Thursday, 12 January 2017

স্বামী বিবেকানন্দ এর জন্মদিনে

সুস্বাগতম সুপ্রভাতে শ্রী রামকৃষ্ণ শ্রীমা, ও স্বামীর চরণে প্রণাম জানাই,
ওঁনাদের আশীর্বাদে কল্যাণ মঙল হোক আপনাদের পৃথিবীর সকলের।
স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বের  শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ দার্শনিক  এর আগামী কাল
শুভ জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের মমনে চিন্তনে উচ্চারিত হোক  আশীষ বাণী।

Vivekananda
in the book My Master (1901)[৬]
বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণের জীবনীকে দুটি ভাগে ভাগ করেন। প্রথম ভাগে তিনি বলেন রামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক জ্ঞান আরোহণের বৃত্তান্ত এবং দ্বিতীয় ভাগে বলেন সেই জ্ঞান জনসাধারণের কল্যাণের জন্য বিতরণের বৃত্তান্ত।[৭]

বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ চরিত্রের নানা দিক আলোচনা করেন। তিনি বলেন, রামকৃষ্ণের কাছে এসে তিনি অনুভব করেছিলেন মানুষও আধ্যাত্মিকভাবে পূর্ণ হতে পারে। রামকৃষ্ণ জীবনে কাউকে অভিশাপ দেননি বা কারো সমালোচনা করেননি। এমনকি তিনি কারো দোষও দেখতেন না। তাঁর মনেও কোনো অমঙ্গল ভাব ছিল না। বিবেকানন্দ বলেন, রামকৃষ্ণ তাঁকে বলেছিলেন যে পবিত্রতা ও ত্যাগই ধর্মজীবনের একমাত্র গোপন কথা। বিবেকানন্দ শেষে বলেন, রামকৃষ্ণ আধ্যাত্মিকতার প্রতীক ছিলেন।[৮]

সম্ভাষণে প্রায় সাত হাজারের মত দর্শক-শ্রোতা দুই মিনিট দাঁড়িয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানান। নীরবতা ফিরে আসার পর তিনি তার বক্তৃতা শুরু করলেন। "যে ধর্ম বিশ্বকে সহিষ্ণুতা ও মহাজাগতিক গ্রহণযোগ্যতা শিখিয়েছে সে ধর্মের সর্বাধিক প্রাচীন সন্ন্যাসীদের বৈদিক ক্রমানুসারে" তিনি জাতিসমূহের কনিষ্ঠতমকে অভিবাদন জানালেন।[১০৩] এবং তিনি গীতা থেকে এ সম্পর্কে দুটি উদাহরণমূলক পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করেন-"যেহেতু বিভিন্ন স্রোতধারাগুলির উৎসসমূহ বিভিন্ন জায়গায় থাকে, সেগুলির সবই সমুদ্রের জলে গিয়ে মিশে যায়, সুতরাং, হে প্রভু, বিভিন্ন প্রবণতার মধ্য দিয়ে মানুষ বিভিন্ন যে সকল পথে চলে, সেগুলো বিভিন্ন রকম বাঁকা বা সোজা মনে হলেও, সেগুলি প্রভুর দিকে ধাবিত হয়!" এবং "যে আকারের মধ্য দিয়েই হোক না কেন, যেই আমার নিকট আসে, আমি তাঁর নিকট পৌঁছাই; সকল মানুষই বিভিন্ন পথে চেষ্টা করছে যা অবশেষে আমার নিকট পৌঁছায়।"[১০৩] সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা হওয়া সত্ত্বেও এটি সভার আলোচ্য বিষয় ছিল।

''....... সাধারনের ভেতর আর মেয়েদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার না হলে কিছু হবার জো নেই । সেজন্য আমার ইচ্ছা কতকগুলি ব্রহ্মচারী ও ব্রহ্মচারিণী তৈরি করব। ..

....ব্রহ্মচারিণীরা মেয়েদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার করবে। কিন্তু দেশী ধরণে ঐ কাজ করতে হবে। পুরুষদের জন্য যেমন কতকগুলি শিক্ষাকেন্দ্র করতে হবে, মেয়েদের শিক্ষা দিতেও সেইরুপ কতকগুলি কেন্দ্র করতে হবে। শিক্ষিতা ও সচ্চরিত্রা ব্রহ্মচারিণীরা ঐ সকল কেন্দ্রে মেয়েদের শিক্ষার ভার নেবে। পুরান, ইতিহাস, গৃহকার্য, শিল্প, ঘরকন্নার নিয়ম ও আদর্শ চরিত্র গঠনের সহায়ক নীতিগুলি বর্তমান- বিজ্ঞানের সহায়তায় শিক্ষা দিতে হবে। ছাত্রীদের ধর্মপরায়ন ও নীতিপরায়ণ করতে হবে। কালে যাতে তারা ভাল গিন্নি তৈরি হয়, তাই করতে হবে। এই সকল মেয়েদের সন্তানসন্ততিগণ পরে ঐ সকল বিষয়ে আরও উন্নতি লাভ করতে পারবে। যাদের মা শিক্ষিতা ও নীতিপরায়ণা হন, তাদের ঘরেই বড়লোক জন্মায়। ... মেয়েদের আগে তুলতে হবে, জনসাধারণকে জাগাতে হবে; তবে তো দেশের কল্যাণ।
ধর্ম, শিক্ষা, বিজ্ঞান, ঘরকন্না, রন্ধন, সেলাই, শরীরপালন এ- সব বিষয়ে স্থুল মর্মগুলোই মেয়েদের শেখানো উচিত। ......সব বিষয়ে চোখ ফুটিয়ে দিতে হবে। আদর্শ নারী চরিত্রগুলি ছাত্রীদের সামনে সর্বদা ধরে উচ্চ ত্যাগরূপ ব্রতে তাদের অনুরাগ জন্মে দিতে হবে। সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী, লীলাবতী, খনা, মীরা এদের জীবনচরিত্র মেয়েদের বুঝিয়ে দিয়ে তাদের নিজেদের জীবন ঐরূপে গঠন করতে হবে।

.........বৈদিক যুগে, উপনিষদের যুগে দেখতে পাব- মৈত্রেয়ী গার্গী প্রভৃতি প্রাতঃস্মরণীয়া মেয়েরা ব্রম্মবিচারে ঋষিস্থানীয়া হয়ে রয়েছেন। হাজার বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের সভায় গার্গী সগর্বে যাজ্ঞবল্ককে ব্রম্মবিচারে আহবান করেছিলেন।.........মেয়েদের পূজা করেই সব সব জাত বড় হয়েছে। যে দেশে, যে জাতে মেয়েদের পূজা নেই, সে দেশ সে জাত কখনও বড় হতে পারেনি, কস্নিন কালে পারবেও না। তোদের জাতের যে এত অধঃপতন ঘটেছে, তার প্রধান কারণ এইসব শক্তিমূর্তির অবমাননা করা। .........যেখানে স্ত্রীলোকের আদর নেই, স্ত্রীলোকেরা নিরানন্দে অবস্থান করে, সে সংসারে- সে দেশের কখন উন্নতির আশা নেই(মনু সংহিতা); এজন্য এদের আগে তুলতে হবে- এদের জন্য আদর্শ মঠ স্থাপন করতে হবে।"

শুধু আমি চাই যে আমাদের যুবকেরা প্রতি বছর জাপান এবং চীন ভ্রমণ করুক। বিশেষ করে জাপানীদের নিকট ভারত তারপরও এমন এক স্বপ্নরাজ্য যার সবকিছুই উচ্চস্তরের এবং ভাল। এবং তোমরা, তোমরা কি?...তোমাদের সারা জীবন বাজে বকিতেছো, অনর্থক প্রলাপকারীরা, তোমরা কি? এসো, এ সকল মানুষকে দেখ এবং যাও আর লজ্জায় তোমাদের মুখ ঢাক। জড়বুদ্ধিসম্পন্ন জাতি, তোমরা তোমাদের প্রাসাদ হারাবে যদি তোমরা বাইরে আসো! শত শত বছর ধরে তোমাদের মাথার উপর দানা বাঁধা কুসংস্কারের ক্রমবর্ধমান বোঝা নিয়ে বসে আছো, শত শত বছর ধরে এ খাবার সে খাবারের স্পর্শযোগ্যতা বা স্পর্শ-অযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করে তোমাদের সকল শক্তি ক্ষয় করছো, যুগ যুগ ধরে অবিরাম সামাজিক পীড়নের দ্বারা তোমাদের সকল মানবিকতা নিষ্পেষিত - তোমরা কি? আর তোমরা এখন কি করছো?...তোমাদের হাতে বই নিয়ে সমুদ্রতীরে ভ্রমণ করছো - ইউরোপিয়ান মস্তিষ্ক-কর্মের অজীর্ণ পথভ্রষ্ট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ পুনরাবৃত্তি করছো, আর ত্রিশ রুপীর কেরানীর চাকরির জন্য সমস্ত আত্মা অবনত, অথবা বড়জোর একজন উকিল হওয়া - নবীন ভারতের উচ্চাকাঙ্খার শিখর - আর প্রত্যেক ছাত্রের সাথে তার পায়ে পায়ে ঘুরে একদল ক্ষুদার্ত ছেলেমেয়ের দল রুটি চাচ্ছে! তোমাদের, বইগুলোর, গাউনের, বিশ্ববিদ্যালয় ডিপ্লোমাগুলোর আর সব কিছুর ডোবার জন্য সমুদ্রে যথেষ্ট জল কি নেই?[৯৭]

-স্বামী বিবেকানন্দ প্রকৃত সত্য   ভালভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি নিম্নলিখিতভাবে বেদান্তের শিক্ষাসমূহের সারসংক্ষেপ করেন,[১৬১]

প্রত্যেক আত্মাই সম্ভাব্যরুপে ঐশ্বরিক/দেবসুলভ।[১৬১]
লক্ষ্য হচ্ছে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের দ্বারা এ দেবত্বকে সুষ্পষ্টভাবে দেখানো।[১৬১]
কর্ম, বা পূজা, বা মন নিয়ন্ত্রণ, বা দর্শন - একটির দ্বারা, বা অধিকের দ্বারা, বা এ সকলগুলির দ্বারা এটি কর - এবং মুক্ত হ্‌ও।[১৬১]
এটি হচ্ছে ধর্মের সমগ্রতা। মতবাদ, বা গোঁড়া মতবাদ, বা ধর্মীয় আচার, বা গ্রন্থ, বা মন্দির, বা মূর্তি হচ্ছে গৌণ খুঁটিনাটি বিষয় ছাড়া কিছুই নয়।[১৬১]
যতক্ষণ পর্যন্ত আমার দেশের একটি কুকুরও ক্ষুধার্ত, আমার সমগ্র ধর্মকে একে খাওয়াতে হবে এবং এর সেবা করতে হবে, তা না করে অন্য যাই করা হোক না কেন তার সবই অধার্মিক।
জেগে ওঠো, সচেতন হও এবং লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত থেমো না।
শিক্ষা হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে থাকা উৎকর্ষের প্রকাশ।
ধর্ম হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে থাকা দেবত্বের প্রকাশ।
মানুষের সেবা করা হচ্ছে ঈশ্বরের সেবা করা।

No comments:

Post a Comment