Monday, 16 January 2017

আমার পিসাতো বোন চারু

আমার পিসাতো বোন চারু

শ্যামল সোম 

আজ এই দিনের কথাই আবার মনে পড়ল
আমার তখন বয়স বছর ষোল হবে পৌষ
পার্বণে পিঠে খেতে এসেছি গোপাল গঞ্জে
পিসিমার বিশাল ফল ফুলের বাগান এখান
আসা পিসিমার আর চারু আমার পিসাতো
হাতে গড়া , গাদা খানেক ভাপা পিঠে দুধপুলি
রসবড়া, ছানা বা নারকেল ও খোয়া খিরের
পিঠে পাটি সাপটা খাওয়া দেখে তাজ্জব চারু
পিসিমণির একমাত্র মেয়ে নয়নের মণি চারু
চোখে চমকে উঠে বললে, " দাদা মণি আর
কতখেতো পারো?"
আমরা পিঠোপিঠি ভাইবোন খুনসুটি ঠাট্টা
চলতোই, পিসিমণি ধমক দিলেন, " তুই ওর
খাওয়ার ব্যাপারে খোটা দিস নে, রেজাল্ট টা
দেখ, " অভিমানী চারু  দুম করে উঠে গেল।
খাওয়ার মজাটাই নষ্ট হলো, "আহ পিসিমণি
আমাদের  ভাইবোনের মধ্যে তুমি আবার  কেন--?

আমি জানি আমার বোনটি ভীষণ অভিমানী, কাছে
যেতেও সাহস হচ্ছে না, ওর রাগ ভীষন, বাগানে
ঘুরছি একা একাই  হঠাৎই  গন্ধে ঘোর ভাঙলো
এ গন্ধ খুব চেনা চেনা ঐতো হাসনা হেনা ফুটে রয়েছে।

না না ও ফুল তুলতে গিয়ে শেষে ঐ লতা সাপকে লতা
বলতো রাতে, তাই গন্ধরাজ ফুল কিছু তুলে ঘরে যেই
ফিরেছি, পিসিমণির ধমক, " রাত বিরাতে বাগানে
কেউ যায়? "
চারু ফুল খুব ভালোবাসে, হাঁ ! আমার বোন চারু ঐ
ফুলের মত পবিত্র- - !
আমি গন্ধরাজ ফুলের গন্ধ লুকোতে ব্যাস্ত, এবার
চুপি চুপি  চারুর ঘরে উঁকি দিলাম দেখি চারু তখন
উপর হয়ে কাঁদছে, ভাবছি নারীর চোখের জল কী
সমুদ্রের ঢেউ অফুরন্ত বারবার ডুগড়ে ডুকরে কান্না
আসে বন্যায় ভেসে যায়।
পিসিমশাই অনেক ক্ষণ ধরে কত করে ডাকছেন, রাতের
খাবার খাওয়ার জন্য, শুধুই বলছে," খিদে নেই" " খিদে নেই"।

অবশেষে পিসিমণি বললে, " বাবা শ্যামল তুই  যা ওকে ডেকে
নিয়ে আয়, দুপুর থেকেই কত পিঠে তৈরী করার জন্য কিছুই
চারুর খায় নি - যা বাবা !"
খাওয়া হয় নি,  ধাক্কা খেলাম- -
ঢোক গিলে বলি, " আআআমি ?

চারুর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছি হাতে ধরা গন্ধরাজ,
হঠাৎই চারুর ডাক শুনে পিলে চমকে উঠলো," দাদামণি"
" দাদা মণি--?
বাহিরে থেকেই  বলি, " এঁ অঁ " ধমকে ওঠে, " দাদামণি, ঘরে এসো !"

উঠে বসে চারু রক্ত জবাব চোখ ছলছল করছে," এত দেরী করলে যে ?

আজ্ঞে হাঁ ! চারুর  অভিমান ভাঙানো আমার কাজ, আমতা আমতা করে বলি
ঐ মানে
মানে?
ঐ পেছনে তোমার হাতে লুকোনো কি?
গন্ধরাজ ফুল
চারু  হেসে প্রশ্ন করে, " কি আমার জন্য ?
সায় দি -- ঘাড় নাড়ি !

দাদা মণি তুমি কাছে এসো

আমার ঘাটে পাশে বসো

চারু স্বর্ণ দুহাত পেতে দেয়
চারু ফুল হাতে নিয়ে চোখ বুজে গন্ধ শোঁকে।

আমার হাতে মৃদু চাপ দিয়ে বলে --
" তুমি খুব ভালো দাদামণি, "
দুজনেরই চোখ ছলছল

" নিচু গলায় গান শোনাও"
মাত্র পনের বছরের চারু, ওকে  কত বড়  মনে হয়।

এক থালা খাবার নিয়ে ঢোকে পিসিমণি --"খেয়ে নিস " বলেই চলে গেলেন।
" আমাকে খাওয়াও আর গান শোনাও,"
" কেন এত  ভালো রেজাল্ট কর আমার থেকেও? "

চারু মুখে তুলে দিচ্ছি খাবার -- গাইছি গান

" পুরানো সেই দিনের কথা শুনবি যদি আয়----!"

No comments:

Post a Comment