান্তের
দুই পারের দাঙ্গায় হতাহত হয়।[৪] ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন পাকিস্তান
অধিরাজ্য জন্ম নেয়। করাচিতে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এই রাষ্ট্রের প্রথম গভর্নর-
জেনারেল হিসেবে শপথ নেন। মধ্যরাতে অর্থাৎ, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট
সূচিত হলে জওহরলাল নেহেরু তাঁর বিখ্যাত নিয়তির সঙ্গে অভিসার অভিভাষণটি
প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়।
নতুন দিল্লিতে নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন।
মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।

Once elected, Nehru headed an interim government, which
was impaired by outbreaks of communal violence and political
disorder, and the opposition of the Muslim League led by
Muhammad Ali Jinnah, who were demanding a separate
Muslim state of Pakistan. After failed bids to form coalitions,
Nehru reluctantly supported the partition of India, according
to a plan released by the British on 3 June 1947. He took office
as the Prime Minister of India on 15 August, and delivered his
inaugural address titled "Tryst with Destiny".

"Long years ago we made a tryst with destiny, and now the
time comes when we shall redeem our pledge, not wholly or
in full measure, but very substantially. At the stroke of the
midnight hour, when the world sleeps, India will awake to life
and freedom. A moment comes, which comes but rarely in history,
when we step out from the old to the new, when an age ends,
and when the soul of a nation, long suppressed, finds utterance.
It is fitting that at this solemn moment we take the pledge of
dedication to the service of India and her people and to the
still larger cause of humanity."

পারাপার (অমল ভট্টাচার্যের ছেঁড়া ডায়েরি ) 3rd ভাগ

শ্যামল  সোম।

লর্ড কার্জন তৎকালীন গভর্নর হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন ছিন্ন করার অভিপ্রায়ে বাংলা, তখন বৃহত্তর বাংলা আসাম, উড়িষ্যা,  বিহারের
অনেকটা অংশ বাংলার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাই বিশাল রাজ্য এই অজুহাতে বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করে পূর্ব বঙ্গ ও পশ্চিম বঙ্গের নামে দুটি পৃথক রাজ্য পরিনত করে আইন ঘোষিত হল।
সাময়িক ধর্মের জিগির ভুলে আবেগ তাড়িত হয়ে বঙ্গ ভঙ্গ এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠল, শিক্ষিত,  বুদ্ধিজীবী বাঙালি, কারণ তাঁরা, উকিল, ডাক্তার, ব্যবসায় কাজে, ও নানান রুজি রোজগারে, বিভিন্ন চট কলে, চিনি মিলে, কাপড়ে কলে পরবর্তী সময়ে বহুকাল পরে, --এই দুই বাংলার শ্রমজীবী কৃষক, শ্রমিক, কলমজীবী, বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত বুদ্ধিজীবীরা মাঝে মাঝে আন্দোলনে অংশ নিতে এগিয়ে আসছে। বিগত আন্দোলনে সাধারণ জনতা ঐ আন্দোলনে ঐ 1905 সালে মানসিক ভাবে বাংলা ভাগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল তা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
স্বয়ং ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় নিরবে মেনে নিয়ে ছিলেন, 1857 সালে সিপাই বিদ্রোহ ! প্রথম ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বা বৃহৎ জন আন্দোলনের ( আমার সন্দেহ আছে) সময় ঐ মেট্রোপলিটন স্কুলে ইংরেজ সিপাই ছাউনি বসে, সরকার বাহাদুর হুকুমে, তিনি পঠন পাঠন বন্ধ করে দেন।
বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ, প্রাচীন কালে, ধর্মান্ধ,  উন্মাদ, উগ্র মৌলবাদী হিন্দু যদিও অনেক হিন্দু জানে না হিন্দু সনাতন ধর্ম,  হিন্দু ঘরে জন্ম করেই সে হিন্দু ধর্মী, কোন পুজো পাঠ,  আচার অনুষ্ঠান, কিছু মানতে হয় না, এমন কি ডাকাতি  করতে যাওয়ার আগে মা কালকে পুজো করে, পশু সময় বিশেষে নর বলি দিয়ে মা কালকে তুষ্ট করে দল বেঁধে ডাকাতি করতে বেড়তো।
সম্পর্কে সম্প্রতি কোন কালেই ছিলো না, মুসলমানদের শাসন করলেও নিম্ন শ্রেণীর, দরিদ্র হিন্দুদের উপর উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের অকথ্য নির্যাতন, অস্পৃশ্যতা,  অত্যাচার, ছুৎমার্গ,  দরিদ্রদের মনে হীনমন্যতা, দারিদ্রতা,  শিক্ষার অভাব, আত্মরক্ষার জন্য ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় লক্ষ্য লক্ষ্য অসহায় মানুষ। কিন্তু বাঙালি সুলভ কমল মন, জাত্যভিমান,  বাঙালিকে আজও হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের উর্ধে উঠে দুই সম্প্রদায় মানুষ সংখ্যা নগন্য হয়তো, কিন্তু তারা এক  আত্মা বোধ করেন। সনাতন ধর্মের একেশ্বর ব্রহ্মম নিরাকার,  ইসলাম ধর্মে একই নিরাকার আল্লাহ র উদ্দেশ্যে নামায, মোলাকাত করেন।
প্রকৃত সত্য যে পৃথিবীর কোন ধর্মের সাথে কোন ধর্মের বিরোধ নেই,  মুষ্টিমেয় কিছু উগ্রপন্থী, কট্টর মৌলবাদী, মানবতার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করছেন, একান্ত এই তাদের বিশ্বাস, তাদের ধর্মীয় গ্রন্থাদি শ্রেষ্ট, একমাত্র  তাদের ধর্ম  শ্রেষ্ট, অদ্বিতীয় এবং প্রত্যেকের উচিত তাদের ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া।এই মনোভাব সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে বিরাজমান।
অনেকে ধিক্কার জানায় পৃথিবীর  বিভিন্ন  ধর্ম পরস্পরের বিরুদ্ধতা কতটা সঠিক মূল্যায়ন করেছেন।
বিভিন্ন প্রান্তে প্রান্তরে দরিদ্র মানুষের কাছে প্রথম প্রয়োজনীয় কী ?
কতটা রোজগারের ধানদা বাঙালি জাতিকে প্রেরণা  জুগিয়েছে ?

১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ব্রিটেনের রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ব্রিটেনের পক্ষে আভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনোরকম সাহায্য লাভ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের লেবার সরকার বুঝতে পারেই সেই পরিস্থিতে ভারতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বা অর্থবল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী হারিয়ে ফেলেছে।[২][৩] তাঁরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে দেন যে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদনীন্তন ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহেরু, আবুল কালাম আজাদ, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেডকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়।

লক্ষাধিক মুসলমান, শিখ ও হিন্দু শরণার্থী র‌্যাডক্লিফ লাইন পেরিয়ে নিরাপদ দেশে আশ্রয় নেন। পাঞ্জাবে শিখ অঞ্চলগুলি দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। বাংলা ও বিহারে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতি দাঙ্গার প্রকোপ কিছুটা প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ২৫০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ লোক সীমান্তের দুই পারের দাঙ্গায় হতাহত হয়।[৪] ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন পাকিস্তান অধিরাজ্য জন্ম নেয়। করাচিতে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এই রাষ্ট্রের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হিসেবে শপথ নেন। মধ্যরাতে অর্থাৎ, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সূচিত হলে জওহরলাল নেহেরু তাঁর বিখ্যাত নিয়তির সঙ্গে অভিসার অভিভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়। নতুন দিল্লিতে নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।

১৯৩৪ সালে চৌধুরী রহমত আলী তাঁর "নাও অর নেভার" (Now or Never) পুস্তিকায় এই নামটির প্রস্তাব রাখেন, । [২] ফার্সি, সিন্ধি, ও উর্দু ভাষায়, "পাকিস্তান" নামটির অর্থ "পবিত্রদের দেশ"। নামটি আসে পাকিস্তানের তৎকালীন পশ্চিম অংশের পাঁচটি রাজ্যের নাম থেকে:

পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর একটি ভাষণ দিয়েছিলেন দেশভাগের দু'মাস আগে ৩রা জুন ১৯৪৭ সালে এবং অন্যটি ১১ই আগস্ট ১৯৪৭-এ পাকিস্তান গণপরিষদে৷ ঐতিহাসিক এই দুটি ভাষণই অল ইন্ডিয়া রেডিও (এআইআর)-র মহাফেজখানায় সংরক্ষিত ছিল এতগুলি বছর৷ যা পাকিস্তান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের প্রধান মুর্তাজা সোলাঙ্গি ২০১১ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও পরিদর্শনে এসে জানতে পারেন৷
তারপর ২০১২ সালের মার্চ মাসে অল ইন্ডিয়া রেডিও-র মহানির্দেশক লীলাধর মাণ্ডলোইকে চিঠি দিয়ে জিন্নাহর ঐ দুটি ভাষণের রেকর্ডিংস পাকিস্তানকে দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়৷ তাতে সাড়া দিয়ে এআইআর সম্প্রতি তা ইন্টারনেটে ‘আপলোড' করলে পাকিস্তান তা ‘ডাউনলোড' করে নেয়৷ পরো তার সিডিও করা হয়৷ রেকর্ডিংস পাবার পর পাকিস্তান বেতারের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের প্রধান এডিটর জাভেদ খান জাদুন ভারতের এই সহযোগিতাকে বিপুলভাবে স্বাগত জানান৷ জিন্নাহর ঐ ভাষণ কবে প্রচার করা হবে সে সম্পর্কে উনি বলেন, ‘‘এডিটোরিয়াল স্তরে এখনও এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি৷ তবে ভাষণ দুটি প্রচার করা হবে কোনো একটি বিশেষ দিনে৷ হয়ত বা সেটা হতে পারে এ বছরের ১১ই সেপ্টেম্বর, জিন্নাহর মৃত্যু বার্ষিকীতে৷

আকাশবাণীর মহাফেজখানায় সংরক্ষিত পাকিস্তানের জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর দুটি ঐতিহাসিক ভাষণের রেকর্ডিংস দেশটির হাতে তুলে দিলেন ভারতীয় বেতার সংস্থার মহানির্দেশক (ফাইল ফটো)
১৯৪৭ সালের জুন মাসে দিল্লি থেকে দেয়া জিন্নাহর ভাষণে ছিল উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ কোনদিকে, অর্থাৎ ভারতে যাবে নাকি পাকিস্তানে যাবে, সে বিষয়ে গণভোটের কথা৷ গণভোট না হওয়া পর্যন্ত শান্তি বজায় রেখে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য মুসলিম লীগের প্রতি তাঁর আবেদনও ছিল তাতে৷
দ্বিতীয় ভাষণটি ছিল ১১ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদে দেয়া৷ ঐ ভাষণ প্রকৃত অর্থেই ছিল ঐতিহাসিক৷ সেখানে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ওপরই সবথেকে বেশি জোর দিয়েছিলেন৷ জিন্নাহর রাজনৈতিক দর্শনে ধর্মনিরপেক্ষতার এক দলিল হিসেবে চিহ্নিত সেই ভাষণ৷ ভারতের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজিনী নাইডু জিন্নাহকে অভিহিত করেছিলেন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির দূত হিসেবে৷
প্রসঙ্গত, হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির সভাপতি এল. কে আডবানি ২০০৫ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়ে জিন্নাহর মাজারে লিখে আসেন, ‘‘এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যাঁদের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে, আবার এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাঁরা ইতিহাস গড়েন৷ জিন্নাহ সেই
পাকিস্তানের গণপরিষদে দেয়া ঐ ভাষণে জিন্নাহ বলেছিলেন, পাকিস্তানে জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকার৷ ধর্মীয় অর্থে একজন হিন্দু বা মুসলিম হতে পারেন, তবে রাজনৈতিক অর্থে সকলেই পাকিস্তানের নাগরিক৷

শ্রী রামকৃষ্ণদেব বহু বছর আগে বলে গিয়েছিলেন জাতি ভেদ কি ভাবে দূরীভূত করা যায়। সবাই যদি ভক্ত হয়ে যায়, যে  যার  স্বধর্মে সত্যনিষ্ঠ নিয়ে,  স্বধর্মে অনুশাসন পালন করেন, মনে যদি  ভক্তি ভাব উদয় হয়, পরম ভক্ত হয় জাতি উঠে যাবে,  ভক্তের একটাই জাত, সে ভক্ত।
লালন গানে বলছেন " সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে "
উনি ছিলেন মহান ভক্ত তাই তিনি গান গেয়েছিলেন, রাধা  কৃষ্ণ, গৌরাঙ্গ,   নিমাই আবার মহান মেহেরবান সম্পর্কেও গান বেঁধে ছিলেন।

হিন্দু মুসলমানের সম্পর্কে বলছেন উভয়ে যে যার ধর্ম নিষ্ঠা সহকারে পালন করুক।
উভয়ের মধ্যে পর্বত  সমান বিভেদ প্রাচীর রয়েছে, এই প্রাচীর ভাঙা সম্ভব যদি   পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস,  সম্প্রীতি, পরস্পরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, সৌভ্রাতৃত্ব, উন্নত করা যায়। প্রায় এই ভাবের উপর শ্রী শ্রী ঠাকুর বলেছিলেন,  শব্দ আমি নিজে সাজিয়েছি এর জন্য ক্ষমা করবেন।
সুবল চন্দ্র সাহা : ডিসেম্বর মাস। মহান বিজয় দিবসের মাস। এ মাসের ১৬ তারিখে প্রিয় মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত হয়। অর্জিত হয় দীর্ঘকালের আকাংখিত স্বপ্ন নিয়ে ঘেরা জাতীয় মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে হাজার বছর পরে প্রথম বাঙালী রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটে। তবে এ বিজয় অনায়াসে এবং আপোষের ভিত্তিতে আসেনি, আসেনি পরাশক্তির আলোচনায় নিষ্কন্টকে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের সীমাহীন আত্মত্যাগ ও চারলক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা বাঙালীর শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ বিজয় একাধারে যেমন চরমতম আনন্দ ও উল্লাসের, তেমনি বেদনাবিধূরও বটে।

ইতিহাসের নিরিখে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এ বিজয় কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। নয় মাসের যুদ্ধের মধ্যেই এর ব্যাপ্তি সীমাবদ্ধ নয়। এ বিজয়ের দীর্ঘ পটভূমি রয়েছে, রয়েছে হাজার বছরের মুক্তি সংগ্রামের এক অনন্য ইতিহাস। বিট্রিশের পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ দিন স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে হয়েছিল। অবশেষে ১৯৪৭ সনে এ উপমহাদেশে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। পাকিস্তান ও ভারত। মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি-জাতিতত্বের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তান। ২০০০ মাইল ব্যবধানের দু’টি ভিন্ন সংস্কৃতির ভূ-খণ্ড নিয়ে গড়ে তোলা পাকিস্তানের ভিত্তি ছিল ধর্ম। ফলে উভয় অঞ্চলের জনগনের ভেতর ক্রমাগত ধর্মীয় উন্মদনা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। হিংসা, বিদ্বেষ ও জাতিগত দ্বন্ধে ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্র গঠিত হয় জাতি ভিত্তিক, ধর্ম ভিত্তিক নয়। কারন ধর্ম জাতীয়তার একটি উপাদান মাত্র। আর জাতীয়তার অন্যতম প্রধান উপাদান হল মানুষের সংস্কৃতি। সঙ্গঁত কারনেই পাকিস্তান সৃষ্টির গোড়াতেই রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি বাঙালীর কৃষ্টি, সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাংঘর্ষিক ছিল। তবে শত চেষ্টা করেও পাকিস্তান বাঙালীর সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি, পারেনি বাঙালীর অগ্রযাত্রার পথকে ব্যাহত করতে।

১৯৪৮ সনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এ অনুষ্ঠানে উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষনা দেন। বাঙালীর সদ্যপ্রাপ্ত স্বাধীনতালাভের মোহভঙ্গ ঘটে। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ছাত্র-জনতা বিক্ষোপে ফেটে পড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র জনতার নেতৃত্ব দেন। ১১ই মার্চ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। কারাবরণ যেন তাঁর জীবনে অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ১৯৫২ সনের ভাষা আন্দোলনের সময় মাতৃভাষার দাবীতে জেল খানায় অনশন শুরু করেন। ২ বছর কারাবরনের পর বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করেন। ষাটের দশকে বাঙালী জাতির শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখর এক নেতা হিসেবে আর্বিভূত হন। ১৯৬৬ সনে তিনি বাঙালীর মুক্তিসনদ ৬ দফা ঘোষণা করেন। বাঙালী জাতির আত্ম নিয়ন্ত্রনের অধিকারের দাবিতে দেশব্যাপী এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী আখ্যায়িত করে তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজু করেন। প্রচণ্ড গণআন্দোলনের মুখে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খাঁন পদত্যাগ করেন। ১৯৬৯ সনে ইয়াহিয়া খাঁন পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। পূর্ব বাঙালার আপামর জনগন পাকিস্তানী শাসক ও শোষকদের বিরুদ্ধে ক্রোধে ফেটে পড়ে। ১৯৭০ সনে গণরোষ প্রশমিত করতে ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। কিন্তু তাল বাহানা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে  ইয়াহিয়া খাঁন ক্ষমতা হস্তান্তর করে না। বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ সভায় উপস্থিত হয়। জনসমুদ্রের উপস্থিতিতে তিনি উদাত্ত আহবান জানিয়ে ঘোষণা করেন এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।  তিনি আরও বলেন যার যা কিছু আছে তা নিয়া শত্রুর মোকাবেলা কর।

১৯৬৩ সনের ১৯ নভেম্বর আব্রাহিম লিংকনের গ্যের্টিসবার্গ এ্যাড্রেসটি যেমন ছিল আমেরিকার স্বাধীনতার মূলভিত্তি। তেমনি ১৯৭১ সনের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল বাঙালী জাতীর ঐক্যের দার্শনিক ভিত্তি। অত:পর ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চ পাকিস্তানের জান্তা অতর্কিতে বাঙালী ওপর সশস্ত্র আক্রমন চালায়। নিরীহ জনগণকে নির্মম ভাবে হত্যা করতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ গ্রেফতার হবার পূর্বক্ষণে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ের ১৩ দিন চূড়ান্তরূপ পরিগ্রহ করে। ১৯৭১ সনের ডিসেম্বর ৩ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কোলকাতার প্যারেড ব্রিগেডে অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।

ছোটগল্প

অমল ভট্টাচার্যের ছেঁড়া ডায়েরী - পারাপার
শ্যামল সোম

দ্বিতীয় মহাবিশ্ব যুদ্ধে যখন সারা পৃথিবী বিদ্ধস্ত, অখন্ড বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের কবলে লক্ষ লক্ষ শিশু নারী পুরুষ অনাহারে মৃত্যুর মুখে, ঐ ১৯৪১ সালে ডিসেম্বরের এক শীতার্থ রাতে হত দরিদ্র ব্রাহ্মণ সোমনাথ ভট্টাচার্য -এর কুঁড়ে ঘরে আমার, এই অমল -এর জন্ম। আশ্চর্য, এত অভাবেও আমি বেঁচে রইলাম। পুজো বিবাহ শ্রাদ্ধ যজমানের কৃপায়, গাঁয়ে রাধা গোবিন্দের মন্দিরে ও 'দু চার যজমানের বাড়িতে দুবেলা পুজো আরতি করে আর চার বিঘে জমিতে চাষ আবাদ করে কোন ক্রমে সংসারের জোয়াল সোমনাথ বাবু টেনে হিঁচড়ে
চলছিলেন।

কিন্তু যুদ্ধের দামামা বাজতেই অশনী সংকেত দেখা দিলো, ইংরেজ সরকার আর মজুতদারের সর্বনাশা ষড়যন্ত্রে জনগন প্রাণ ধারণেই ব্যতিব্যস্ত, পুজো পাঠ ও তাঁর সাধের পাঠশালা প্রায় উঠে গেলো। দিন আসে, রাত নামে, মানুষ মৃত্যু ও প্রলোভনের শিকার - ক্ষুধার জ্বালায় যৌবনা নারী আজ পতিতা - দরিদ্রতা কী ভয়ংকর - বন্যার জলে বানভাসী ভেসে যায় - সততা, সম্ভ্রম, সম্মান, শালীনতা, মানবতা খুইয়ে - মরার 'পরে খাঁড়ার ঘায়ে দেশ ভাগের ভয়াবহ পরিনামে একটা জাত, এই বাঙালী জাত, কাঙালের পর্যায় আর আমাদের ঘরের মা ও বোনেরা বেশ্যায় পরিনত হয়ে গেলো। সোমনাথ বাবু জন্মভূমির অমোঘ শিকড়ের টানে, ময়মনসিংহ এর মুকতা গাছা 
গ্রামের মায়া ছেড়ে সর্বস্ব হারিয়ে ভিখিরীর মতো কোলকাতার রাস্তায় ভিক্ষে করে দিন যাপনে রাজী ছিলেন না।

গাঁয়ের অনেক হিন্দু পরিবার অনেক কিছু হারিয়ে শেষে পালিয়েছেন। চাষা মরে আশায়। স্ত্রী জয়া আধ পেটা খেয়েও দাঁতে দাঁত চেপে অনেক কঠিন কালের আঘাতেও ভেঙ্গে না পড়েও ধুক ধুক করে টিঁকে আছেন। দুটো কিশোরী মেয়ে, বড় উমা ষোল বছর, ছোট বীনা চোদ্দ, আর আমি তখন ছয় বছর। গাঁয়ের মোড়ল প্রধান ও অন্যান্য পড়শী, তাঁরা অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ১৯৪৭ শে ১৪ই আগষ্ট রাত থাকতেই কাক ভোরে ধুতি খুলে, বাল্য বন্ধু বসীর মিঞার দেওয়া ভালেবাসার দান - লুঙ্গি ফতুয়া ফেজ টুপি 'পরে, দীর্ঘ দিন না কামানো দাড়ি গোঁপের জঙ্গলে হারিয়ে সোমনাথ ভট্টাচার্য হলেন সোলেমান মিঞা।

বসীর মিঞার বিবি আয়েশা জয়াকে কাপড় কানের পাশ দিয়ে ঘোমটা টেনে বোরখা পড়িয়ে দেয়। আফজল মিঞার দাদার তদবীরে ডিস্ট্রিক্ট র্বোডের প্রেসিডেন্টের রেকমেন্টেড পরিচয় পত্রে লেখা আছে ফুলেশ্বরী গ্রামের সোলেমান শেখ, তার বিবি আমিনা ও বাচ্ছাদের নিয়ে কোলকাতায় যাচ্ছে হাসপাতালে দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য। শেষ বারের মত গৃহ মন্দিরে ও গাঁয়ের মাটিতে মাথা নুইয়ে প্রণাম করে গৃহ দেবতা রঘুবীর আর শালগ্রাম শিলা জপের মালার ঝুলিতে বুকের আড়ালে ঝুলিয়ে, হাউ মাউ করে ডুকরে কেঁদে উঠে আছড়ে পড়লেন।

গোফুর, বসীর, আফজল, মোক্তার, হোসেন মিঞা হাত ধরে তুলে বুকে জড়িয়ে চোখের পানী মুছিয়ে সান্তনা দিয়ে মেহেরবানের কাছে দোয়া জানালেন। বৃদ্ধ হোসেন মিঞা বিড় বিড় করে সূরা আওড়াচ্ছেন। লন্ঠন হাতে গাঁয়ের সবাই দল বেঁধে ভীষণ ভালো মানুষ, ইমানদার, সবার খুব প্রিয়, যেন আত্মার আত্মীয় -সোমনাথ বাবুর হাত ধরে পার ঘাটায় আনলেন - চোখের অশ্রু আজ অঝরে ঝরছে। বসীর মিঞা নৌকোর মাঝি আবদুলকে সতর্ক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন।সবাই সোমনাথবাবুকে বুকে নিয়ে গভীর আলিঙ্গনে কাঁদছেন। ছোটরা কেউ কেউ পদম বুসি প্রণাম করছেন। অনেকেরই অক্ষর জ্ঞান হয়েছিল সোমনাথ বাবুর পাঠশালায়।

অন্য দিকে আয়েশাবিবি, মর্জিনা, ফতেমা, জয়ার চোখের পানী মোছাচ্ছে, উমা তার সই নূরজাহাকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে সই-এর বুকেই জ্ঞান হারালো। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আর এক সই সাহিদা - ওদের সাথে পানী দেবার জন্য কলস ভরে এনে ছিলো, সে তাড়াতাড়ি উমার চোখে মুখে পানী দিয়ে অল্প পানী খাওয়াল, আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিল পরম মমতায়, তাই দেখে অনেকেরই চোখ ছল ছল করে উঠলো। বসীরের আম্মী, বৃদ্ধা সুলতানা বিবি বিশাল এক ঝোলায় পথে খাওয়ার জন্য পুলি-পিঠা, নানা রকম খাবার, নিজের হাতে কোটা চিড়া নাড়ু জয়ার হাতে তুলে দিলেন। জয়া তাঁকে প্রণাম করলে তিনি জয়াকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন।

অন্যেরা বয়ে আনছিল সোমনাথ বাবুর কিছু প্রয়োজনীয় কাপড় জামা, একটি শাল, উমার সাধের খাঁচায় ময়না পাখী, বাড়ির তুলসী মঞ্চের মাটি সমেত তুলসী গাছের ছোট চারা। সামান্য সোনার গয়না জয়া পেট কাপড়ে আগেই ভালোভাবে বেঁধে নিয়েছে। বসীর আর হোসেন মিঞা সোমনাথ বাবুকে গাছের আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে হাজার খানেক টাকা ছোটো থলিতে হাতে তুলে দেন। সোমনাথ বাবু ফ্যাল ফ্যাল চেয়ে থাকেন, দুচোখ বেয়ে গড়ায় অশ্রুধারা।

গাছের তলায় নামাজ পাটি বিছিয়ে নদীর পানীতে হাত মুখ ধুয়ে ফজর নামাজ পড়ছেন। আবদুল মাঝি 'বদর বদর' বলে নৌকো ভাসিয়ে দিলো আড়িয়াল খাঁর পানীতে। সোমনাথ বাবু ঈশ্বর ও দেশের মাটিকে প্রণাম করছেন। সূর্যের প্রথম আলোয় রাঙা হয়ে উঠছে আকাশ। আলোয় উদ্ভাসিত অশ্রু সজল চোখে অনেক ভালোবাসার মানুষ তারা কেউই চাইনি দেশভাগ। তারা জানতো দেশভাগের এই ক্ষত থেকে চিরকাল রক্ত ঝরবে।

সোমনাথ আবৃতি করছে --জবা কুসুম---!

পূর্ব আকাশে সূর্য উঠছে। সুনীল আকাশে এক ঝাঁক পাখী উড়ে গেল এপার বাংলা থেকে ওপার বাংলায়। এই জন্যই কবি লিখেছিলেন - "আবার আসিব ফিরে হয়তো মানুষ নয় শঙ্খচিল শালিখের বেশে।"

আবদুল মাঝি লগি ঠেলে আড়িয়াল খাঁ  জলে নৌকো ভাসালো। সোমনাথ বাবু দাঁ ড়িয়ে তাঁর চিরদিনের মত ফেলে যাওয়া ঐ প্রপিতা, পূর্ব পুরুষের জন্মভূমি-জননী জ ন্মভূমিশ্চ গড়িয়সী

হাত যো ড় করে প্রনাম করছেন। আজ আমার প্রনতী গ্রহন পৃথিবী শেষ নমস্কারে

চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসছে দৃষ্ঠি, চশমা খুলে ধূতি ভেবে লুঙ্গি তুলে চোখ মুছতে
থমকে থেমে যান, এখন তাঁর পরনে লু ঙ্গি-হায় ! বিশাল এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
গামছায় চোখ ও চশমা মুছে দূরে তাকিয়ে দেখেন, পারঘাটায় দাঁড়িয়ে থাকা
প্রানের মানুষ গুলো কত দূরে রয়ে গেলো-ক্রমশ ছো ট থেকে ছো ট হয়ে যা চ্ছে--
-বৈ ঠা বাহিছে শামসের, যোয়ান মরদ, পেশী উ ঠছে ফুলে, আবদুল নৌকোর
পাল টাঙ্গিয়ে, হাল ধরে গান গেয়ে উঠে-- " খাঁচার ভিতর অচীন পাখী
কেমনে আসে যায়। "

পূজো করছেন
বিনা বাহ্যিক উপাচার ও উপকরণে-- একমাত্র  সম্বল তাঁর নাম-এবং-
ভক্তি আর নয়নে অবিশ্রান্ত  ধারায় অশ্রু বর্ষন-
এই শেষবার রঘুবীরকে বুকে জড়িয়ে ধরে  মাতৃহারা শিশু,
ডুগড়ে কেঁদে উঠে, সোমনাথ ফুলে ফুলে কাঁদছেন।

মনেমনে আবৃতি করছেন, " যদৃ চ্ছা লাভ সন্তস্টো দ্বন্দ্বা তীতো--যিনি কোনো ইচ্ছা না রেখে যা পান তাতেই তুষ্ট,ঈর্ষা শূন্য, হ র্ষ-শোকাদি দ্ব ন্দ্ব হতে মু ক্ত---
রঘুবীর শাল্গ্রাম শীলা আর উপবীত নদী বক্ষে, আর ক্ত নয়নে-কান্নায় রক্ত জবা চোখে সোমনাথ-- নিক্ষেপ করে বিসার্জন দিলেন। সোমনাথ উপলব্ধি করেছেন তিনি শ্রী কৃষ্ণ পরম ব্র হ্ম-সর্ব ভূতে খলিদং ব্রহ্ম।

সোমনাথ এক মা ত্র পুত্র অমল ঐ ছয় বছর বয়েসে গত কয়েক দিনের সব ঘটনা নিরবে তার শৈশবের কৌতুহলি  নির্বাক দর্শক হয়ে ব ড় ব ড় চোখ মেলে দেখে যাচছে, কি ন্তু হঠত তার বাবাকে বাড়ির  সবাই প্রিয়  ও পরম  কন্ঠে চিতকার উঠে-" বাবা এ আপন কী করলেন ? রঘুবীরকে---নৌকো থেকে ফেলে দিলেন ?
সোমনাথ বাবুর  ভাবে বিহ্বল হয়ে আছেন, তাঁর দু চোখে অশরুধারা বহে যাচছে।

আবদুল বহে যাওয়া  নদীর জল তুলে নৌকোর একধারে সোমনাথ বাবু স্নান সেরে, পূজোর
ধূতি পড়ে, আজ এখনই  শেষ বার গলার উপবিত পৈতে স্পর্শ করেন।
এই উপবীত ধারণ করেছিলেন তাঁর নয় বছর বয়সে-এরপর দীর্ঘ চল্লিশ বছর
এই উপবীত স্পর্শ করে প্রাতে তাঁর আরাধ্য পরম ব্রক্ষ, সর্ব জীবে পূজ্য,
এই জগতের সমস্ত জীব যে কোন দেবতা- ঈশ্বর- নিরাকার -সাকার-এক ঈশ্বর-
যাকেই আরাধনা করুক, প্রার্থনা, ধ্যান করুক, সেই জীবের অজান্তে পৃথিবীর
সকল জীবের প্রার্থনা, উপাসনা, পূজা, আরাধনা সব অর্পিত হয় সেই কালের
সৃষ্ঠি কর্তা, পালনকারী, আবার  তিনিই বিনাশ করছেন,
পরম প্রিয় শ্রী কৃষ্ণ সোমনাথবাবুর বংশের রঘুবীরকে পূজো করছেন
বিনা বাহ্যিক উপাচার ও উপকরণে-- একমাত্র  সম্বল তাঁর নাম-এবং-
ভক্তি আর নয়নে অবিশ্রান্ত  ধারায় অশ্রু বর্ষন-
এই শেষবার রঘুবীরকে বুকে জড়িয়ে ধরে  মাতৃহারা শিশু,
ডুগড়ে কেঁদে উঠে, সোমনাথ ফুলে ফুলে কাঁদছেন।

মনেমনে আবৃতি করছেন, " যদৃ চ্ছা লাভ সন্তস্টো দ্বন্দ্বা তীতো--যিনি কোনো ইচ্ছা না রেখে যা পান তাতেই তুষ্ট,ঈর্ষা শূন্য, হ র্ষ-শোকাদি দ্ব ন্দ্ব হতে মু ক্ত---
রঘুবীর শাল্গ্রাম শীলা আর উপবীত নদী বক্ষে, আর ক্ত নয়নে-কান্নায় রক্ত জবা চোখে সোমনাথ-- নিক্ষেপ করে বিসার্জন দিলেন। সোমনাথ উপলব্ধি করেছেন তিনি শ্রী কৃষ্ণ পরম ব্র হ্ম-সর্ব ভূতে খলিদং ব্রহ্ম।

সোমনাথ এক মা ত্র পুত্র অমল ঐ ছয় বছর বয়েসে গত কয়েক দিনের সব ঘটনা নিরবে তার শৈশবের কৌতুহলি  নির্বাক দর্শক হয়ে ব ড় ব ড় চোখ মেলে দেখে যাচছে, কি ন্তু হঠত তার বাবাকে বাড়ির  সবাই প্রিয়  ও পরম  কন্ঠে চিতকার উঠে-" বাবা এ আপন কী করলেন ? রঘুবীরকে---নৌকো থেকে ফেলে দিলেন ?
সোমনাথ বাবুর  ভাবে বিহ্বল হয়ে আছেন, তাঁর দু চোখে অশরুধারা বহে যাচছে। পারাপার
সৃজনে  শ্যামল   সোম

দৃশ্য কাব্য বিভাজন

গ্রামের বাসিন্দা হিন্দু  ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে
দুর্গা পুজো কমিটির সভাপতি  বসীর মিঞা সমাদৃত
ছোট্ট একচালা  প্রতিমা সামনে শিবনাথ পুজো করছেন।
সবাই উৎসবের আয়োজনে  আনন্দে মেতে  আছেন।

নদীতে নৌকো  চালনার প্রতিযোগিতায়  নদীর পাড়ে
দাঁড়িয়ে  সবাই সবাইকে  উৎসাহ দিচ্ছে ।

শিবনাথ  ও বৃদ্ধ কাদের আলি বিশাল ডাহড় ডাহর
ঝিলের পুকুর পাড়ে  নির্জনে 
ছিপ ফেলে মাছ ধরতে বসে আছে।

বন বাঁদারে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা  সাপ
ফনা মেলে কুণ্ডুলি পাকিয়ে লক লক করছে জীব।

ঝাঁপিয়ে ঝড়ের রাতে তেড়ে বৃষ্টি তুমুল বেগে
বাতাসে উড়ে  যাচ্ছে ঘরের চাল, গাছের ডাল
হুড়মুড়  করে গাছ  উপড়ে চিৎপটাং,  ছাগল ছানা
গাছে তলায় ভিজতে ভিজতে  ডাকছে।

গাছে কাঠবিড়ালী তর তর করে উঠে গেল
কাঠঠোকরা পাখি  আওয়াজ,  ঘুঘু ডাক।

ঝপাং করে  তাল পড়লো।

আসন্ন সন্ধ্যায় আকাশে মেঘের গায়ে
রঙে রঙে রাঙিয়ে দেওয়া আলপনায় ।

শ্যামল সোমের

পারাপার

দৃশ্য বিভাজন  চির  বিদায় লগ্ন

পরস্পরের কাছ থেকে আলিঙ্গন দু হাতে
গলা জড়িয়ে ধরে  উমার বান্ধবীরা কাঁদছে।

খালেদ, বসীর মিঞা শিবনাথের দিকে তাকিয়ে আছে
গাছের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে। গাছে পাখীর বাসা।
টাকার থলিতে অন্য  একজন এসে আরো কিছু টাকা দেয়
রুপোর টাকা
থলিতে টি বাড়িয়ে দেয় শিবনাথের হাতে, শিবনাথ শোকার্ত
দু চোখে জল
পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে  গভীর  আলিঙ্গনে।

অমল খাঁচা থেকে ময়না পাখিটি  উউড়িয়ে  দেয়, উড়ে যাচ্ছে  পাখি
অম্লান হাসি হাসছে অমল ওর বন্ধুদের সাথে ।

উমাকে ঠিক মতো সাজিয়ে গুছিয়ে সাথে নিয়ে  যায় রমনী গণ
নৌকোর কাছে ধীরে ধীরে। নৌকো তে উঠতে সাহায্য করে।

নদীর ওপারে  সূর্যোদ্বয়ের নূতন  সূর্য  উঠছে। নৌকোতে সবাই
ঠাঁই নিয়েছে,

কেউ  মোনা জাত করছে তসবির মালা জপ করে।

মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে প্রার্থনা করছে কেউ।

আবদুলকে সতর্ক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন বসীর মিঞা।

একজন নৌকোর বাঁধার দড়ি খুলে দেয়।

আবদুল  লগি ঠেলে যাত্রা শুরু করে।

ওপারে দাঁড়িয়ে আছে শিবনাথের প্রিয় প্রতিবেশী
একই গ্রামের বাসিন্দা আজন্ম শিকড়ের টান ছিঁড়ে
হৃদয় উপড়ে  ছিন্নমূল শরনার্থী বাঙালি চলে যাচ্ছে
শিবনাথের  দু চোখ জলে ভেসে যায়।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে শুয়ে কাঁদছে উমা
উমাকে জড়িয়ে জয়া পাষাণ মূর্তি নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

শেষ দৃশ্যের অবতারণা হবে

পারাপার  সৃজনে  শ্যামল সোম

দৃশ্য বিভাজন  2) সিকোয়েনস

শেষ রাত্রি  নদী ধরে সিলিউট ফিগার দল বেঁধে  গ্রামের মুসলমান বাসিন্দারা মশাল হাতে খোলা তলোয়ার সড়কি হারিকেন বাক্স প্যাঁটরা মাটির কুজো, বদনা, ময়না পাখি  সমেত খাঁচা ইত্যাদি বহন করে শিবনাথ শোকার্ত দেহের ভারসাম্য সঠিকভাবে
হাঁটতে  পারছেন না বসীর মিঞার বাল্য  বন্ধুর  কাঁধে হাত রেখে লাঠি হাতে  হাঁটছেন।

নৌকো  ঘাটে  কাছে আনছে আবদুল কাদের মাঝি

কেউ ভাত রান্না করে ফেন গালছে। গাছের ডালে  চটের পর্দা  ঠাঁঙগিয়ে দেয়  কজন।

নদীর পাড়ে বসে নাপিতের কাছে একমুখ দাড়ি মুসলমানদের মতো কেটে দেয়
জয়া এক মুসলিম  রমনী হাত থেকে ঘটি নিয়ে  জল পান করছে।

উমাকে নিয়ে  বান্ধবীরা গলা জড়িয়ে কাঁদছে। উমার দেহ  থেকে  থেকে কাঁপছে, আতংকিত ভয়ার্ত চোখ মুখ  ধর্ষিতা  অবসন্ন দেহ হঠাৎই  খিঁচুনি  ওঠে বমি করে
জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বান্ধবীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে পানি চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়
তালপাতার পাখা দিয়ে  বাতাস করে।

শিবনাথ  নদীর জলে স্নান করে  এসে পৈতা খুলে গলায়  ঝোলানো শালগ্রাম শিলা সাথে রাখে।

বসীর মিঞার  হাতে লুঙ্গি  ফতুয়া ফেজ টুপি শিবনাথের দিকে মিনতি ভালোবাসা ভরা দৃষ্টি নিয়ে অপলক চোখে তাকিয়ে আছেন। পরস্পরের দিকে সজল চোখে
তাকিয়ে থাকে।

ধীরে ধীরে  ভেজা ধুতি উপর দিয়ে  লুঙ্গি লুঙি  গলিয়ে পরে নেন, বসীর মিঞার চোখের ইশারায় গলার Shots Division দৃশ্য  বিভাজন

1)
রাতে  গাছের তলায়
শিবনাথ শোকার্ত
বিষন্ন বিষাদে চোখে
জল টল টল করছে
চোখের মণিতে শিখা
কাঁপছে হারিকেন  আলো।

2) রাতে বা দিনে
আগুনে পুড়ছে ঘর গোয়াল
গরুরা  দড়ি ছিঁড়ে পালাতে চাইছে।

3) দিনের বেলা

গ্রামের বাড়িতে, ধানের গোলায়
জ্বলছে ক্ষেতে, মন্দির, আগুন দিল
দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যাচ্ছে মুখে কাপড়ে
ঢাকা, দৌড়ে চলে গেলো।
পৈশাচিক উল্লাসে হাতে অস্ত্র নিয়ে
কাঁধে মুখ
বাঁধা যুবতী অর্ধ নগ্ন শরীর উঠানে
ফেলে, আছড়ে ফেলে চার জন মিলে
হাত পা চেপে ধরে, মুখে গোঁজা গামছা
চরম আনন্দে মেতে ওঠে ধর্ষক, করছে
ধর্ষণ ধর্ষন ধর্ষনের অত্যাচারে আর্তনাদ।

4) ভোর বেলায় নদীর জলে লক্ষী শিবনাথের বড় নাতনী ছোট নাতনী উমা ওদের প্রিয় বান্ধবীদের সাথে নদীর জলে আনন্দে আল্লাদে মেতে পরস্পরের গায়ে নদীর জল ছিটিয়ে স্নান করছে। কেউ  একজন বান্ধবী  গাইছে -- Background  গান বাজছে সে লিপ।
-" যেমন বেণী  তেমন রবে চুল ভিজবো না  "

5) নদীর জলে  নৌকো করে   ঘাটে এসে সোমনাথ  নববধূঁ সুসজ্জিতা জয়াকে নিয়ে
বিবাহ করে দান সামগ্রী সঙ্গে  দু  চার জন লোক।
ঘাটে গ্রামের প্রতিবেশী গ্রামের রমনী বরণ ডালা  কুলো নিয়ে  বিবাহের  গান গাইতে
গাইতে  উলুধ্বনি  ও শঙ্খ ধ্বনি  দিয়ে  নব বধুঁকে বরণ করছে ।  Back ground  শোন যায় পূর্ব  বাংলার বিবাহের গান।

গ্রামের মুরব্বীদের মধ্যে  হুঁকো হাত ঘুরছে, সদা হাস্য মুখে শিবনাথ  ওদের সাথে নদীর
ধারে বসে।

6)
দিনের বেলায় নদী ধারে মৃত  গ্রাম্য বাসী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে  শিবনাথ শ্রাদ্ধের
কাজ করছেন। Back ground  এ  শ্রাদ্ধের  মন্তর উচ্চারণ শুনা যাচ্ছে।

7) সূর্যোদ্বয়ের  আলোয় শোকগ্রস্ত পুত্র সোমনাথ  একমাত্র  সন্তানের  বিভৎস মৃত্যু
বড় নাতনী লক্ষীর অপহরণ, এবং  ছোটো নাতনী উমার ধর্ষণ  অবলোকন  করে উন্মাদের মতো নদীর ধারে আশ্বিনের ঝরের মাতনে প্রচন্ড  বৃষ্টির মধ্যে নদীর ধারে মাটিতে পড়ে
পাগলের মতো লুটোপুটি করছেন, চিৎকার করে গর্জে হাহাকার করছেন, কাঁদছেন।
ধর্ষনের  যন্ত্রনায় বিকৃত স্বর চিৎকার, Montag চিত্রকল্প বারবার  বিভিন্ন  দৃষ্টিকোণ থেকে
এডিটিং এর  সময়  কাট কাট করে  দৃশ্য  মিশ্রণ।

6) জ্যোৎস্নায়  আলোয় নব বধুঁ  সাজে পায়ে মল বাজিয়ে হাতে দুধ কাষার গ্লাস নিয়ে  সলজ্জ লজ্জিত মাথার অবগুণ্ঠনে ঢাকা প্রবেশ  করে ধীরে ধীরে।
সোমনাথ পালংক  বসে দুধের গ্লাস নিয়ে পান করে খ, মুখে কৌতুহলি হাসি, সোমনাথ  জয়াকে কাছে বসিয়ে অবগুণ্ঠন সড়িয়ে দেয়, পরস্পরের প্রতি প্রেম ভালোবাসায় পূর্ণ প্রেমময় দৃষ্টি নিয়ে  অপলক চোখে  তাকিয়ে থাকে, পরে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে।

7) নদীর ধারে বিকেল বেলায়গোধূলি লগ্নে লক্ষী শিবনাথের বড় নাতনী ছোট নাতনী উমা ওদের প্রিয় বান্ধবীদের সাথে গল্প গুজব হাসি ঠাট্টা  তামাশা করছে পরস্পরের  চুল আঁচড়ে চুলের খোঁপা বেঁধে দিচ্ছে ।

নদী ধারে, গাছের তলায় মাটির উপর
লুটিয়ে পড়ে রয়েছে ধর্ষিতা উমা
মাঝে মাঝে খিঁচুনি, জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
বান্ধবীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে, বদনা থেকে পানি দেয়।

5) দিনের বেলা

শিবনাথের হাত বেঁধে খুটির সাথে
মুখে কাপড় গোঁজা, উঠোনে ধর্ষিতা
নাতনীর নিথর দেহ, ধাড়ালো ছুরি
নিয়ে  এগিয়ে  আসছে মুখ ঢাকা
দুষ্কৃতীরা, হঠাৎই  ঝাঁপিয়ে পড়ে
সোমনাথ  সুন্দর বনের বাঘের মতো
বাবাকে বাঁচাতে, খুন হয়ে যায়  পুত্র ।

6)

দিনের বেলা নদীর ধারে

চিতা দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন শিখা
লক  লক করে  উঠছে, নাতির অমলের কাঁধ ধরে
শিবনাথ শোকার্ত  প্রদক্ষিণ করছেন, অমলের হাতে
আগুনে   প্যাকাটি, চিতার  আগুন ।

7)

নদীর ধারে
ঘাট থেকে  নেমে নদীর জলে নেমে এসেছে ,
যান ভাঁড়ে পুত্র সন্তান সোমনাথের অস্তি
নদীর  জলে ভাসিয়ে দেওয়া  পূর্বে, ঈশ্বরের
উদ্দেশ্যে মন্তর উচ্চারণ  of voice